সুলতানি বাংলার রাজস্ব ব্যবস্থা

Follow Our Official Facebook Page For New Updates


Join our Telegram Channel!

প্রশ্ন : সুলতানি বাংলার রাজস্ব ব্যবস্থার বিবরণ দাও। [ফা. স্নাতক প. ২০১৬] (Revenue System of Sultanate Bengal)

রাজস্ব ব্যবস্থা





উপস্থাপনা : 

সুলতানি আমলে মুসলমান ধর্মের হানাফী-রীতি অনুসারে রাজস্ব নীতি পরিচালিত হত। রাজস্বের প্রধান উৎস ছিল 

(১) যাকাত বা ধর্ম কর এটি শুধু মুসলমানদের কাছ থেকেই আ দায় করা হত; 

(২) খারাজ বা ভূমি কর এটি হিন্দুদর কাছ থেকেই আদায় করা হত; 

(৩) খামস্ যুদ্ধের সময় লুণ্ঠিত দ্রব্যের এক পঞ্চমাংশ রাজকোষে জমা পড়ত, 

(৪) উরস্ বা ভূমি কর এটি শুধু মুসলমানদের কাছ থেকেই আদায় করা হত এবং 

(৫) জিজিয়া শুধুমাত্র অমুসলমানদের কাছ থেকে আদায় করা হত। 

এই সকল রাজস্ব ও কর ছাড়া গোচারণ কর, জল কর, আবওয়াব বা অতিরিক্ত কর প্রভৃতিও আদায় করা হত। 

সুলতানি বাংলার রাজস্ব ব্যবস্থা : 

নিম্নে সুলতানী আমলে বাংলার রাজস্ব ব্যবস্থা আলোচনা করা হলো

ভূমি রাজস্ব : 

সুলতানি আমলে রাজস্ব-নীতি কোনো নির্দিষ্ট ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল না, যদিও ভূমি রাজস্বই দিল্লীর সুলতানি সাম্রাজ্যের প্রধান আয় ছিল । 

ভূমি-রাজস্ব সুনির্দিষ্ট করার জন্য সমগ্র সাম্রাজ্যের আবাদী জমি চার ভাগে ভাগ করা হয়, যথা- (১) খালিসা অঞ্চল, (২) ইক্তা বা প্রাদেশিক অঞ্চল, (৩) হিন্দু নৃপতিগণ কর্তৃক শাসিত অঞ্চল এবং (৪) মুসলমান পণ্ডিত বা সাধু-সন্তদের প্রদত্ত জমি। 

১. খালিসা অঞ্চল : 

খালিসা অঞ্চল ছিল কেন্দ্রীয় শাসনের এখতিয়ারভুক্ত। কিন্তু খালিসা অঞ্চলে কৃষক বা প্রজাদের সঙ্গে সরকারের কোন সম্পর্ক ছিল না। 

‘চৌধুরী, ‘মুকাদ্দম' পদাধিকারী কর্মচারীদের মাধ্যমেই কেন্দ্রীয় সরকার খালিসা অঞ্চল থেকে রাজস্ব আদায় করতেন। এছাড়া খালিসা অঞ্চলে 'আমিল' নামে আরও এক শ্রেণীর কর্মচারী থাকতেন। 

এই কর্মচারীরা কৃষক বা চাষীদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করতেন। 

ভূমি-রাজস্ব নির্ধারণ করার বা করের পরিমাণ স্থির করার কোন সুনির্দিষ্ট রীতি চালু ছিল না। জমির পরিমাণ বা জমির উৎপাদনী শক্তি প্রভৃতি বিবেচনা না করে যথেচ্ছ ভাবে খাজনা ধার্য করা হত।

২. ইক্তা অঞ্চল : 

ইক্তা অঞ্চলে খাজনার হার নির্ধারণ ও তার আদায়ের দায়িত্ব ছিল ইক্তাদার বা মুক্তির ওপর (মুক্তি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের শাসকের নাম)। মুক্তি তাঁর প্রাপ্য অংশ বাদ দিয়ে খাজনার বাকি অংশ কেন্দ্রীয় সরকারকে দিতেন। 

মুক্তি নিজের স্বার্থে সর্বদাই রাজস্বের ঘাটতি দেখাতে যত্নবান থাকতেন। এই কারণে তাঁর কাজকর্মের ওপর দৃষ্টি রাখবার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার 'খোওয়াজা' নামে এক শ্রেণির কর্মচারীকে প্রতিটি ইক্তায় নিযুক্ত করতেন; 

মুক্তি ও খোওয়াজা যাতে মিলিতভাবে সরকারী খাজনা ফাঁকি দিতে না পারেন, সেজন্য একদল গুপ্তচর নিযুক্ত থাকত। কেন্দ্রীয় সরকার সরাসরি গুপ্তচর নিয়োগ করতেন।

৩. হিন্দু নৃপতিগণ কর্তৃক শাসিত অঞ্চল : 

যে সকল হিন্দু নৃপতিরা সুলতানের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করতেন, তাঁরা নিজ নিজ রাজ্যে কার্যত স্বাধীনভাবেই রাজত্ব করতেন। কিন্তু এর বিনিময়ে তাঁরা সুলতানকে বাৎসরিক কর বা উপঢৌকন দানে বাধ্য থাকতেন। 

সেইভাবে জমিদাররা সরকারকে নির্দিষ্ট পরিমাণে রাজস্ব মেটাতেন। জমিদাররা নিজ নিজ এলাকায় কৃষকদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করতেন। 

যেসব জমি মুসলমান পণ্ডিত বা সাধু-সন্তদের ধর্মীয় কারণে বা ‘ইনাম্‌’ (পুরষ্কার) হিসেবে দেওয়া হত, সেইসব জমি তাঁরা বিনা খাজনায় ভোগ করতেন ।

সুলতান আলাউদ্দিন খলজীর রাজস্ব ব্যবস্থা : 

দিল্লীর সুলতানদের মধ্যে সর্বপ্রথম আলাউদ্দিন খলজী রাজস্ব সংক্রান্ত কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। আলাউদ্দিনের রাজস্ব নীতির মূল লক্ষ্য ছিল

 (১) রাজস্বের পরিমাণ যতদূর সম্ভব বৃদ্ধি করা এবং 

(২) জনগণকে সর্বদাই আর্থিক অনটনে জর্জরিত করে রেখে তাদের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনরূপ বিদ্রোহ বা ষড়যন্ত্র করার সুযোগ না দেওয়া। এই উদ্দেশ্যে তিনি কতকগুলি বিধি বা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, যথা

প্রথমত, যে সকল ধর্মীয় নেতা, সাধু-সন্ত ও অভিজাতরা বিনা খাজনায় জমি ভোগ করতেন, আলাউদ্দিন সেই সকল জমি বাজেয়াপ্ত করে নেন এবং সেই জমিগুলি সরকারের হাতে ন্যস্ত করেন। 

জিয়াউদ্দিন বারণীর মতে এই ব্যবস্থার ফলে মুসলমানদের অনেকেই দরিদ্রের সীমায় নেমে আসে।

দ্বিতীয়ত, এ যাবৎ যে সকল হিন্দু মুকাদ্দম, চৌধুরী ও খুৎ-রা বিশেষ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছিলেন, আলাউদ্দিন সেই সকল সুযোগ-সুবিধা বাতিল করেন এবং তাদের ওপর ভূমি কর ও আবাস কর ধার্য করেন। 

তৃতীয়ত, আলাউদ্দিন কৃষকদের ওপর ভূমি রাজস্ব ছাড়াও অন্যান্য কর ধার্য করেন, যথা- চারণ কর, আবাস কর ইত্যাদি

চতুর্থত, তিনি ফসলের অর্ধাংশ ভূমি কর হিসেবে ধার্য করেন। 

পঞ্চমত, তিনি ফসলের উৎপাদনের পরিমাণ সম্বন্ধে নিশ্চিন্ত হওয়ার জন্য সমগ্র সাম্রাজ্যে জমি জরিপ করে খাজনা ধার্য করার রীতি প্রবর্তন করেন। 

ষষ্ঠত, সকল প্রকার রাজস্ব ও কর কঠোরভাবে আদায় করার জন্য আলাউদ্দিন এক দক্ষ শাসনযন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করেন। প্রকৃতির বা অন্য কোন কারণে ফসলের উৎপাদন কম হলে বা ফসল হানি হলে, রাজস্ব ও কর মওকুফ করা তিনি নিষিদ্ধ করেন। 

আলাউদ্দিনের রাজস্ব নীতির মূল লক্ষ্যই ছিল সাম্রাজ্যের সকল শ্রেণির কাছ থেকে কর আদায় করে রাজকোষ পরিপূর্ণ করা 

এবং প্রকৃতপক্ষে রাজস্বের বোঝা কৃষক, বণিক, জমিদার, ব্যবসায়ী সকলকেই বহন করতে বাধ্য করা হয়।

আলাউদ্দিনের রাজস্ব নীতি ছিল অত্যন্ত কঠোর এবং তাঁর মত শক্তিশালী সম্রাটের পক্ষেই তা কার্যকর করা সম্ভব ছিল। কিন্তু তাঁর দুর্বল উত্তরাধিকারীদের পক্ষে রাজস্ব নীতির এই কঠোরতা বজায় রাখা সম্ভব ছিল না। 

তাঁর কঠোর আইনগুলির অধিকাংশই ধীরে ধীরে পরিত্যক্ত হয় যদিও তাঁর প্রবর্তিত রাজস্ব ক্রমের বিশেষ কোন পরিবর্তন করা হয়নি।

সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের রাজস্ব ব্যবস্থা : 

সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক রাজস্ব ব্যবস্থা কয়েকটি ধাপে প্রবর্তন করেন। 

প্রথমত, সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক আলাউদ্দিনের রাজস্ব নীতির কঠোরতা কিছু পরিমাণে শিথিল করেন, যদিও উৎপাদিত ফসলের অধিকাংশ ভূমি রাজস্ব হিসেবে বহাল রাখেন। 

প্রাকৃতিক বা অন্য কারণে ফসলের ক্ষতি হলে, আংশিকভাবে রাজস্ব মওকুফ করার নীতি তিনি গ্রহণ করেন। 

দ্বিতীয়ত, গিয়াসউদ্দিন তুঘলক খুৎ মুকাদ্দম ও চৌধুরীকে ভূমি রাজস্ব ও অন্যান্য কর থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন। 

তৃতীয়, তিনি ইক্তা অঞ্চলে প্রচলিত রাজস্বের পরিমাণের এক-দশমাংশের অধিক রাজস্ববৃদ্ধি নিষিদ্ধ করেন। গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের রাজস্বনীতির ত্রুটি ছিল, 

(১) তিনি জমি জরিপ করে রাজস্ব নির্ধারণ করার রীতি পরিত্যাগ করে আন্দাজমত তা ধার্য করার রীতি প্রবর্তন করেন এবং 

(২) সামরিক ও বেসামরিক কর্মচারীদের নগদে বেতন দেওয়ার পরিবর্তে জমি জায়গির দেওয়ার প্রথা পুনরায় প্রবর্তন করেন। এর ফলে রাষ্ট্রের বহু খাস জমি জায়গিরদারদের হাতে চলে যায় ।

সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলকের রাজস্ব ব্যবস্থা : 

দিল্লীর পরবর্তী সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক রাজস্ব নীতি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে প্রয়াসী হন। তাঁর নির্দেশে প্রদেশগুলির বাৎসরিক আয় ও ব্যয়ের হিসাব রাখবার ব্যবস্থা করা হয়। 

এর উদ্দেশ্য ছিল সাম্রাজ্যের সর্বত্র যথাসম্ভব একই ধরনের রাজস্বনীতি বজায় রাখা এবং যাতে কোন গ্রাম বা অঞ্চল রাজস্ব প্রদান থেকে অব্যাহতি না পায় সেইদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা। সুলতানের এই নীতি ছিল সময়োপযোগী ও রাষ্ট্রের পক্ষে উপকারী। 

কিন্তু এই নীতি ছিল সময়োপযোগী ও রাষ্ট্রের পক্ষে উপকারী। কিন্তু এই নীতি শেষ পর্যন্ত কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। সু

লতানের পরবর্তী পরিকল্পনা ছিল রাজস্ব-ক্রম বৃদ্ধি করা এবং এই উদ্দেশ্যে তিনি দোয়াব অঞ্চলে রাজস্বের পরিমাণ পঞ্চাশ শতাংশ বৃদ্ধি করেন।

 কিন্তু দোয়াব অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ ও রাজকর্মচারীদের অত্যাচারের ফলে এই নীতি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়, যদিও তিনি এই অঞ্চলের অধিবাসীদের রাষ্ট্রীয় ঋণ ও অন্যান্য আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিলেন। 

সুলতানের পরবর্তী পরিকল্পনা ছিল আমীর-ই-কোহী নামে এক কৃষিবিভাগের প্রতিষ্ঠা। 

সরকারী ব্যয়ে পতিত জমি কৃষির উপযোগী করে তোলাই এই বিভাগের উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই পরিকল্পনাও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

সুলতান ফিরোজ তুঘলকের রাজস্ব ব্যবস্থা : 

রাজস্ব সংক্রান্ত ব্যাপারে পরবর্তী সুলতান ফিরোজ তুঘলক ছিলেন বিশেষ মনোযোগী। প্রজাবর্গের আনুগত্য ও সমর্থন লাভের উদ্দেশ্যে তিনি বহু রকমের অবৈধ খাজনা বাতিল করেন। রাজস্বের পরিমাণ হ্রাস করেন 

এবং কোরানের নির্দেশানুসারে মাত্র চার ধরনের কর ধার্য করেন; যথা খারাজ, খামসু, জিজিয়া ও যাকাত। আন্তঃপ্রাদেশিক শুল্ক বা ‘চুঙ্গি' বাতিল করে সুলতান সর্বত্র অবাধ বাণিজ্যের পথ উন্মুক্ত করেন। 

এছাড়া কৃষির উন্নয়নের জন্য তিনি পাঁচটি বৃহৎ সেচখাল খনন করেন এবং উৎপন্ন ফসলের এক দশমাংশ সেচ কর হিসেবে ধার্য করেন। রাজস্ববৃদ্ধির জন্য তিনি বহু ফলের বাগিচা রোপণ করেন এবং নানাবিধ ফলের চাষে উৎসাহ দেন। 

এই সকল বিধি-ব্যবস্থার ফলে শুধু যে সুলতানের রাজকোষেরই সমৃদ্ধি ঘটেছিল এমন নয়, জনসাধারণেরও বৈষয়িক সমৃদ্ধি ঘটেছিল । ফিরোজ তুঘলকের রাজস্ব নীতির প্রধান ত্রুটি ছিল 

প্রথমত, ভূমি রাজস্ব ইজারা দেওয়ার নীতি পরোক্ষভাবে রাজকোষের ক্ষতি করেছিল এবং প্রদেশগুলিতে ইজারাদারদের অত্যাচারে প্রজাবর্গের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। 

কারণ ইজারাদররা নির্ধারিত রাজস্বের অতিরিক্ত প্রজাদের কাছ থেকে বলপূর্বক আদায় করত। এই প্রথা আলাউদ্দিন খলজী ও মুহাম্মদ বিন তুঘলক রদ করেছিলেন। 

দ্বিতীয়, ফিরোজ সামরিক ও বে-সামরিক কর্মচারীদের নগর বেতনের পরিবর্তে জায়গির দেওয়ার প্রথা প্রবর্তন করেছিলেন যা আলাউদ্দিন খালজী ও মুহাম্মদ-বিন তুঘলক রদ করেছিলেন। 

এই কর্মচারীরা নিজ নিজ জায়গিরে চাষ-আবাদ করার পরিবর্তে জায়গির দলিল রাজস্ব আদয়কারী কর্মচারীদের কাছে সামান্য লাভের বিনিময়ে বিক্রয় করে দিত। ফলে রাষ্ট্র ও প্রজাবর্গ উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হত। 

তৃতীয়, হিন্দুদের কাছ থকে কঠোরভাবে জিজিয়া কর আদায় করার ফলে হিন্দু সম্প্রদায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। হিন্দুদের অসন্তোষ সাম্রাজ্যের সংহতি বিপন্ন করে তুলেছিল। 

পরবর্তী দুটি আফগান রাজবংশ যথাক্রমে সৈয়দ ও লোদী বংশ ফিরোজের রাজস্ব নীতি মোটামুটিভাবে বজায় রাখে। লোদীদের আমলে সমগ্র কৃষিজমি আফগান পরিবারের মধ্যে জায়গির হিসাবে বিতরণ করা হয়। ফলে রাষ্ট্রের খালিসা জমি বলে বিশেষ কিছু অবশিষ্ট ছিল না।

সুলতানি আমলের রাজস্বের পর্যালোচনা : 

সুলতানি আমলে রাজস্ব-ক্রম কেমন ছিল, সে বিষয়ে ঐতিহাসিক মহলে মতভেদ রয়েছে। কারো মতে উৎপন্ন ফসলের এক-পঞ্চমাংশ ছিল ভূমি কর। কিন্তু এই ধারণা যথার্থ নয়। 

মুসলিম আইন অনুসারে উৎপন্ন ফসলের এক-দশমাংশ থেকে অর্ধাংশ পর্যন্ত খারাজ বা ভূমি কর ধার্য করার অধিকার রাষ্ট্রের ছিল। 

সুলতানি আমলে মুসলমান কৃষক যদি সরকারী সেচ খাল থেকে জল নিয়ে চাষ আবাদ না করত, তাহলে তাকে উৎপন্ন ফসলের এক-দশাংশ ভূমি কর প্রদান করতে হত। 

যদি সেই কৃষক সরকারী সেচ খাল থেকে জল নিত, তাহলে তাকে জল কর রূপে অতিরিক্ত কর প্রদান করতে হত। এই আমলে হিন্দু বণিকদের মুসলমান বণিকদের তুলনায় দ্বিগুণ আবগারী কর দিতে হত। 

সুতরাং একথা অনুমান করলে ভুল হবে না যে, মুসলমান কৃষকদের তুলনায় হিন্দু কৃষকদের দ্বিগুণ ভূমি কর দিতে হত এবং এর পরিমাণ ছিল উৎপন্ন ফসলের এক পঞ্চমাংশ। 

সুলতানি আমলের প্রথম দিকে সম্ভবত এই ছিল রাষ্ট্রের রাজস্ব নীতি। কিন্তু আলাউদ্দিন খিলজীর সময় থেকে এই নীতির পরিবর্তন ঘটে।

উপসংহার : 

রাজস্ববৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে আলাউদ্দিন উৎপন্ন ফসলের অর্ধাংশ ভূমি কর হিসেবে ধার্য করেন এবং তাঁর পরবর্তী সুলতানদের আমলে মোটামুটিভাবে এই রাজস্ব ক্রম বজায় থাকে। 

আধুনিক ঐতিহাসিকদের মতে শের শাহ উৎপন্ন ফসলের এক তৃতীয়ংশ ভূমি কর হিসেবে ধার্য করেন এবং পরবর্তী কালে মোগল সম্রাট

তিনি পাঁচটি বৃহৎ সেচখাল খনন করেন এবং উৎপন্ন ফসলের এক দশমাংশ সেচ কর হিসেবে ধার্য করেন। রাজস্ববৃদ্ধির জন্য তিনি বহু ফলের বাগিচা রোপণ করেন এবং নানাবিধ ফলের চাষে উৎসাহ দেন। 

এই সকল বিধি-ব্যবস্থার ফলে শুধু যে সুলতানের রাজকোষেরই সমৃদ্ধি ঘটেছিল এমন নয়, জনসাধারণেরও বৈষয়িক সমৃদ্ধি ঘটেছিল ।

নিত্য নতুন সকল আপডেটের জন্য জয়েন করুন

Telegram Group Join Now
Our Facebook Page Join Now
Class 8 Facebook Study Group Join Now
Class 7 Facebook Study Group Join Now
Class 6 Facebook Study Group Join Now

Post a Comment