রাষ্ট্রের সংজ্ঞা ও রাষ্ট্র গঠনের উপাদানসমূহ। অথবা, রাষ্ট্র কাকে বলে? রাষ্ট্রের অপরিহার্য উপাদানসমূহ বর্ণনা কর।
ভূমিকা :
সভ্যতার বিকাশে মানুষ যতো রকম সংঘগঠন করেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংঘ হলো রাষ্ট্র। রাষ্ট্র সার্বভৌমত্ব- একটি প্রাচীন প্রতিষ্ঠান। প্রত্যেক মানুষই রাষ্ট্রের সদস্য। রাষ্ট্র ছাড়া কোনো মানুষ সুশৃংখলভাবে বসবাস করতে পারে না। সমাজজীবনের একপর্যায়ে মানুষ তাঁর নিরাপত্তার প্রয়োজনে রাষ্ট্র গঠনের চিন্তাভাবনা করে। মানুষ রাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করে, লালিত-পালিত হয় ও রাষ্ট্রে মারা যায়। সুতরাং রাষ্ট্র গঠনে অপরিহার্য উপাদানের পাশাপাশি অন্যান্য উপাদানও গুরুত্বপূর্ণ।
রাষ্ট্রের সংজ্ঞা :
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কেন্দ্রবিন্দু হলো রাষ্ট্র। সভ্যতার বিকাশে মানুষ যতো রকম সংগঠন করেছে তার মধ্যে সর্বোচ্চ এবং শক্তিশালী সংঘ হচ্ছে এ রাষ্ট্র। প্রাচীনকালে গ্রীক দার্শনিকগণ Polis শব্দটিকে রাষ্ট্র অর্থে ব্যবহার করতেন। রোমান দার্শনিকদান রাষ্ট্র বলতে Civitas শব্দ ব্যবহার করতেন। ইতালির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ম্যাকিয়াভেলি সর্বপ্রথম রাষ্ট্র বোঝাতে State শব্দটি ব্যবহার করেন।
যার নিজ ভূখণ্ড, জনসমষ্টি, নির্দিষ্ট ও সু-সংগঠিত সরকার সার্বভৌম ক্ষমতা আছে এবং যার অধিবাসীরা স্বাধীনভাবে বসবাস করে তাকেই রাষ্ট্র বলে।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা:
রাষ্ট্রের সংজ্ঞা বিভিন্ন দার্শনিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে রাষ্ট্রকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো :
এরিস্টটল (Aristotle) বলেন, “রাষ্ট্র হলো কতিপয় পরিবার ও গ্রামের সমষ্টি যার উদ্দেশ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ জীবন। "
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ব্লুনটাসলী (Bluntschli)-এর মতে, “কোনো নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত জাতীয় ব্যক্তিই রাষ্ট্র।"
অধ্যাপক ওয়াজবি (Pro. Oajobi)-এর মতে, “রাষ্ট্র হলো কোনো ভূখণ্ডে বসবাসকারী এমন জনসমষ্টি যার সুসংগঠিত সরকার রয়েছে এবং যা অন্যান্য রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণমুক্ত।"
সমাজবিজ্ঞানী অগবার্ন ও নিমকফ (Ogbern & Nimcaff)-এর মতে, “রাষ্ট্র হলো একটি সংগঠন যা নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে সার্বভৌম
অধ্যাপক আর. এম. ম্যাকাইভার (R.M. MaCIver)-এর মতে, “রাষ্ট্র হচ্ছে এমন একটি সংঘ যা সরকার ঘোষিত আইন অনুযায়ী কাজ করে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিন্ডেন্ট উড্রো উইলসন (Woodrow Wilson)-এর মতে, “রাষ্ট্র হলো কোনো নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সংগঠিত এক জনসমষ্টি।"
ব্রিউসার (Briusar)-এর ভাষায়, “রাষ্ট্র এমন একটি সংগঠিত জনসমষ্টি যা কোনো সুনির্দিষ্ট ভূখণ্ডের অধিবাসী এবং যার কোনো স্বাধীন সরকার রয়েছে।"
অধ্যাপক হগ (Pro. Hoge)-এর মতে, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত এবং বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ থেকে সর্বপ্রকারে যুক্ত এমন জনসমাজই রাষ্ট্র।”
রাষ্ট্রের সংজ্ঞা, রাষ্ট্রের সংজ্ঞা
রাষ্ট্রের গঠনের উপাদানসমূহ:
রাষ্ট্র হলো নাগরিক জীবনের অন্যতম সংস্থা। রাষ্ট্রের উপাদানসমূহকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
(ক) মুখ্য উপাদান।
(খ) গৌণ উপাদান।
নিম্নে রাষ্ট্রের উপাদানসমূহের বর্ণনা দেওয়া হলো :
(ক) মুখ্য উপাদানসমূহঃ
রাষ্ট্র সম্পর্কিত রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের সংজ্ঞাসমূহ বিশ্লেষণ করলে রাষ্ট্রের ৪টি উপাদান পাওয়া যায়। এগুলো রাষ্ট্রের মুখ্য উপাদান। নিম্নে রাষ্ট্রের মুখ্য উপাদানগুলো বর্ণনা করা হলো :
১. জনসমষ্টি :
রাষ্ট্র গঠনের প্রধান উপাদান হলো জনসমষ্টি। জনসমষ্টি ছাড়া রাষ্ট্র গঠনের কথা চিন্তা করা যায় না। রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ও জনসাধারণের ইচ্ছা বাস্তবায়নের জন্য স্থায়ী জনসমষ্টি অপরিহার্য। জনমানবহীন মরুভূমি কখনো রাষ্ট্র হতে পারে না। তবে রাষ্ট্রের জনসংখ্যা কত হবে, তার নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। রাষ্ট্রের স্থায়ী জনগণই রাষ্ট্র গঠনের উপাদান। ভাসমান জনগণ রাষ্ট্রের উপাদান হতে পারে না। জনসমষ্টি রাষ্ট্রের প্রাণস্বরূপ।
২. নির্দিষ্ট ভূখণ্ড :
রাষ্ট্র গঠনের অপরিহার্য উপাদানের মধ্যে অন্যতম হলো নির্দিষ্ট ভূখণ্ড। কোনো রাষ্ট্রের অবশ্যই একটি সুনির্দিষ্ট ভূখণ্ড থাকবে। দেশের জনগণ এ ভূখণ্ডেই বসবাস করবে। এ ভূখণ্ড অন্যান্য রাষ্ট্রের জনগণ কর্তৃক অধিকৃত ভূখণ্ড থেকে পৃথক হবে। জনসমষ্টি হলো রাষ্ট্রের প্রাণ আর ভূখণ্ড হলো দেহ। শূন্যস্থানে কোনো রাষ্ট্র হতে পারে না।
ভূখণ্ডের আয়তন কতো হবে তার কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। রাষ্ট্রের ভূখণ্ডের আয়তন কমও হতে পারে আবার বেশিও হতে পারে।
৩. সরকার :
রাষ্ট্র গঠনের তৃতীয় উপাদান হলো সরকার। সরকারের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ইচ্ছা, আদর্শ, উদ্দেশ্য প্রকাশিত ও বাস্তবায়িত হয়। সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করে। সরকার ছাড়া রাষ্ট্র চলতে পারে না। সরকারের প্রতি জনগণ তাদের আনুগত্য প্রকাশ করে। জনসমষ্টি ও ভূখণ্ড থাকলেই রাষ্ট্র গঠিত হয় না। সরকার হচ্ছে রাষ্ট্র গঠনের অপরিহার্য অঙ্গ।
সুসংগঠিত সরকারের অভাবে রাষ্ট্রে বিশৃংখলা ও অরাজকতা বিরাজ করে। সরকারের মাধ্যমেই রাষ্ট্রের সকল কার্য সম্পন্ন হয়। তাই সরকার রাষ্ট্র গঠনের অপরিহার্য উপাদান।
৪. সার্বভৌমত্ব:
রাষ্ট্র গঠনের সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ উপাদান হলো সার্বভৌমত্ব। এটি রাষ্ট্রের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সার্বভৌমত্ব ব্যতীত কোনো নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বসবাসকারী জনসমষ্টিকে নিয়ে রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না। সার্বভৌম ক্ষমতার সংস্পর্শে একটি জনসংগঠন রাষ্ট্রে পরিণত হয়। সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রের চরম ক্ষমতা, যা অনমনীয়, অবিভাজ্য, একক ও অদ্বিতীয়।
ক্ষমতার বলে রাষ্ট্র সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বে অবস্থান করে এবং অধীনস্থ সকলকে আদেশ ও নির্দেশ প্রদান করে। সার্বভৌমত্বের বলে রাষ্ট্র দেশের ভেতর ও বাইরে সকল শক্তিকে প্রতিহত করতে পারে।
(খ) গৌণ উপাদানসমূহঃ
রাষ্ট্রের মুখ্য উপাদানের সাথে সাথে গৌণ উপাদান একান্ত প্রয়োজন। নিম্নে রাষ্ট্রের গৌণ উপাদানসমূহ উল্লেখ করা হলো :
১. রাষ্ট্রের স্বীকৃতি :
স্বীকৃতি রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। একটি রাষ্ট্রকে জাতিসংঘ ও অন্যান্য রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃতি পেতে হয়। একটি রাষ্ট্র যদি অন্য রাষ্ট্রের স্বীকৃতি না পায়, তাহলে তা রাষ্ট্র হতে পারে না। যেমন- ফিলিস্তিন।
২. স্থায়িত্ব ও ধারাবাহিকতা :
স্থায়িত্ব রাষ্ট্রের অন্যতম উপাদান। যে রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব নেই, তা রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পায় না। রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে অক্ষয়, অজয় ও অমর। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়বস্তু পরিবর্তন হতে পারে কিন্তু রাষ্ট্রের পরিবর্তন হয় না।
৩. জাতীয়তাবাদ :
জাতীয়তাবাদ রাষ্ট্রের অন্যতম গৌণ উপাদান। যদি রাষ্ট্রের জনগণ সুদৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ থাকে তাহলে তা রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে । রাষ্ট্রে জাতীয়তাবাদ অন্যতম উপাদান। যেমন- বাঙালি জাতি, মার্কিন জাতি, ইরান জাতি ইত্যাদি ।
৪. সাম্য :
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রত্যেক জাতি সমান। তারা সমান অধিকার প্রভাব ও প্রতিপত্তি লাভ করে। জাতিসংঘে প্রত্যেক রাষ্ট্রের ভোট আছে। এ সাম্য রাষ্ট্রের একটি উপাদান।
৫. পূর্ণ স্বাধীনতা :
পূর্ণ স্বাধীনতা রাষ্ট্রের অন্যতম উপাদান। রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের সাথে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে ও স্বেচ্ছায় চুক্তি করতে পারে। রাষ্ট্র পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করবে। উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, রাষ্ট্র একটি প্রাচীন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। মানুষ রাষ্ট্রে বসবাস করে। রাষ্ট্র গঠনের চারটি অপরিহার্য উপাদান প্রয়োজন। এই উপাদানের একটি না থাকলে তা রাষ্ট্র হতে পারে না। কোনো নির্দিষ্ট ভূখণ্ড রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে হলে অপরিহার্য উপাদানের সাথে গৌণ উপাদান থাকা বাঞ্ছনীয় ।
রাষ্ট্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ আলোচনা করঃ
ভূমিকা :
প্রতিটি বস্তু ও ব্যক্তির মতো রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য বিদ্যমান। তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নির্ধারিত করতে পারেনি। বিভিন্ন বিজ্ঞানী রাষ্ট্রের উদ্দেশ্যকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তবে যাহোক না কেন রাষ্ট্রের প্রধান উদ্দেশ্য জনগণের সার্বিক কল্যাণ সাধন করা।
কেননা জনগণের প্রয়োজনেই রাষ্ট্রের উদ্ভব। সুতরাং বলা যায়, জনগণের নিরাপত্তা রক্ষা করা, শান্তি-শৃংখলা বজায় রাখা এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা হলো রাষ্ট্রের প্রধান উদ্দেশ্য। রাষ্ট্র মানুষের প্রয়োজনেই উৎপত্তি লাভ করেছে। তাই মানুষের প্রয়োজন পূরণে রাষ্ট্র বহুবিধ কার্য সম্পাদন করে থাকে।
রাষ্ট্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ:
রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি জটিল সমস্যা। রাষ্ট্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে যুগে যুগে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ বিভিন্ন মতবাদ ব্যক্ত করেছেন। নিম্নে রাষ্ট্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের ধারণা তুলে ধরা হলো :
(ক) প্রাচীন গ্রিক চিন্তাবিদদের ধারণা:
প্রাচীন গ্রিক চিন্তাবিদেরা রাষ্ট্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ প্রকাশ করেন। গ্রিক দার্শনিক প্লেটো ও এরিস্টটল এর মতে, রাষ্ট্র হলো শ্রেষ্ঠতম মানবীয় সংগঠন। রাষ্ট্র মানবজীবনের চরম পরিণতি। রাষ্ট্র ছাড়া মানব জীবন অসম্পূর্ণ মানব সমাজের সামাজিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক জীবনের পরিপূর্ণতা আনে রাষ্ট্র।
রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য কেবল জনগণের জীবন রক্ষা নয় বরং সুন্দর ও মহত্তর জীবন গঠনের নিশ্চয়তা বিধান করাই এর প্রকৃত উদ্দেশ্য। এরিস্টটলের মতে, সুন্দর ও সুখীময় জীবন ধারণের নিশ্চয়তা প্রদান করা রাষ্ট্রের প্রধান লক্ষ্য।
(খ) রোমান দার্শনিকদের ধারণা:
রোমান দার্শনিকদের মতে, মানব সমাজের কল্যাণের জন্য রাষ্ট্র ছাড়া অন্য কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। তাঁদের মতে, রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য মানবসমাজের বিভিন্নমুখী জীবনযাত্রা নির্বাহ করা। সংগঠনের
(গ) মধ্যযুগীয় চিন্তাবিদদের ধারণা :
মধ্যযুগের চিন্তাবিদদের মতে, রাষ্ট্র মানবীয় সংগঠন নয় বরং দৈবপ্রাপ্ত সংগঠন। মানব * সমাজের পার্থিব ও পারলৌকিক কল্যাণ সাধনই রাষ্ট্রের প্রধান লক্ষ্য। এছাড়া রাষ্ট্রের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো মানব সমাজের পাপমোচন করে পারলৌকিক কল্যাণ সুনিশ্চিত করা।
(ঘ) আদর্শবাদী দার্শনিকদের ধারণা :
আদর্শবাদী দার্শনিকগণ রাষ্ট্রকে একটি মহিমান্বিত প্রতিষ্ঠান বলে কল্পনা করেন। রাষ্ট্রকে রাষ্ট্রীয় চরম লক্ষ্য হিসেবে তারা বিবেচনা করেন।
(ঙ) নৈরাজ্যবাদী দার্শনিকদের ধারণা : নৈরাজ্যবাদী দার্শনিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ রাষ্ট্রকে ক্ষতিকর ও অপ্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
(চ) আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের ধারণা :
আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, রাষ্ট্রের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো জনগণের সামাজিক জীবনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা। তারা রাষ্ট্রকে ব্যক্তির কল্যাণ সাধনের মাধ্যম বলে বর্ণনা করেছেন।
রাষ্ট্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের ধারণা নিম্নে তুলে ধরা হলো :
দার্শনিক হবস :
ইংরেজ দার্শনিক হবস এর মতে, প্রকৃতিতে মানুষ স্বার্থপর, চরম স্বার্থপর। কিন্তু বুদ্ধিমান জীব বলে, সে বৃহত্তর অকল্যাণকে পরিহার করার জন্য রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলার মধ্যে আবদ্ধ থাকে। অতএব রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য শান্তিরক্ষা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।
দার্শনিক জন লক :
দার্শনিক জন লক রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে মধ্যপন্থা অবলম্বন করেছেন। তাঁর মতে, রাষ্ট্রের প্রধান উদ্দেশ্য হলো মানব সমাজের মঙ্গল সাধন করা। কিন্তু চরমতম লক্ষ্য হলো সংঘবদ্ধ জীবনে সম্পত্তির সংরক্ষণ।
অ্যাডাম স্মিথ :
অ্যাডাম স্মিথ রাষ্ট্রের উদ্দেশ্যসমূহ তিন ভাগে বিভক্ত করেছেন। যথাঃ
(ক) সমাজের অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃংখলা প্রতিষ্ঠা ও বহিঃশক্তির আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করা।
(খ) সমাজস্থ প্রতিটি ব্যক্তিকে অন্যায় ও অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা করা।
(গ) ব্যক্তিগত উদ্যোগ সম্পাদন করা সম্ভব নয় এমন কার্য সম্পাদন করা ও জনগণের জন্য অত্যাবশ্যক প্রতিষ্ঠানসমূহ গঠন এবং সংরক্ষণ করা।
দার্শনিক বেছাম :
দার্শনিক বেছাম -এর মতে, সর্বাধিক সংখ্যক মানুষের সর্বাধিক কল্যাণ সাধনই রাষ্ট্রের প্রধান লক্ষ্য। ব্লুন্টসলি : জার্মান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রুন্টসলি রাষ্ট্রের ২টি উদ্দেশ্যের কথা বলেন,
(ক) রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ উদ্দেশ্য হলো জাতীয় জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন এবং জাতীয় শক্তির সম্প্রসারণ ও সংরক্ষণ করা।
(খ) তাঁর মতে, রাষ্ট্রের পরোক্ষ উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তিস্বাধীনতা ও নিরাপত্তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা।
উইলোবির ধারণা :
উইলোবির মতে, রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য তিনটি। যথা
(ক) প্রাথমিক লক্ষ্য : রাষ্ট্রে শান্তি-শৃংখলা সংরক্ষণ করা ও বৈদেশিক আক্রমণ প্রতিহত করা।
(খ) মাধ্যমিক লক্ষ্য : ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশ ও ব্যক্তিস্বাধীনতা সংরক্ষণ করা ।
(গ) চরম লক্ষ্য : নাগরিকদের আর্থিক, নৈতিক ও মানবিক বিকাশ সাধন করা।
অধ্যাপক গার্নার :
অধ্যাপক গার্নার এর মতে, রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য তিনটি। যথা
(ক) দেশ ব্যক্তি কল্যাণে শান্তি-শৃংখলা বজায় রাখবে। আইনের অনুশাসনের মাধ্যমে রাষ্ট্রই দেশে সুবিচার প্রতিষ্ঠা করবে এবং ব্যক্তির নিরাপত্তা দান করবে।
(খ) ব্যক্তিসমষ্টির কল্যাণকার্যে রাষ্ট্র বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
(গ) জাতীয়তাবাদের সাথে আন্তর্জাতিকতার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্র ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
উপসংহার :
পরিশেষে বলা যায় যে, মানুষের প্রয়োজন পূরণ করার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র গঠিত হয়েছে। রাষ্ট্র দেশে ও দেশের বাইরের শান্তি-শৃংখলা রক্ষা করে। এরিস্টটল বলেছেন, মানুষ জন্মগতভাবে সামাজিক ও রাজনৈতিক জীব। রাষ্ট্রের মধ্যে আমরা জন্মগ্রহণ করি, এখানে লালিত-পালিত হই এবং মৃত্যুবরণ করি। তাই বলা যায়, রাষ্ট্র একটি সার্বভৌমত্ব ক্ষমতার অধিকারী প্রতিষ্ঠান যা মানব কল্যাণে নিবেদিত।
রাষ্ট্রের সংজ্ঞা, রাষ্ট্রের সংজ্ঞা রাষ্ট্রের সংজ্ঞা রাষ্ট্রের সংজ্ঞা
নিত্য নতুন সকল আপডেটের জন্য জয়েন করুন
If any objections to our content, please email us directly: helptrick24bd@gmail.com