awTJ8oIyB94nutbC1bJoZn5dMRTh5VC3z3VvpzU4
Bookmark

বাজেট কী? বাজেটের গুরুত্ব, অর্থনীতিতে বাজেটের ভূমিকা

 বাজেট কী? বাজেটের গুরুত্ব, অর্থনীতিতে বাজেটের ভূমিকা

বাজেট কী ও বাজেটের গুরুত্ব

বাজেট কী? বাংলাদেশে বাজেটের গুরুত্ব, অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাজেটের ভূমিকা ও বাংলাদেশ সরকারের আয়ের উৎসসমূহ এবং বাংলাদেশ সরকারের ব্যয়ের খাতসমূহঃ


{tocify} $title={Table of Contents}


বাজেট কী?

ফরাসি শব্দ Baguette শব্দ থেকে বাজেট (Budget) শব্দটি এসেছে। এটির অর্থ হলো Leather bag বা ফোল্ডার যার মধ্যে কোনকিছু আটকে বা ধরে রাখা হয়। 
বিশ্বের প্রতিটি দেশেই আর্থিক বিলের কাগজপত্র বছরের নির্দিষ্ট দিনে অর্থ মন্ত্রী পার্লামেন্টের সামনে উপস্থাপন করেন। এটিকেই বাজেট (Budget) বলে।
“আসছে বছরের প্রস্তাবিত ব্যয় এবং প্রত্যাশিত আয়ের বিবরণ, একই সাথে বিগত বছরের প্রকৃত ব্যয় ও আয়ের হিসাব হলো বাজেট।" - J. F. Due
“বাজেট হলো সরকারি আয় এবং ব্যয়ের অনুমিত পূর্বাভাস এবং কিছু আয় ও ব্যয়ের অনুমোদন।” – Gaston Gaze.
“বাজেট হলো সরকারি আয় ও ব্যয়ের প্রাথমিক অনুমোদনপত্রের দলিলপত্র। " - Rene Stourn

বাংলাদেশে বাজেটের গুরুত্বঃ 


যে কোন দেশের উন্নয়নের জন্য বাজেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে বাংলাদেশে বাজেটের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো :

১. বাজেট বিশ্লেষণ থেকে সরকারের আয় কোন খাতে বাড়ছে এবং কোন খাতে কমছে তার হিসাব জানা যায় । 
২. বাজেট সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করে। সরকারের আয় ও ব্যয়ের সমতা সাধনে বা সমন্বয়সাধনে বাধ্য করে।
৩. বাজেট হলো উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের হাতিয়ার। পরিকল্পনায় উল্লিখিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়ন করা হয় বাজেটের মাধ্যমে। 
৪. বাজেটের মাধ্যমে সরকার দেশের রাস্তাঘাট উন্নয়ন এবং সকল ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে থাকে।
৫. বাজেট বিশ্লেষণে সরকারি ব্যয়ের ধরন জানা যায়। সরকার কোন খাতে বেশি ব্যয় করে এবং তার গুরুত্ব কেমন তা জানা যায়।
৬. বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য বাজেট দারিদ্র্য বিমোচনের অন্যতম হাতিয়ার। বাংলাদেশের বাজেট পূরণে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো সাহায্য প্রদান করে। তাই বাজেটে যে সাহায্য আসে তা দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য সহায়ক। 
৭. বাজেট এক প্রকার সংক্ষিপ্ত খসড়া। এ খসড়ায় দেশের কোন ক্ষেত্রে কি কি সমস্যা, কি করে তার সমাধান করা যাবে ইত্যাদির উল্লেখ থাকে। সে কারণে এটির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির অবস্থাসমূহ জানা যায় ।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাজেটের ভূমিকাঃ


একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে জাতীয় বাজেটের ভূমিকা বা গুরুত্ব অপরিসীম। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

১. বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা: 

বর্তমান বাজেটের একটি মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্থনীতিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা। বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন হলো বিনিয়োগের হার বৃদ্ধি করা। 
উন্নয়নশীল দেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বেসরকারি বিনিয়োগ আশানুরূপ না হওয়ায় সরকার বাজেটের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা করে ।

২. অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক: 

বাজেটে পূর্বে অনুমানকৃত আয় ও ব্যয়কে একত্রিত করে হিসাব করা হয়। এতে প্রতিটি আর্থিক বছরে কি কি কাজ করা হবে এবং সেসব কাজের জন্য কি পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
 বাজেটে সরকারের আয় ও ব্যয়কে সমন্বিতভাবে হিসাবনিকাশ করে এবং তা কি কি কাজ করা হবে এবং তার জন্য কি পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে।

৩. সরকারের রাজস্বনীতি জনগণের নিকট উন্মোচন: 

সরকার রাষ্ট্রের নাগরিকদের সামনে বাজেটকে বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে যেমন- রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র প্রভৃতির সাহায্যে উন্মোচন করে দেয়। 
এতে জনগণ সরকারের রাজস্বনীতি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করে। বাজেট নাগরিকদের সরকারের রাজস্বনীতি সম্পর্কে সম্যক অবগত করে।

৪. অর্থনৈতিক ক্ষমতা যাচাইয়ের মানদণ্ড:

 রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থা কোন পর্যায়ে এসে দাঁড়ায়, তা বাজেটের মাধ্যমে জানা যায় । 

৫. রাজস্ব আয় বৃদ্ধি: 

সরকারি খাতে সম্পদ আহরণ বৃদ্ধির প্রধান উপায় হচ্ছে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি করা। বাজেটে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির খাত উল্লেখ থাকে। 

৬. রাজস্ব ব্যয় হ্রাস : 

সরকারের রাজস্ব ব্যয় হ্রাস করার পদক্ষেপ বাজেটে উল্লেখ করা হয়।


বাংলাদেশ সরকারের আয়ের উৎসসমূহ 


বাংলাদেশ সরকারের আয়ের উৎসসমূহ নিম্নরূপ : 

১. বাণিজ্য শুষ্ক
২. মূল্য সংযোজন কর 
৩. আয়কর
৪. আবগারি শুল্ক 
৫. সম্পূরক শুল্ক
৬. ভূমি রাজস্ব
৭, স্ট্যাম্প (নন জুডিসিয়াল)
৮. সুদ
৯. রেলওয়ে
১০. ডাক বিভাগ
১১. তার ও দূরালাপনি 
১২. মাদক শুল্ক
১৩. যানবাহন কর
১৪. লভ্যাংশ ও মুনাফা
১৫. টোল ও লেভী
 ১৬. ভাড়া ও ইজারা 
১৭. জরিমানা দত্ত ও বাজেয়াপ্তকরণ
১৮. প্রশাসনিক ফি
১৯. অ-বাণিজ্যিক বিক্রয়
২০. সেবাবাবদ প্রাপ্তি
২১. অন্যান্য কর ও শুল্ক।

বাংলাদেশ সরকারের ব্যয়ের খাতসমূহঃ


বাংলাদেশ সরকারের ব্যয়ের খাতসমূহ নিম্নরূপ : 
১. প্রতিরক্ষা 
২. শিক্ষা 
৩. জনপ্রশাসন
৪. স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা 
৫. জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা 
৬. স্থানীয় সরকার ও পল্লি উন্নয়ন 
৭. বিচার ও কারা বিভাগ 
৮. বেসামরিকপূর্ত কাজ 
৯. সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম 
১০. ঋণ ও সুদ পরিশোধ
১১. অবসর ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি 
১২. ভর্তুক 
১৩. সাহায্য ও মজুরি 
১৪. জ্বালানি ও বিদ্যুৎ 
১৫. পরিবহন ও যোগাযোগ 
১৬. বিনোদন, সংস্কৃতি ও ধর্ম
১৭. সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ
১৮. আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের চাঁদা 
১৯. অপ্রত্যাশিত ব্যয় যথা: বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, খরা, অনাবৃষ্টি 
২০. কৃষি।

উপসংহার: 

উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, বাজেটের মাধ্যমে বাংলাদেশের সর্বোপরি উন্নয়ন সম্ভব। তাই এটির গুরুত্ব অপরিসীম। সুতরাং একটি দেশের উন্নয়নের জন্য বাজেটের ভূমিকা অনস্বীকার্য।


Post a Comment

Post a Comment