রেমিট্যান্স কী? বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের গুরুত্ব এবং প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রেরণে প্রতিবন্ধকতাসমূহ
রেমিট্যান্স কী? প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রেরণে প্রতিবন্ধকতাসমূহঃ
ভূমিকা:
রেমিট্যান্সকে ধরা হয় অন্যতম প্রভাবক হিসেবে যেসব উপাদান অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে পারে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সৃষ্টি, বেকারত্ব হ্রাসসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে রেমিট্যান্সের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে।
রেমিট্যান্স:
প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের দ্বারা তাদের আয়কৃত অর্থ বৈদেশিক মুদ্রায় দেশে প্রেরণ করা হলে তাকে বলা হয় রেমিট্যান্স। এ রেমিট্যান্স যে কোন দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের গুরুত্বঃ
জীবিকার সন্ধানে দেশের বাইরে অন্য কোন দেশে বাংলাদেশের কর্মজীবী মানুষেরা অবস্থান করে। তাদের উপার্জিত অর্থ বৈদেশিক মুদ্রায় দেশে প্রেরণ করলে তাকে রেমিট্যান্স বলে।
রেমিট্যান্স যে কোন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের গুরুত্ব নিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো:
১. জাতীয় অর্থনীতি শক্তিশালী করতে:
বৈদেশিক মুদ্রার সংরক্ষণ গড়ে তোলা, অভ্যন্তরীণ পুঁজি প্রবাহ বৃদ্ধি, সামাজিক বৈষম্য হ্রাস ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে রেমিট্যান্স অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে থাকে।
২. দরিদ্রতা দূরীকরণে:
বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি অন্যতম দারিদ্র্যপীড়িত দেশ। এদেশে অধিকাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে। প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিট্যান্স দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দরিদ্রতা দূরীকরণে ব্যাপক সহায়তা প্রদান করে থাকে।
৩. গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে:
প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিনিয়োগ হওয়ায় দেশেও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে।
বিশেষ করে আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায় মৎস্য ও পশু পালন প্রভৃতি খাতে বিনিয়োগে রেমিট্যান্স বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।
৪. বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে:
একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিনিয়োগের সাথে সরাসরি জড়িত। দেশের জনগণের হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে অর্থ না থাকলে তারা বিনিয়োগ করে না।
প্রবাসীদের নিকট হতে প্রাপ্ত রেমিট্যান্সের মাধ্যমে জনগণের ভিতরে লাভজনক খাতে বিনিয়োগের প্রতি একটা আগ্রহ জন্ম নেয়।
৫. বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিশ্চিত করত:
প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিট্যান্স বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিশ্চিত করতে সহায়তা করে থাকে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পর্যাপ্ত না হলে আমাদের অর্থনীতি স্থবির হতে বাধ্য।
কারণ প্রতি বছর আমাদের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হয় খাদ্যদ্রব্যসহ বিবিধ পণ্যসামগ্রী, যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামাল, প্রযুক্তি ইত্যাদি আমদানি করার জন্য।
রেমিট্যান্স ছাড়া আমাদের আমদানি খাতের বৈদেশিক মুদ্রার যোগান দেয়া ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াতো।
৬. অভ্যন্তরীণ পুঁজি প্রবাহ বৃদ্ধি করতে:
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পুঁজির ব্যাপক স্বল্পতা রয়েছে। পুঁজির স্বল্পতার জন্য শিল্পের প্রসার ঘটতে পারে নি। শিল্পের প্রসার ছাড়া একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান করা যায় না।
রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পুঁজি প্রবাহ অনেকটা বৃদ্ধি করেছে। প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ দিয়ে বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। এর ফলে অর্থনীতির চাকা অনেক বেশি সচল রয়েছে।
প্রবাসীদের রেমিট্যাল প্রেরণে প্রতিবন্ধকতাসমূহঃ
নিম্নে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রেরণে প্রতিবন্ধকতাসমূহ আলোচনা করা হলো : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১১ এ প্রকাশিত সরকারি তথ্য অনুযায়ী
১৯৭৬ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রায় ৭০ লক্ষ জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ লোকই অদক্ষ এবং অশিক্ষিত।
তারা কিভাবে বৈধভাবে টাকা পাঠাতে হয় তা জানে না। অনেক ক্ষেত্রে তারা অবৈধভাবে টাকা পাঠায়। এছাড়া ব্যাংকের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অবৈধ উপায়ে প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রায়
মূল্যও অধিক পাওয়া যায়। প্রবাসীদের বহুবিধ সমস্যাগুলোর ভিতরে অন্যতমগুলো হলো :
১. বৈধ উপায়ে অর্থ প্রেরণের দীর্ঘসূত্রতা;
২. বিদেশি মিশনগুলোর সহযোগিতার অভাব;
৩. বৈধ চ্যানেলে প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের পার্থক্য;
৪. বৈধ উপায়ে অর্থ প্রেরণের জন্য পর্যাপ্ত ব্যাংকিং সুবিধার অভাব; ও
৫. বিদেশে কর্মরতদের ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেনের অজ্ঞতা।
বৈধ উপায়ে প্রেরিত রেমিট্যান্স জাতীয় অর্থনীতিতে যেভাবে সরাসরি সমৃদ্ধ করে অবৈধ উপায়ে প্রেরিত রেমিট্যান্স ততটা ভূমিকা রাখতে পারবে না।
তাই রেমিট্যান্সের বৈধ প্রবাহ বৃদ্ধি ও নিশ্চিত করার জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক। যেমন:
১. যেসব দেশ থেকে বৈধ উপায়ে অর্থ প্রেরণের সুবিধা নেই বা অপ্রতুল সুবিধা রয়েছে সেসব দেশে মিশনগুলোকে উক্ত দেশের ব্যাংক বা
আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অর্থ প্রেরণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং তৎসংক্রান্ত তথ্যাদি প্রবাসী বাংলাদেশিদের সরবরাহ করতে হবে।
২. আধুনিক ব্যাংকিং প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুততর সময়ের মধ্যে দেশে অর্থ পৌছানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৩. অদক্ষ ও অশিক্ষিত শ্রমিকদের বিদেশে গমনের পূর্বে বৈধ উপায়ে অর্থ প্রেরণ সম্পর্কে প্রশিক্ষিত ও উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
৪. বৈদেশিক মুদ্রার সর্বোচ্চ বিনিময় হার নিশ্চিত করতে হবে এবং
৫. ব্যাংকিং পদ্ধতির সহজতর করে এটার প্রসার ঘটাতে হবে ।
উপসংহার :
নিত্য নতুন সকল আপডেটের জন্য জয়েন করুন
If any objections to our content, please email us directly: helptrick24bd@gmail.com