ভারত ও ইসলামের ইতিহাসে মুহাম্মদ ঘুরীর অবদান | যুদ্ধ, জয়, পরাজয়, উদ্দেশ্য ও ফলাফল

Follow Our Official Facebook Page For New Updates


Join our Telegram Channel!

» মুহাম্মদ ঘুরীর ভারতে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠায় অবদান   »

মুহাম্মদ ঘুরীর





মুহাম্মদ ঘুরী ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম সাম্রাজ্যের প্রথম স্থপতি। তিনি ছিলেন ভারতবর্ষের ইতিহাসে একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী শাসক। সমরকুশলী হিসেবেও তিনি শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন ছিলেন। রাজ্য জয় ও রাজ্য বিস্তার করাই ছিল তাঁর নীতি। শাসক হিসেবেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ। তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধের জয়ের মাধ্যমে তিনি ভারতে মুসলিম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। 

তরাইনের প্রথম যুদ্ধ : 

পাঞ্জাবে গজনী বংশের পতনের পর মুহাম্মদ ঘুরী রাজপুতদের প্রবল বাধার সম্মুখীন হন। রাজপুতরা অত্যন্ত সাহসী ও পরাক্রমশালী ছিল, কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো ঐক্য ছিল না। মুহাম্মদ ঘুরীর দ্রুত সাফল্যে দিল্লি ও আজমীরের চৌহান বংশের রাজা পৃথ্বিরাজ অত্যন্ত শঙ্কিত হয়ে বিরাট সৈন্যবাহিনী সংগ্রহ করে ‘ঘুরী'র বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। 

কনৌজের রাজা জয়চন্দ্র ছাড়াও অনেক রাজপুত বীর পৃথ্বিরাজের সাহায্যার্থ এগিয়ে আসেন। ফলে তার এক বিশাল শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী গড়ে ওঠে। এ সম্মিলিত বাহিনীতে ২০,০০০ অশ্বারোহী, ৩০০০ হস্তিবাহী এবং অসংখ্য পদাতিক সৈন্য ছিল। ১১৯১ খ্রিস্টাব্দে থানেশ্বরের ১৪ মাইল দূরে থানেশ্বর ও কর্নাটকের মধ্যবর্তী বিস্তীর্ণ প্রান্তরে ‘তরাইন' নামক স্থানে পৃথ্বিরাজ ও মুহাম্মদ ঘুরীর বাহিনী মুখোমুখি হয়।

তীব্র লড়াইয়ে মুসলিম বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। পৃথ্বিরাজের ভাই ও সেনাপতি গোবিন্দ রায় বীরবিক্রমে আক্রমণ চালিয়ে মুসলিম বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে তোলেন। মুহাম্মদ ঘুরী স্বয়ং আহত ও শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়ে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ইতিহাসে এটাই তরাইনের প্রথম যুদ্ধ নামে পরিচিত। 

প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আবুল কাসেম ফিরিশতা বলেন, “আফগান, খিলজী এবং খোরাসানী সৈন্যদের অবহেলা ও নির্লিপ্ততাই তরাইনের প্রথম যুদ্ধে মুহাম্মদ ঘুরীর পরাজয়ের জন্য দায়ী।” এ বিপর্যয় সত্ত্বেও মুসলিম সাম্রাজ্য সম্প্রসারণ থেমে থাকেনি। 

তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ : 

তরাইনের প্রথম যুদ্ধে পরাজিত হলেও মুহাম্মদ ঘুরী ভগ্নোদ্যম হওয়ার মতো ব্যক্তি ছিলেন না। তিনি এ পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য এবার ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ ও শক্তি সঞ্চয় করেন। পরাজয়ের গ্লানি মুছে ফেলা ও ভারতবর্ষে মুসলিম সাম্রাজ্য স্থাপনের দৃঢ় সংকল্প নিয়ে ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ ঘুরী প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার সৈন্য নিয়ে পৃথ্বিরাজের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। 

ঐতিহাসিক ফিরিশতার মতে, এ আসন্ন দুর্যোগে পৃথ্বিরাজকে উত্তর ভারতের ১৫০ জন রাজপুত যুবরাজ সহযোগিতা প্রদান করেন। পৃথ্বিরাজ ও রাজপুত যুবরাজদের সম্মিলিত বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় তিন লক্ষ । ইতিহাস প্রসিদ্ধ তরাইন প্রান্তরে উভয় বাহিনীর মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ সংঘটিত হয়। রাজপুত সৈন্য সংখ্যায় বেশি থাকা সত্ত্বেও সারাদিন যুদ্ধ চলার পর জয় পরাজয় অনিশ্চিত থাকে।

এ সময় মুহাম্মদ ঘুরী বিশেষ রণকুশলতার পরিচয় দেন। তিনি যখন দেখলেন, রাজপুতরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, তখন তিনি আনুমানিক ১২,০০০ বাছাই করা রিজার্ভ সৈন্য নিয়ে রাজপুতদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। এরূপ অতর্কিত আক্রমণে রাজপুতরা পলায়ন করতে বাধ্য হয়। 

পৃথ্বিরাজ নিজেও যুদ্ধক্ষেত্র হতে পলায়ন করেন, কিন্তু পরে সরসুত (স্বরস্বতী নদীর তীরবর্তী) নামক স্থানে বন্দি ও নিহত হন। ফলে সম্মিলিত রাজপুত জোট শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। 

তরাইনের প্রথম যুদ্ধে মুহাম্মদ ঘুরীকে আহতকারী খাঁদি রায় এবং পৃথ্বিরাজের ভাই গোবিন্দ রায়ও এ যুদ্ধে নিহত হন। ঘুরী সাহস, বুদ্ধিমত্তা ও সমরকুশলের মাধ্যমে যুদ্ধে জয়ী হন।

তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধের গুরুত্ব : 

তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে মুহাম্মদ ঘুরীর বিজয় ও পৃথ্বিরাজের পরাজয় ভারতবর্ষের ইতিহাসের মোড় পরিবর্তন করে দেয়। ভি এ স্মিথের মতে, “১১৯২ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধকে চূড়ান্ত সংঘর্ষ হিসেবে গণ্য করা যায়। 

যা হিন্দুস্থানের ওপর মুসলিম আক্রমণের চরম সাফল্যের সূচনা করেছিল।” [The second battle of Tarain in 1192 A D may be regarded as the decisive contest which assured the ultimate success of the Muhammadan attack on Hindustan. ] 

এ যুদ্ধে সম্মিলিত হিন্দু রাজপুত বাহিনীর পরাজয়ে তাদের রাজনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙ্গে পড়ে এবং সামরিক দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে এমন আর কোনো হিন্দু রাজন্য অবশিষ্ট থাকল না যিনি মুসলমানদের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারতেন।

V D Mahajan - The second battle of Tarain is a landmark in the history of India. It ensured the ultimate success of Muhammad Ghori against the Indian states.

ঐতিহাসিক হেইগ বলেন, তরাইনের বিজয় উত্তর ভারতে দিল্লি পর্যন্ত সমস্ত শহরের ফটক ঘুরীর জন্য উন্মোচিত করে দেয়। এ বিজয় ভারতে মুসলিম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার বুনিয়াদ স্থাপন করে।


ঐতিহাসিক কে আলী বলেন, The victory at Tarain really laid the foundation of Muslim rule in the sub-continent. [ History of India, Pakistan and Bangladesh;  

এরপর মুহাম্মদ ঘুরী ক্ষিপ্র গতিতে তার জয়ের ফলাফল পাকাপোক্ত করার প্রয়াস পান। তিনি একে একে দ্রুত হানসী, সামানা, স্বরস্বতী, আজমীর প্রভৃতি অঞ্চল অধিকার করেন। আজমীরের প্রচুর ধনসম্পদ হস্তগত করার পর পৃথ্বিরাজের এক পুত্রকে নিয়মিত কর দেয়ার অঙ্গীকারে সেখানকার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন।

মিরাট, কোহল ও দিল্লি জয় : 

তার সুযোগ্য সেনাপতি কুতুবুদ্দিন আইবেককে ভারতবর্ষে বিজিত অঞ্চলের শাসনভার দিয়ে তিনি গজনীতে প্রত্যাবর্তন করেন। কুতুবুদ্দিনের সামরিক দক্ষতা ও রাজনৈতিক দূরদৃষ্টির ফলে ভারতে তুর্কি সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি সম্ভবপর হয়। ১১৯৩-১১৯৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তিনি মিরাট, কোহল (আলিগড়) ও দিল্লি অধিকার করেন। এ সময় দিল্লিকে ভারতের রাজধানী করা হয়।

কনৌজ বিজয় : 

মুহাম্মদ ঘুরী ১১৯৪ খ্রিস্টাব্দে কনৌজের রাঠোর বংশের রাজা জয়চাঁদকে দমন করার জন্য ৫০,০০০ অশ্বারোহী সৈন্যের এক বাহিনী নিয়ে পুনরায় ভারত আক্রমণ করেন। এদিকে কুতুবুদ্দিন আইবেকও স্বীয় বাহিনী নিয়ে প্রভুর সাহায্যার্থে এগিয়ে আসেন। শক্তিশালী রাজা জয়পাল পৃথ্বিরাজের সাথে ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে তরাইনের যুদ্ধে যোগদান করেননি। 

তিনি হয়তো ভেবেছিলেন, গজনীর সুলতান মাহমুদের ন্যায় মুহাম্মদ ঘুরীও যুদ্ধ জয়ের পর লুণ্ঠন করে চলে যাবেন এবং পৃথ্বিরাজের অবর্তমানে তিনি সমগ্র ভারতের একচ্ছত্র অধিপতি হতে পারবেন, কিন্তু তিনি যখন দেখলেন, মুহাম্মদ ঘুরী বিজিত অঞ্চলে স্বীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করছেন, তখন তিনি হতাশ হয়ে মুসলমানদের বিরোধিতায় মরিয়া হয়ে ওঠেন। 

এ সংবাদ শুনে মুহাম্মদ ঘুরী ভারতে পদার্পণ করে কালবিলম্ব না করে কনৌজ আক্রমণ করেন। জয়চাদ একাই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিলেন। তিনি পৃথ্বিরাজের মতো অন্য কোনো রাজপুত রাজার সাহায্য কামনা করেননি। হয়তো পৃথ্বিরাজের পরাজয়ের পর রাজপুতরাও হতাশ হয়ে পড়েছিল। 

তাই জয়চাঁদ কোনো ঐক্যজোটের চেষ্টা না করে নিজেই বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করার প্রয়াস পান। তিনি তার বাহিনী নিয়ে যমুনা নদীর তীরবর্তী চান্দাওয়ার ও ইতাওয়ারের মধ্যবর্তী স্থানে ঘুরীর সম্মিলিত বাহিনীর মুখোমুখি হন। 

উভয়পক্ষের মাঝে ঘোরতর যুদ্ধ হয় এবং যুদ্ধে রাঠোর বাহিনী সম্পূর্ণরূপে পরাজিত হয়। যুদ্ধে জয়চাঁদ নিহত হন। অতঃপর রাঠোররা কনৌজ ত্যাগ করে রাজপুতনায় চলে যায় এবং পরবর্তীতে সেখানে তারা ‘যোধপুর' রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করে ।

বারানসী জয় : 

কনৌজ জয়ের পর ঘুরী সহজেই আসনি ও বেনারস অধিকার করেন। অধ্যাপক এস আর শর্মা বলেন, “চান্দাওয়ারের যুদ্ধে জয়চাঁদের পতনের পর মুহাম্মদ ঘুরী হিন্দুস্থানের রাজনৈতিক রাজধানী কনৌজ এবং ধর্মীয় রাজধানী বেনারস হস্তগত করেন। (The fall of Jai Chand at Chandwar made Muhammad the master of the political as well as the religious capital of Hindustan, Qanauj and Benares. SR Sharma)

উল্লেখ্য, এ জয়ের পর তিনি প্রায় ১৪,০০০ উট বোঝাই করে অগণিত ধন রত্নসহ গজনীতে প্রত্যাবর্তন করেন। বিদায়ের পথে তিনি কোনো কোনো দুর্গে কিছুদিন অবস্থান করেন এবং সেখান থেকেও প্রচুর ধনরত্ন হস্তগত করেন।

ইসলামের ইতিহাসে তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধের গুরুত্ব অপরিসীম। তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধের জয় মূলত হিন্দুস্থানে মুসলিম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পথনির্দেশক। পৃথ্বীরাজের পরাজয়ে অপরাপর রাজপুত রাজন্যবর্গের মনোবল ভেঙ্গে যায়। তাই অল্প সময়ের মধ্যে দিল্লী, আজমীর, হানসী, মিরাট, আলিগড় মুসলিম সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। 

আবার ঘুরীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশে কনৌজ, কাশী, আনহিলওয়ারা, বাংলা, বিহার মুসলিম শাসনাধীন আসে এবং ভারতে মুসলিম শাসনের পথ সুগম হয় ।


» শাসক ও বিজেতা হিসেবে মুহাম্মদ ঘুরীর কৃতিত্ব মূল্যায়ন »


ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের ইতিহাসে মুইজউদ্দিন মুহাম্মদ ঘুরী এক বিশাল স্থান অধিকার করে আছেন। ১১৭৩ খ্রিস্টাব্দে ভ্রাতা গিয়াসউদ্দিনের মৃত্যুর পর মুইজউদ্দিন গজনীর ঘুর সিংহাসনে আরোহণ করেন।

তিনি ছিলেন অপরাজেয় সমরনেতা, সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা এবং একজন প্রজারঞ্জক শাসক। দীর্ঘ ত্রিশ বছরের প্রচেষ্টা, অক্লান্ত অধ্যবসায়ের ফলে তিনি ক্ষুদ্র ঘুর রাজ্যকে একটি বিশাল সাম্রাজ্যে পরিণত করতে সমর্থ হয়েছিলেন। মুসলিম সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে এশিয়ার শাসকদের মধ্যে তখন তিনি ছিলেন অতুলনীয়। তিনি ইতিহাসে মুহাম্মদ ঘুরী নামে অভিহিত।


■ শাসক ও বিজেতা হিসেবে মুহাম্মদ ঘুরীর কৃতিত্ব/অবদান: 

মুইজউদ্দিন মুহাম্মদ ঘুরী ছিলেন একজন প্রকৃত শাসক। ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম সাম্রাজ্যের শক্তিশালী ভিত্তি তিনিই রচনা করেন। ভারতে মুসলিম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় তাঁর কৃতিত্ব/অবদান নিম্নে বর্ণনা করা হলো

১. মুলতান ও উচ রাজ্য : 

ভারতীয় উপমহাদেশে মুহাম্মদ ঘুরীর মুলতানের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযান করেন। এ সময় মুলতানে কার্মাথীয় ইসমাইলীয় সম্প্রদায় শাসন করতো। মুহাম্মদ ঘুরী খায়রার গিরিপথের পরিবর্তে গোলান গিরিপথ দিয়ে মুলতানে পৌঁছেন এবং অতি সহজেই ১১৭৫ খ্রিস্টাব্দে মুলতান অধিকার করেন। অতঃপর তিনি তথাকার হিন্দু রানির বিশ্বাসঘাতকতায় উচ্চ দখল করেন।


২. খোক্কারদের বিদ্রোহ দমন : 

মুহাম্মদ ঘুরীর উল্লেখযোগ্য অবদান হলো খোক্কারদের বিদ্রোহ দমন। ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাবের খোক্কারগণ ঘুরীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলে মুহাম্মদ ঘুরী বিশাল সামরিক বাহিনী নিয়ে পাঞ্জাবে অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করেন। 

৩. পাঞ্জাব অধিকার : 

মুলতান ও উচ বিজিত হলেও মুহাম্মদ ঘুরী উপলব্ধি করেন যে, গজনীর আধিপত্য ধ্বংস করতে না পারলে ঘুরী বংশের প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। তাই তিনি সুলতান মাহমুদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে খায়বার গিরিপথ দিয়ে লাহোরের দিকে অভিযান করেন। তিনি ১১৭৯ খ্রিস্টাব্দে পেশোয়ার এবং ১১৮৬ খ্রিস্টাব্দে লাহোর অবরোধ করে তা দখল করেন। 

৪. তরাইনের প্রথম যুদ্ধ : 

মুহাম্মদ ঘুরী দিল্লি ও আজমীরের চৌহান বংশীয় রাজা তৃতীয় পৃথ্বিরাজের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। পৃথ্বিরাজের আহ্বানে উত্তর ভারতের প্রায় সকল রাজপুত রাজন্যবর্গ মুসলমানদের বিরুদ্ধে পৃথ্বিরাজের সাথে যোগদান করেন। একমাত্র কনৌজরাজ জয়চাঁদ নিরপেক্ষ থাকেন। ১১৯১ খ্রিস্টাব্দে থানেশ্বরের নিকটে তরাইন নামক স্থানে উভয়পক্ষে তুমুল যুদ্ধ আরম্ভ হয়। রাজপুতদের আক্রমণে তুর্কি বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে।

৫. তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ : 

মুহাম্মদ ঘুরী তরাইনের প্রথম যুদ্ধের পরাজয়ের গ্লানি কিছুতেই ভুলতে পারেননি। তাই তিনি ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় এক বিশাল, দক্ষ বাহিনী নিয়ে তরাইনের প্রান্তরে উপস্থিত হন। এবারও পৃথ্বিরাজের আমন্ত্রণে রাজপুত রাজন্যবর্গ তাঁর সাহায্যার্থে এগিয়ে আসে। অসীম সাহস, বীর-বিক্রমের সাথে যুদ্ধ করেও পৃথ্বিরাজ পরাজিত ও নিহত হন। মুহাম্মদ ঘুরীর এ বিজয়ের ফলে সমগ্র উত্তর ভারত বিজয়ের পথ উন্মুক্ত হয়।

ঐতিহাসিক ভি. ডি. মহাজন বলেন, “ভারতবর্ষের ইতিহাসে তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা। এটি ভারতীয় রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধে মুহাম্মদ ঘুরীর চূড়ান্ত বিজয় নিশ্চিত করে।”

৬. অপরাপর অঞ্চল অধিকার :

তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে পৃথ্বিরাজের পরাজয়ের ফলে অপরাপর রাজপুত রাজন্যবর্গের মনোবল একেবারে ভেঙ্গে পড়ে। ঐতিহাসিক হেগের ভাষায়, “তরাইনের বিজয় উত্তর ভারতে দিল্লি পর্যন্ত সকল শহরের ফটক মুহাম্মদ ঘুরীর জন্য উন্মোচন করে দেয়।” তিনি পরপর হিন্দু রাজাদের নিকট থেকে সামানা, হানসি, সরস্বতী প্রভৃতি অঞ্চল অধিকার করেন। অতঃপর তিনি আজমীর দখল করে পৃথ্বিরাজের এক পুত্রের ওপর এর শাসনভার অর্পণ করেন।

৭. স্থায়ী প্রতিষ্ঠা: 

ঐতিহাসিক মুহাম্মদ ঘুরীর সামরিক প্রতিভা অপেক্ষা রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি ও কূটনৈতিক প্রতিভা কর্তৃক অধিকতর প্রশংসা করেছে। ঘুরী উপলব্ধি করতে সক্ষম হন যে, রাষ্ট্র সংগঠন ব্যতীত বিজিত অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত রাজ্য স্থায়ী হতে পারে না। তাই তিনি একটি সুষ্ঠু ও ন্যায়সংগত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। যার ফলে তাঁর মৃত্যুর পর প্রতিষ্ঠিত সাম্রাজ্য সুদীর্ঘ ৩০০ বছরেরও অধিককাল সগৌরবে টিকে থাকে।

৮. কনৌজ অধিকার : 

মুহাম্মদ ঘুরী কুতুবউদ্দিন আইবেককে সাথে নিয়ে ১১৯৪ খ্রিস্টাব্দে জয় চাঁদকে পরাজিত করে কনৌজ অধিকার করেন। অতঃপর কুতুবউদ্দিন আইবেককে কনৌজের প্রতিনিধি নিযুক্ত করে তিনি গজনী ফিরে আসেন।

৯. গুজরাট, গোয়ালিয়র ও কালিঞ্জর অধিকার : 

মুহাম্মদ ঘুরীর নির্দেশে কুতুবউদ্দিন আইবেক ভারতে মুসলিম সাম্রাজ্য সম্প্রসারণে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি ১১৯৬ খ্রিস্টাব্দে গোয়ালিয়র, ১১৯৭ খ্রিস্টাব্দে গুজরাট এবং ১২০২ খ্রিস্টাব্দে কালিঞ্জর অধিকার করে এ অঞ্চলে ঘুরীর শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।

১০. শিল্প ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক : 

মুহাম্মদ ঘুরী শিল্প-সাহিত্য চর্চায় কম মনোযোগী ছিলেন না। দার্শনিক ও পণ্ডিত ফখরুদ্দিন রাযী, সাহিত্যিক মুবারক শাহ, কবি নিযামী, উরুজী প্রমুখ তাঁর রাজসভা অলঙ্কৃত করেছিলেন। তিনি দিল্লির ‘কুয়াত-উল-ইসলাম' মসজিদ এবং আজমীরের ‘আড়াই দিন কা ঝোপড়া' প্রভৃতি স্থাপত্যশিল্প নির্মাণ করেন।

১১. ন্যায়বিচারক : 

মুহাম্মদ ঘুরী ছিলেন বিচক্ষণ ও ন্যায়বিচারক। তাঁর ন্যায়বিচারে সবসময় রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজ করতো। অতি সামান্য অবস্থা থেকে স্বীয় বুদ্ধিমত্তা, কর্তব্যনিষ্ঠা এবং ন্যায়বিচার দ্বারা মুহাম্মদ ঘুরী ভারতে মুসলিম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে যান ।

১২. দূরদর্শী শাসক : 

মুহাম্মদ ঘুরী শুধু একজন শ্রেষ্ঠ সমরনায়ক ছিলেন না, শাসক হিসেবেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত দুরদর্শী। তিনি ভারতীয় হিন্দু রাজন্যবর্গের অযোগ্যতার সুযোগ নিয়ে এদেশে মুসলিম সাম্রাজ্যের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। সুষ্ঠু ও ন্যায়সংগত শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন করে ঘুরী ইতিহাসে সম্রাট বাবরের ন্যায় এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রতিষ্ঠা দখল করে আছেন।

১৩. অভিজ্ঞ প্রশাসক নিয়োগ : 

মুহাম্মদ ঘুরী ছিলেন দক্ষ প্রশাসনিক ক্ষমতার অধিকারী। বিজিত রাজ্যে মুসলিম শাসনের স্থায়িত্ব বিধানের জন্য তিনি একটি সুষ্ঠু ও ন্যায়সংগত প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি করেন। তিনি রাজ্যের কাজকে গতিশীল করার জন্য সুষ্ঠু পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলে দক্ষ প্রশাসক নিয়োগ করেন। 

এর ফলেই বাংলা, বিহার বিজয় এবং পরবর্তীকালে পাক ভারত মুসলিম সাম্রাজ্য বিস্তার সম্ভব হয়েছিল। তিনি গজনীর সুলতান মাহমুদ অপেক্ষা অধিকতর বাস্তব রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন।

১৪. কর্মচারী নিয়োগে নিরপেক্ষতা : 

কর্মচারী নিয়োগ ক্ষেত্রে তিনি হিন্দু-মুসলিমকে সমান গুরুত্ব দিতেন। তবে সামরিক বিভাগে তিনি শুধুমাত্র মুসলমানদেরকে নিয়োগ দিতেন। এর কারণ ছিল অমুসলিমরা দেশরক্ষার দায়িত্বের পরিবর্তে জিযিয়া নামক কর প্রদান করে থাকে। তাঁর শাসনব্যবস্থায় সর্বস্তরের জনগণ সন্তুষ্ট ছিল।

১৫. অঞ্চলভিত্তিক শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন : 

মুহাম্মদ ঘুরী ছিলেন অত্যন্ত দূরদর্শী ও দক্ষ রাজনীতিবিদ। শাসকদের শাসন সম্পর্কে তাঁর অন্তর্দৃষ্টি ছিল অত্যন্ত বাস্তবমুখী । তাই তিনি সমগ্র অঞ্চলে একই শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেননি। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের জনগণের আচার-আচরণের প্রতি নজর রেখে তিনি অঞ্চলভিত্তিক শাসনব্যবস্থা চালু করেন। প্রয়োজনবোধে কোনো কোনো অঞ্চলে তিনি সামন্ত প্রথার প্রবর্তন করেন। তাঁর প্রবর্তিত শাসনব্যবস্থা ছিল খুবই সাধারণ ও সহজ-সরল।

১৬. শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন : 

মুইজউদ্দিন মুহাম্মদ ঘুরী বিজিত রাজ্যের শাসনভার পরিচালনা করার জন্য তাঁর সুযোগ্য অনুচর ও দক্ষ সেনাপতি কুতুবউদ্দিন আইবেককে মনোনীত করে তিনি গজনীতে ফিরে আসেন। কুতুবউদ্দিন সব বিজিত রাজ্যকে সুসংবদ্ধ করে একটি কেন্দ্রীয় শাসনের অধীনে নিয়ে আসেন। তিনি পূর্বের শাসনব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে বাতিল না করে সে শাসনব্যবস্থাকে অধিকতর শক্তিশালী করেন ।


» মুহাম্মদ ঘুরীর ভারত অভিযানের কারণ/উদ্দেশ্যসমূহ ও ফলাফল » 


মুহাম্মদ ঘুরী কর্তৃক মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা ভারতবর্ষের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ও সুদূরপ্রসারী ঘটনা। আরব ও গজনীর তুর্কি সুলতানদের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে মুহাম্মদ ঘুরী ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তাই ড. হাবিবুল্লাহ বলেন- In his scheme of empire building, Muizuddin's Indian conquests appeared to have a secondary importance.

■ মুহাম্মদ ঘুরীর ভারত অভিযানের কারণ/উদ্দেশ্যসমূহ:

১. মধ্য এশিয়ায় পরাজয় : 

মুহাম্মদ ঘুরী সমগ্র মধ্য এশিয়াব্যাপী একটি বিশাল সাম্রাজ্য স্থাপন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে কয়েকবার আক্রমণ করেন, কিন্তু খাওয়ারিজম শাহের নিকট বারবার পরাজিত হওয়ার ফলে তিনি মধ্যএশিয়ায় সাম্রাজ্য বিস্তারের পরিকল্পনা পরিত্যাগ করে ভারতবর্ষের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন।

২. রাজনৈতিক অনৈক্য : 

তদানীন্তন ভারতে হিন্দু রাজন্যবর্গের মধ্যে কোনো রাজনৈতিক ঐক্য ছিল না। তারা পরস্পর কলহ-বিবাদে লিপ্ত ছিল। এরূপ অরাজকতাপূর্ণ পরিবেশে মুহাম্মদ ঘুরী ভারতে স্থায়ী সাম্রাজ্য স্থাপনে সাফল্যের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখতে পেয়ে অভিযান পরিচালনা করতে প্রলুব্ধ হন।

৩. ধন-ঐশ্বর্য : 

ঐতিহাসিক ভি. ডি. মহাজন বলেন, ভারতবর্ষের অগণিত ধন ঐশ্বর্য প্রাপ্ত হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় এবং ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে মুহাম্মদ ঘুরী উত্তর ভারতে রাজ্য বিস্তারে প্রয়াসী হন।

■ মুহাম্মদ ঘুরীর ভারত অভিযানের ফলাফল:

১. মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা : 

মুইজউদ্দিন মুহাম্মদ ঘুরীর ভারত অভিযানের ফলে ভারতে সর্বপ্রথম মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। মুহাম্মদ বিন কাসিম এবং সুলতান মাহমুদ অসীম বীরত্ব ও যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী হয়েও ভারতীয় উপমহাদেশে স্থায়ী মুসলিম প্রতিষ্ঠা কায়েম করতে পারেননি। কিন্তু মুহাম্মদ ঘুরী তাঁর সাফল্যজনক অভিযানের মাধ্যমে ভারতে সর্বপ্রথম মুসলিম শাসনের সূত্রপাত করতে সক্ষম হন।

২. সামরিক শক্তি বৃদ্ধিকরণ : 

মুহাম্মদ ঘুরী ভারতে অভিযান পরিচালনা করে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল অধিকার করে নিজের সামরিক শক্তি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেছিলেন। এসব সফল অভিযান স্পৃহা তাঁকে অন্যান্য অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল।

৩. স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা : 

মুহাম্মদ ঘুরীর ভারত অভিযানের প্রাক্কালে ভারতের রাজনৈতিক অবস্থা ছিল খুবই বিশৃঙ্খলাপূর্ণ। ভারতের বহুধাবিভক্ত রাজন্যবর্গ আধিপত্য বিস্তারের জন্য পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হলে ভারতের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে চরম অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি হয়। 

মুহাম্মদ ঘুরী ভারতে একের পর এক সফল অভিযান পরিচালনা করে দেশীয় রাজন্যবর্গকে পরাজিত করে ভারতে একক প্রভাব প্রতিষ্ঠা করেন। এর ফলে ভারতের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হয়।

৪. সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ : 

মুহাম্মদ ঘুরীর ভারত অভিযানের ফলে ঘুর সাম্রাজ্যের সীমানা অনেক বৃদ্ধি পায়। ঘুরী বংশের শাসন প্রথমে গজনী অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তীতে একের পর এক ভারতে সফল অভিযান পরিচালনা করে মুহাম্মদ ঘুরী ভারতের এক বিশাল অঞ্চল নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করতে সক্ষম হন।

৫. রাজপুতদের ক্ষমতা বিনষ্ট: 

মুহাম্মদ ঘুরীর ভারত অভিযানের পূর্বে ভারতে রাজপুত রাজন্যবর্গের একক ক্ষমতাও প্রতিষ্ঠিত ছিল। মুহাম্মদ ঘুরী একের পর এক ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল অধিকার করে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করে রাজপুতদের দীর্ঘদিনের প্রভাব বিনষ্ট করেন। তাঁর ভারত অভিযানই রাজপুতদেরকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল।

৬. সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন : 

মুহাম্মদ ঘুরীর ভারত অভিযানের ফলে ভারতের সামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে। ঘুরীর ভারত অভিযানের পূর্বে ভারতে বিভিন্ন কুসংস্কার ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছিল। মুহাম্মদ ভারত জয় করে সমাজের ঘৃণিত সতীদাহ প্রথা, নরবলি, শিশুসন্তান হত্যাসহ বিভিন্ন কুপ্রথার ধ্বংস সাধন করেন।

৭. আর্থিক সফলতা : 

মুহাম্মদ ঘুরীর ভারত বিজয়ের অন্যতম দিক হলো আর্থিক সফলতা। ঘুরী শুধু ভারত জয়লাভ করেননি, ভারত বিজয়ের মাধ্যমে প্রচুর সম্পদও তাঁর হস্তগত হয়। এর ফলে ঘুরীর সাম্রাজ্য অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

৮. মর্যাদা ও গুরুত্ব বৃদ্ধিকরণ : 

মুহাম্মদ ঘুরী ভারতে অভিযান পরিচালনা করে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল অধিকার করে নিজের সামরিক শক্তি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেছিলেন। এসব সফল অভিযান স্পৃহা তাঁকে অন্যান্য অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল।

মুহাম্মদ ঘুরী ভারতীয় উপমহাদেশে শক্তিশালী মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করে ইতিহাসে অবিস্বরণীয় হয়ে আছেন। গজনী রাজ্যের ধ্বংসাবশেষের ওপর ঘুরী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি ঘুরী বংশের শাসকদের মধ্যে সবিশেষ উল্লেখযোগ্য ছিলেন। কেবল রাজ্যজয় ও সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবেই নয়, রাজ্যে মুসলিম শাসন সুপ্রতিষ্ঠা করায়ও তিনি ছিলেন অসামান্য কৃতিত্বের অধিকারী

মুহাম্মদ ঘুরীর, মুহাম্মদ ঘুরীর, মুহাম্মদ ঘুরীর, মুহাম্মদ ঘুরীর, মুহাম্মদ ঘুরীর

» মুহাম্মদ ঘুরীর উত্তর ভারত বিজয় ও তাঁর সাফল্যের কারণগুলো » 


মুহাম্মদ ঘুরী কর্তৃক মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা ভারতবর্ষের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ও সুদূরপ্রসারী ঘটনা। আরব ও গজনীর তুর্কি সুলতানদের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে মুহাম্মদ ঘুরী ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। 

তিনি ভারতের বিশৃঙ্খল রাজনৈতিক পরিস্থিতির সদ্ব্যবহার করে শুধু উত্তর ভারত বিজয়েই সফলতা অর্জন করেননি; বরং বিজিত অঞ্চলে স্থায়ীভাবে মুসলিম শাসনও কায়েম করতে সক্ষম হন। তাই ড. হাবিবুল্লাহ বলেন- In his scheme of empire building, Muizuddin's Indian conquests appeared to have a secondary importance.

■ ভারত বিজয় ও মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠায় মুহাম্মদ ঘুরী ভারত অভিযানের পটভূমি :

১. মধ্য এশিয়ায় পরাজয়: 

মুহাম্মদ ঘুরী সমগ্র মধ্য এশিয়াব্যাপী একটি বিশাল সাম্রাজ্য স্থাপন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে কয়েকবার আক্রমণ করেন, কিন্তু খাওয়ারিজম শাহের নিকট বারবার পরাজিত হওয়ার ফলে তিনি মধ্য এশিয়ায় সাম্রাজ্য বিস্তারের পরিকল্পনা পরিত্যাগ করে ভারতবর্ষের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন।

২. রাজনৈতিক অনৈক্য : 

তদানীন্তন ভারতে হিন্দু রাজন্যবর্গের মধ্যে কোনো রাজনৈতিক ঐক্য ছিল না। তারা পরস্পর কলহ-বিবাদে লিপ্ত ছিল। এরূপ অরাজকতাপূর্ণ পরিবেশে মুহাম্মদ ঘুরী ভারতে স্থায়ী সাম্রাজ্য স্থাপনে সাফল্যের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখতে পেয়ে অভিযান পরিচালনা করতে প্রলুব্ধ হন।

৩. ধন-ঐশ্বর্য : 

ঐতিহাসিক ভি. ডি. মহাজন বলেন, ভারতবর্ষের অগণিত ধন ঐশ্বর্য প্রাপ্ত হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় এবং ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে মুহাম্মদ ঘুরী উত্তর ভারতে রাজ্য বিস্তারে প্রয়াসী হন।

• ভারতবর্ষে মুহাম্মদ ঘুরীর অভিযানসমূহ :

১. মুলতান বিজয় : 

ঐতিহাসিক আর. সি. মজুমদার বলেন, মুহাম্মদ ঘুরীর প্রথম অভিযান পরিচালিত হয় মুলতানের বিরুদ্ধে ১১৭৮ খ্রিস্টাব্দে। তিনি স্থানীয় ২৩ কারামাতী সম্প্রদায়কে পরাজিত করে মুলতান অধিকার করেন এবং সেখানে একজন শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন।

২. উচ বিজয় : 

মুলতান বিজয়ের পর উচ বিজয়ের আকাঙ্ক্ষায় মুহাম্মদ ঘুরী সিন্ধুর ভাটি রাজাদের রাজ্য উচ আক্রমণ করে তা দখল করেন। উচ বিজয়ের পরবর্তীকালে সিন্ধু দেশ জয় করার সুযোগ সৃষ্টি করেন।

৩. গুজরাট বিপর্যয় : 

১১৭৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি গুজরাটের রাজধানী আনহিলওয়ার বিজয়ের মানসে সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেন। আনহিলওয়ারের দ্বিতীয় ভীম দেবের সৈন্যবাহিনীর সাথে যুদ্ধে ঘুরীর সৈন্যরা পরাজিত হয়। ফলে গুজরাট জয় করা আর তাদের ভাগ্যে জুটেনি। কারণ সৈন্যগণ দীর্ঘ পাহাড়ী পথ অতিক্রম করার কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন।

৪. পাঞ্জাব বিজয় : 

ঐতিহাসিক শ্রীরাম শর্মা বলেন, মুহাম্মদ ঘুরী ১১৭৯ খ্রিস্টাব্দে, গিরিপথের মধ্য দিয়ে লাহোরের দিকে অভিযান পরিচালনা করেন। প্রথমে পেশওয়ার দখল করে তিনি গজনী বংশের সর্বশেষ সুলতান খসরু মালিককে পরাজিত করে লাহোর অধিকার করেন ।

৫. তরাইনের প্রথম যুদ্ধ : 

পাঞ্জাবে আধিপত্য বিস্তারের পর মুহাম্মদ ঘুরীকে বিভিন্ন কারণে দিল্লি ও আজমীরে চৌহান রাজা পৃথ্বিরাজের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে হয়। ফলে ১১৯১ সালে কর্নাট ও থানেশ্বরের মধ্যবর্তী তরাইন নামক স্থানে উভয় বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী পরাজিত এবং মুহাম্মদ ঘুরী ব্যর্থ হয়ে গজনীতে প্রত্যাবর্তন করেন।

৬. তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ : 

তরাইনের প্রথম যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মুহাম্মদ ঘুরী ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় ১,২০,০০০ সৈন্যের এক বিশাল বাহিনী নিয়ে পৃথ্বিরাজের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। তরাইন প্রান্তরে উভয়ের মধ্যে তুমুল যুদ্ধের পর ঘুরী পৃথ্বিরাজকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করতে সক্ষম হন। পৃথ্বিরাজ পরে ধৃত ও নিহত হন।

তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধের ফলাফল:

তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধের ফলে ভারতে মুসলিম সাম্রাজ্যের ভিত্তি সুদৃঢ় হয়। ভারতের ইতিহাসে এ যুদ্ধ ছিল একটি যুগান্তকারী ঘটনা। ঐতিহাসিক আর. সি. মজুমদার বলেন— The victory of Mohammad was decisive it lid the foundation of Muslim dominion in Northen India.

৭. কনৌজ জয় : 

১১৯৪ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ ঘুরী কনৌজ রাজ জয় চাঁদকে দমন করার জন্য পুনরায় ভারতে আগমন করেন। ঘুরী চন্দাবরের যুদ্ধে জয় চাঁদকে পরাজিত করে কনৌজ অধিকার করেন। অতঃপর হানসি ও কাশী এবং বেনারসও অধিকার করেন। 

৮. মিরাট, দিল্লি ও কোহল অধিকার : 

ঐতিহাসিক তারাশংকর রায় বলেন, কনৌজ বিজয়ের পর মুহাম্মদ ঘুরীর সেনাপতি কুতুবউদ্দিন আইবেক প্রভুর প্রতিনিধি, হয়ে একের পর এক বিজয় অভিযান অব্যাহত রাখেন। তিনি ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে মিরাট এবং ১১৯৩ খ্রিস্টাব্দে দিল্লি ও আজমীরের কোহল অধিকার করেন। 

৯. বারানসী জয় : 

ড. হাবিবুল্লাহ বলেন, কনৌজ জয়ের পর বিজয়ী মুসলিম বাহিনী আরো অগ্রসর হয়ে ভারতের ধর্মীয় রাজধানী বারানসী দখল করে। 

১০. গোয়ালিয়র, গুজরাট, বিয়ানা ও বাদায়ুন বিজয় : 

মুহাম্মদ ঘুরী গজনী ফিরে গেলেও কুতুবউদ্দিন আইবেক বিজয় অভিযান অব্যাহত রাখেন। ১১৯৬ খ্রিস্টাব্দে গোয়ালিয়র জয় করে তিনি ভীম দেবের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। গুজরাটে অবস্থিত আনহিলওয়ার রাজ্যের সেনাবাহিনী ১১৭৮ খ্রিস্টাব্দে ঘুরীর নেতৃত্বে পরিচালিত মুসলিম বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করতে সমর্থ হলেও ১১৯৮ খ্রিস্টাব্দে কুতুবউদ্দিন তা অধিকার করেন। পরবর্তীকালে রিয়ানা ও বাদায়ুনে মুসলিম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

১১. কালিঞ্জর জয় : 

ঐতিহাসিক লেনপুল বলেন, ১২০২ খ্রিস্টাব্দে কুতুবউদ্দিন আইবেক বুন্দেল খণ্ডের চান্দেল রাজা পরমার্দী দেবের রাজধানী কালিঞ্জর অধিকার করেন। চান্দেল রাজবাহিনী মুসলিম বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম দিকে মারাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুললেও শেষ পর্যন্ত পরাজিত হয়। ফলে কালিঞ্জর মুসলমানদের হস্তগত হয় ।

১২. বাংলা ও বিহার জয় : 

কুতুবউদ্দিন যখন ভারত জয়ে ব্যস্ত ছিলেন তখন তাঁর সেনাপতি বখতিয়ার খিলজী ১২০০ খ্রিস্টাব্দে বিহার ও ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলা বিজয় করে ঘুর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। এভাবে ঘুরী স্বয়ং এবং কুতুবউদ্দিনের সহায়তায় উত্তর ভারতে একটি বিশাল সাম্রাজ্য বিস্তার করতে সক্ষম হন।

১৩. খোক্কারদের দমন : 

পাঞ্জাবের খোক্কার জাতি ১২০৫ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ ঘুরীর আনুগত্য অস্বীকার করে স্বাধীনতা ঘোষণা করলে তাদের সঙ্গে ঘুরীর যুদ্ধ বাধে। এ যুদ্ধে ঘুরী সহজেই তাদেরকে পরাজিত করে খোক্কারদের দমন করেন। কিন্তু গজনী প্রত্যাবর্তনের পথে ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে দুর্ভাগ্যক্রমে তিনি আততায়ী আলী মর্দান কর্তৃক নিহত হন।

উত্তর ভারত বিজয়ের ফলাফল : 

মুহাম্মদ ঘুরী কর্তৃক উত্তর ভারত বিজয়ের ফলে ভারতে রাজনৈতিক ঐক্যের পথ উন্মুক্ত হয়। সমগ্র রাজ্যে কেন্দ্রীয় শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সুলতানদের সীমাহীন ক্ষমার আদর্শ স্থাপিত হয়। এ বিজয়ের ফলে ভারতে তুর্কি কর্তৃত্ব স্থাপিত হলে সাম্রাজ্যে প্রশাসনিক ঐক্য সংহতি প্রতিষ্ঠিত হয়। উত্তর ভারতে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে বহির্বিশ্বের সাথে পুনরায় ভারতের যোগাযোগ স্থাপিত হয়।

→ মুসলমানদের সাফল্যের কারণ

১. সুদক্ষ ও কর্মঠ:

ভি. এ. স্মিথ, লেনপুল, এলফিন্ স্টোন প্রমুখ ঐতিহাসিকের মতে, তুর্কিগণ আমিষভোজী ও শীতপ্রধান দেশের অধিবাসী হওয়ায় তারা নিরামিষভোজী হিন্দুদের তুলনায় অধিক সুদক্ষ ও কর্মঠ ছিল। ফলে তারা সহজেই স্থানীয় হিন্দুদের বিরুদ্ধে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল

২. হিন্দুদের ঐক্যের অভাব : 

উত্তর ভারতে বিরাজমান রাজনৈতিক অনৈক্য, রাজন্যবর্গের পরস্পর দ্বন্দ্ব সংঘর্ষ হিন্দুদের পরাজয়ের অন্যতম কারণ ছিল। সে সময় নিজেদের স্বার্থ-সংঘাতে তারা এত বেশি লিপ্ত হয়ে পড়েছিল যে, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত রক্ষার প্রয়োজনীয়তাই তারা অনুধাবন করতে সক্ষম হয়নি। বস্তুত উত্তর ভারতের রাজনৈতিক অনৈক্য ও অরাজকতার মধ্যেই মুহাম্মদ ঘুরী তাঁর সাফল্যের ইঙ্গিত পেয়েছিলেন।

৩. আদর্শগত পার্থক্য : 

ইসলামী জীবনাদর্শ মুসলমানদের সাফল্যের একটি অন্যতম কারণ। ইসলাম মানুষকে সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দেয়। এখানে ছোট বড় জাতিভেদ প্রথা নেই। এ কারণেই মুহাম্মদ ঘুরী শত্রুদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবার শক্তি ও সাহস পেয়েছিলেন। অন্য দিকে হিন্দুদের মধ্যে বিরাজমান জাতিভেদ প্রথা তাদেরকে শতধাবিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। তাই ঐতিহাসিক আর. সি. মজুমদার বলেন— A very important cause of Muslim success and Hindu failure was the lack of political unity in the country. 

৪. জাতিভেদ প্রথা : 

কঠোর জাতিভেদ প্রথা হিন্দুদের সামরিক সাফল্যের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করেছিল। হিন্দু সমাজের শ্রেণিবিভেদ সকল শ্রেণির জনগণকে অভিন্ন জাতীয়তাবোধের আদর্শে উদ্বুদ্ধ করতে পারেনি। নিম্নবর্ণের নির্যাতিত হিন্দুগণ শাসক শ্রেণির পরাজয়ের অংশীদার এবং শাসক পরিবর্তনে তাদের হারাবারও কিছু ছিল না।

৫. সামরিক অযোগ্যতা : 

মুহাম্মদ ঘুরীর সফলতার অন্যতম কারণ ছিল ভারত উপমহাদেশীয়দের সামরিক অযোগ্যতা। অন্যদিকে মুসলমানদের সামরিক পদ্ধতি ছিল আধুনিক ও যুগোপযোগী। তাই ভারতীয় সৈন্যরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করতে পারেনি।

৬. ক্রীতদাসদের সহায়তা : 

মুসলমান শাসকগণ কর্তৃক ক্রীতদাস প্রথার প্রবর্তন তাদের শক্তি বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছিল। ক্রীতদাসরা স্বীয় প্রতিভাবলে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হতো। ফলে মুসলমানদের মধ্যে একাধিক সুদক্ষ ক্রীতদাস শাসক ও সেনাপতির উদ্ভব ঘটেছিল। অপরপক্ষে হিন্দু সমাজে সেরূপ কোনো ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি, ফলে তাদের পরাজয় ঘটে।

৭. ধর্মীয় প্রেরণা : 

ধর্মীয় উৎসাহ উদ্দীপনাও মুসলমানদের সফলতার আর একটি কারণ ছিল। প্রতিটি অভিযানে গনীমত পাবার প্রলোভনও তুর্কিগণকে দুর্ধর্ষ দুর্জয় করে তুলেছিল। এদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার কোনো প্রকার অনুপ্রেরণা কিংবা জাতীয়তাবাদী কোনো আদর্শ উদ্দীপনা হিন্দুদের সম্মুখে ছিল না।

৮. মুসলিম বাহিনীর সামরিক শৃঙ্খলা ও যুদ্ধ কৌশল : 

হিন্দুদের চিরাচরিত যুদ্ধরীতি, হস্তিবাহিনীর ব্যবহার এবং কেন্দ্রীভূত একক অধিনায়কত্বের অভাব তাদের পতনের সর্বপ্রধান কারণ ছিল। অপরপক্ষে হিন্দুদের মন্থরগতিসম্পন্ন হস্তি বাহিনী তুর্কিদের ক্ষিপ্তগতিসম্পন্ন অশ্বারোহী বাহিনীর মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়নি। তদুপরি তুর্কিদের রণকৌশল, নতুন ধরনের অস্ত্রশস্ত্র এবং নিয়মানুবর্তিতা হিন্দু বাহিনীর বিরুদ্ধে সফলতার চাবিকাঠি প্রমাণিত হয়েছিল।

৯. যোগ্য নেতৃত্ব : 

ঐতিহাসিক ভি. ডি, মহাজন বলেন, যোগ্য নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী পরিচালিত হয়েছে বলে অতি সহজেই মুহাম্মদ ঘুরী অপেক্ষাকৃত দুর্বল হিন্দু বাহিনীর ওপর বিজয় লাভ করতে সক্ষম হন।

১০. জনসমর্থনের অভাব : 

হিন্দু রাজন্যবর্গ জনগণের কোনো সাহায্য সহযোগিতা কিংবা কোনো ধরনের সমর্থন লাভ করতে পারেনি। তারা স্ববিরোধিতা করে মুসলিম অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছিল।

১১. ত্বরিত গতিসম্পন্ন যুদ্ধযান : 

হিন্দু সামরিক বাহিনী শক্তির দিক থেকে দুর্বল ছিল। যার ফলে তারা উন্নত গতিসম্পন্ন যুদ্ধযান ব্যবহার করতে পারেনি। তাদের সামরিক শক্তি নির্ভরশীল ছিল হস্তী ও পদাতিক বাহিনীর ওপর । পক্ষান্ত রে মুসলিম বাহিনী ত্বরিত গতিসম্পন্ন যুদ্ধযান ব্যবহার করতে সক্ষম ছিল। 

মুহাম্মদ ঘুরী বিজিত রাজ্যগুলোর সমন্বয়ে এক বিরাট মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন। তাঁর এ স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হওয়ায় তিনি বিশ্বের ইতিহাসে চিরভাস্বর হয়ে আছেন। তাই Dr. A. B. M. Habibullah বলেন - There could be no two opinion's as to the place Muizuddin should occupy in history.

মুহাম্মদ ঘুরীর, মুহাম্মদ ঘুরীর, মুহাম্মদ ঘুরীর, মুহাম্মদ ঘুরীর, মুহাম্মদ ঘুরীর, মুহাম্মদ ঘুরীর, মুহাম্মদ ঘুরীর, মুহাম্মদ ঘুরীর, মুহাম্মদ ঘুরীর, মুহাম্মদ ঘুরীর

নিত্য নতুন সকল আপডেটের জন্য জয়েন করুন

Telegram Group Join Now
Our Facebook Page Join Now
Class 8 Facebook Study Group Join Now
Class 7 Facebook Study Group Join Now
Class 6 Facebook Study Group Join Now

Post a Comment