২য় অধ্যায়: রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও সংঘটনসমূহ (PDF) - রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
আসসালামু আলাইকুম। আজকে আমি আপনাদের শেয়ার করব রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ এর “রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও সংঘটনসমূহ” বইয়ের ২য় অধ্যায়- এর বিস্তারিত (PDF) রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও সংঘটনসমূহ ২য় অধ্যায়ের পুরো PDF ফাইল নিচে দেওয়া থাকবে।
সার্বভৌমত্ব Sovereignty
অধ্যায় সূচি:
- সার্বভৌমত্বের সংজ্ঞা
- সার্বভৌমত্বের বৈশিষ্ট্য
- সার্বভৌমত্বের বিভিন্ন রূপ
- আইনগত ও রাজনৈতিক সার্বভৌমিকতার পার্থক্য
- বাস্তব ও আইনসঙ্গত সার্বভৌমত্বের মধ্যে পার্থক্য
- অস্টিনের সার্বভৌমত্ব সংক্রান্ত মতবাদ
- অস্টিনের সার্বভৌম তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য
- অস্টিনের সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পর্কিত মতবাদের সমালোচনা
- সার্বভৌমত্বের বহুত্ববাদী মতবাদ
- বহুত্ববাদীদের ধারণা
- বহুত্ববাদের বিশ্লেষণ
- সমালোচনা
- বহুত্ববাদের মূল্যায়ন
- Part-A Brief Questions (অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন)
- D Part-B Short Questions (সংক্ষিপ্ত প্রশ্নাবলি)
- Part-C Broad Questions (রচনামূলক প্রশ্নাবলি
রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও সংঘটনসমূহ (PDF)
রাষ্ট্রের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে সার্বভৌমিকতা সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। রাষ্ট্র গঠনে যে চারটি মৌলিক উপাদান একান্তভাবে কাম্য, সার্বভৌমিকতা তাদের মধ্যে অন্যতম। একে রাষ্ট্রীয় সংগঠনের স্পর্শমণি বলা হয়।
কারণ, সার্বভৌমত্বের স্পর্শে রাষ্ট্র এমনই রূপ পরিগ্রহ করে যার নিকট সমাজের অন্যান্য সংঘ স্বেচ্ছায় মাথা নুইয়ে থাকে অর্থাৎ সার্বভৌমিকতার উপর ভিত্তি করেই রাষ্ট্রের আইন ও কর্তৃত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত হয় এবং
সার্বভৌমিকতাই রাষ্ট্রকে অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠান থেকে পৃথক সত্তার অধিকারী করেছে। অধ্যাপক মিলার (Professor Miller) বলেন, "We must recognize the sovereign state as the prime fact of political life." রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও সংঘটনসমূহ (PDF)
সার্বভৌমত্বের সংজ্ঞা
Definition of Sovereignty নিচে সার্বভৌমত্বের সংজ্ঞা সম্পর্কিত বর্ণনা দেয়া হলো :
(ক) শব্দগত অর্থ:
ল্যাটিন শব্দ 'Superanus' থেকে সার্বভৌমত্ব কথাটি এসেছে। 'Superanus' কথাটির অর্থ হলো 'Supreme', যার বাংলা অর্থ সর্বশ্রেষ্ঠ। সুতরাং ব্যুৎপত্তিগত অর্থে সার্বভৌমত্ব বলতে রাষ্ট্রের নিরঙ্কুশ, সর্বশ্রেষ্ঠ এবং অবাধ ক্ষমতাকেই বুঝায় ।
(খ) মূল সংজ্ঞা:
নিয়ম, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষা করা এবং কল্যাণমূলক কার্যাদি সম্পাদন করা হলো আধুনিক রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য। এ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য চূড়ান্ত কর্তৃত্বসম্পন্ন রাষ্ট্র আইনকানুন প্রবর্তন করে থাকে এবং প্রয়োজনীয়
ক্ষেত্রে কর্তৃত্বকে কার্যকর করার জন্য শক্তি বা বলপ্রয়োগ করার ক্ষমতা রাখে। মোটামুটিভাবে রাষ্ট্রের সার্বভৌমিকতা বলতে রাষ্ট্রের চরম বা চূড়ান্ত কর্তৃত্বকেই বুঝায়।
(গ) প্রামাণ্য সংজ্ঞা :
সার্বভৌমিকতার কোন সর্বসম্মত সংজ্ঞা উপস্থাপিত করা সম্ভব নয় কারণ সময়ের প্রেক্ষাপটে ও পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন লেখক বিভিন্নভাবে সার্বভৌমিকতার ধারণা উপস্থিত করেছেন
এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এ শব্দটিকে কেন্দ্র করে অতি প্রাচীনকাল থেকেই আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে।
ষোড়শ শতকে জ্যাঁ বোদা, সপ্তম শতকে প্রোটিয়াস এবং হবস, অষ্টাদশ শতকে রুশো ও ঊনবিংশ শতকে জন অস্টিন, জেলিনেক, ব্লাক স্টোনের আলোচনায় সার্বভৌমিকতার বিস্তৃত আলোচনা দেখা যায়।
এবার সার্বভৌমিকতা সম্বন্ধে তাদের ধারণার বহিঃপ্রকাশের মাধ্যমে এটির সংখ্যা কি তা বলতে চেষ্টা করব। নিচে তাদের সংজ্ঞা প্রদান করা হলো :
সার্বভৌমিকতা সম্বন্ধে বলতে গিয়ে ফরাসি লেখক জ্যা বোঁদা (Jean Bodin) বলেন, "Sovereignty is the supreme power of the state over citizens and subjects unrestrained by law." অর্থাৎ আইনের দ্বারা অনিয়ন্ত্রিত নাগরিক ও প্রজাদের উপর রাষ্ট্রের চরম ক্ষমতাই হলো সার্বভৌমিকতা।
অধ্যাপক গেটেন (Gettle) বলেন, "Sovereignty underlies the validity of all law and determines all international relations." অর্থাৎ সার্বভৌমিকতা সকল প্রকার আইনকে অনুমোদন দান এবং সকল প্রকার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করে।
আমেরিকার খ্যাতনামা অধ্যাপক বার্জেস (Prof. Burgess) সার্বভৌমিকতার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, "Sovereignty is the original, absolute, unlimited power over the individual subjects and over all associations of subjects."
সার্বভৌমিকতা হচ্ছে প্রত্যেক প্রজা এবং তাদের সকল প্রকার প্রতিষ্ঠানের উপর রাষ্ট্রের মৌলিক চূড়ান্ত এবং অসীম ক্ষমতা।
সার্বভৌমত্বের বৈশিষ্ট্য (ENDA Characteristics of Sovereignty)
সার্বভৌমিকতার সংজ্ঞা পর্যালোচনা করলে আমরা এর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য প্রত্যক্ষ করি। বৈশিষ্ট্যগুলো নিচে বর্ণিত হলো
১। মৌলিকতা, চরমতা ও সীমাহীনতা (Originality, Absoluteness and Unlimitation):
আইনগত দিক থেকে বলতে গেলে রাষ্ট্রের সার্বভৌমিকতা হলো মৌলিক, নিরঙ্কুশ, অপ্রতিহত, চূড়ান্ত ও সীমাহীন। অভ্যন্তরের এবং বাইরের কোন শক্তির নির্দেশে রাষ্ট্র পরিচালিত হয় না।
সাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্র প্রণীত আইনকে কোনভাবেই অস্বীকার বা অবজ্ঞা করতে পারে না। রাষ্ট্র প্রণীত আইনকে লঙ্ঘন করলে আইন ভঙ্গকারীকে কঠোর শাস্তি পেতে হয়।
এমনকি গুরুতর অপরাধের জন্য রাষ্ট্র তাকে মৃত্যুদণ্ড দিতে পারে। একমাত্র রাষ্ট্র রাষ্ট্রের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে সার্বভৌমিকতা সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য রাষ্ট্র গঠনে যে চারটি মৌলিক উপাদান
একান্তভাবে কাম্য, সার্বভৌমিকতা তাদের মধ্যে অন্যতম। একে রাষ্ট্রীয় সংগঠনের স্পর্শমণি বলা হয়। কারণ, সার্বভৌমত্বের স্পর্শে রাষ্ট্র এমনই রূপ পরিগ্রহ করে যার নিকট সমাজের অন্যান্য সংঘ স্বেচ্ছায় মাথা নুইয়ে থাকে
অর্থাৎ সার্বভৌমিকতার উপর ভিত্তি করেই রাষ্ট্রের আইন ও কর্তৃত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত হয় এবং সার্বভৌমিকতাই রাষ্ট্রকে অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠান থেকে পৃথক সত্তার অধিকারী করেছে।
অধ্যাপক মিলার (Professor Miller) বলেন, "We must recognize the sovereign state as the prime fact of political life." রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও সংঘটনসমূহ
সার্বভৌমত্বের বিভিন্ন রূপ Different Forms of Sovereignty
সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পর্কে বিভিন্ন ব্যাখ্যা এবং এর যথাযথ অবস্থান সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে গিয়ে সার্বভৌমত্ব বিভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করেছে। নিচে সার্বভৌম ক্ষমতার বিভিন্ন রূপ সন্ধে আলোচনা করা হলো:
(ক) নামসর্বস্ব সার্বভৌমত্ব ও প্রকৃত সার্বভৌমত্ব (Titular Sovereignty and Real Sovereignty):
পূর্বে বিভিন্ন দেশে রাজা বা রানীকে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী বলে মনে করা হত। বর্তমানেও কোন কোন রাষ্ট্রে নামসর্বস্ব সার্বভৌমের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়।
রাষ্ট্রের মধ্যে যদি কারও নামে সার্বভৌম ক্ষমতা ব্যবহৃত হয় কিন্তু প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী নন, সে ক্ষেত্রে তাকে নামসর্বস্ব সার্বভৌম বলে আখ্যায়িত করা হয়। ব্রিটেনের রাজা ও রানী নামসর্বস্ব সার্বভৌমত্বের প্রকৃত উদাহরণ।
ব্রিটেনের সমগ্র শাসনব্যবস্থা রাজা ও রানীর নামেই পরিচালিত হয়ে থাকে। বলা যায় ব্রিটেনের রাজা ও রানী "রাজত্ব করেন মাত্র, শাসন করেন না।” সেখানে রাষ্ট্রের সমুদয় ক্ষমতা পার্লামেন্টের হাতেই ন্যস্ত থাকে ।
পক্ষান্তরে, প্রকৃত সার্বভৌম হলেন সে ব্যক্তি বা সংগঠন, যার উপর রাষ্ট্রের প্রকৃত ক্ষমতা অর্পিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ব্রিটেনের রাজা বা রানীকে নামে মাত্র সার্বভৌম
আর ব্রিটেনের পার্লামেন্টকে প্রকৃত সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী বলা হয়। কাজেই যে বা যারা এ ক্ষমতা প্রয়োগ করেন, সে ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ হলেন প্রকৃত সার্বভৌম।
রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও সংঘটনসমূহ (PDF)
(খ) আইনগত সার্বভৌমত্ব ও রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব (Legal Sovereignty and Political Sovereignty): সার্বভৌমত্বের অপর দু'টি রূপ হচ্ছে আইনগত সার্বভৌমত্ব ও রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব। আইনগত সার্বভৌমত্ব হচ্ছে সে সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ, যার মাধ্যমে রাষ্ট্রের
আইনগত ও রাজনৈতিক সার্বভৌমিকতার পার্থক্য
Difference between Legal and Political Sovereginty
নিচে আইনগত ও রাজনৈতিক সার্বভৌমিকতার মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করা হলো :
১। সংজ্ঞাগত পার্থক্য :
আইনগত সার্বভৌমিকতা বলতে সে সার্বভৌমত্বকে বুঝায় যা আনুষ্ঠানিক আইনের মাধ্যমে বৈধতা লাভ করে এবং জনগণের নিকট থেকে স্বাভাবিক আনুগত্য লাভ করে।
অপরদিকে, আইনসম্মত সার্বভৌমের পেছনে যে সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ বিদ্যমান এবং যাকে বা যাদের আইনসম্মত সার্বভৌম স্বীকৃতি প্রদান করে, তাকে রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব বলা হয় ।
২। সুনির্দিষ্টতার দিক থেকে পার্থক্যঃ আইনগত সার্বভৌমের আইন-আদালত কর্তৃক স্বীকৃত ও কার্যকর হয় প্রত্যেক রাষ্ট্রেই সুনির্দিষ্টভাবে এ সার্বভৌমিকতা বিদ্যমান। আইনগত সার্বভৌমের ক্ষমতা অসীম, অবাধ ও চরম।
অন্যদিকে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব অনির্দিষ্ট ও অস্পষ্ট, তবে তা আইনগত সার্বভৌমকে প্রভাবিত করে। বিভিন্নভাবে রাজনৈতিক সার্বভৌমত্বের প্রকাশ ঘটে। ভোটদান, সংবাদপত্র, সভা সমিতি ইত্যাদির মাধ্যমে এ সার্বভৌমত্ব ব্যক্ত হয়।
৩। গুরুত্বের দিক থেকে পার্থক্য : গুরুত্বের দিক থেকে আইনগত ও রাজনৈতিক সার্বভৌমের পার্থক্য রয়েছে। অনির্দিষ্ট হলে রাজনৈতিক সার্বভৌমিকতার নিকট আইনগত সার্বভৌমকে নতি স্বীকার করতে হয়।
আইন প্রণয়ন কালে, শাসনকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে আইনগত সার্বভৌমিকতাকে রাজনৈতিক সার্বভৌমিকতার প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হয়।
৪। সংগঠন ও কর্তৃত্বের দিক থেকে পার্থক্য: আইনগত সার্বভৌমত্ব সংগঠিত ও নিশ্চিত কিন্তু রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব অসংগঠিত, অনিশ্চিত এবং অস্পষ্ট।
তাছাড়া আইনগত সার্বভৌমত্ব কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিসংস্থার হাতে থাকে। কিন্তু রাজনৈতিক সার্বভৌমত্বের আধার জনগণ ।
৫। সরকারি নীতির দিক থেকেঃ এককভাবে আইনগত সার্বভৌমিকতার উপস্থিতি রাষ্ট্রকে স্বৈরতন্ত্রের দিকে ঠেলে দিতে পারে। অপরদিকে রাজনৈতিক সার্বভৌমিকতা গণতন্ত্রের ভিত্তিস্বরূপ । রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও সংঘটনসমূহ (PDF
বাস্তব ও আইনসঙ্গত সার্বভৌমত্বের মধ্যে পার্থক্য Difference between De Facto and De Jure Sovereignty:
আইনগত ও রাজনৈতিক সার্বভৌমত্বের মত বাস্তব ও আইনসঙ্গত সার্বভৌমত্বের মধ্যেও কিছু কিছু পার্থক্য রয়েছে। নিচে এগুলোর উল্লেখ করা হলো:
১। সংজ্ঞাগত পার্থক্যঃ
যখন কোন রাষ্ট্রে কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টি বিপ্লব বা যুদ্ধে জয়ী হওয়ার ফলে আইনসম্মত সার্বভৌমত্বকে ক্ষমতাচ্যুত করে নিজেরাই ক্ষমতা দখল করে, তখন তাকে বাস্তব সার্বভৌম বলা হয়।
অপরদিকে, আইনসম্মতভাবে যিনি সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী তাকে আইনসম্মত সার্বভৌম বলা হয়
২। ক্ষমতার দৃষ্টিকোণ থেকেঃ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদেশ জারি করার ক্ষমতা আইনসম্মত সার্বভৌমত্বের থাকে। আইনসম্মত সার্বভৌমত্ব জনগণের আনুগত্য লাভের আইনানুগ দাবি করতে পারে।
দেশের আইনের চোখে কেবল আইনসম্মত সার্বভৌমত্বই স্বীকৃতি পায়। কিন্তু কোন নতুন কর্তৃপক্ষ বাস্তবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা চর্চা করলে তাকে বাস্তব সার্বভৌম বলা হয়। আইন নয় বরং বলই বাস্তব সার্বভৌমত্বের উৎসস্থল।
৩। আইনের দৃষ্টিকোণ থেকেঃ যদি কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী আপন শক্তিবলে অবৈধভাবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে জনগণের নিকট থেকে আনুগত্য আদায় করে, তবে সে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বাস্তব সার্বভৌম বলে বিবেচিত হয়।
অন্যদিকে আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সার্বভৌমকে আইনসঙ্গত সার্বভৌম বলে। বাস্তব সার্বভৌম আইনের দ্বারা অনুমোদিত নয়, কিন্তু আইনসঙ্গত সার্বভৌম আইনের দ্বারা অনুমোদিত । রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও সংঘটনসমূহ (PDF)
পরিশেষে বলা যায় যে, সার্বভৌম ক্ষমতার অবস্থান নির্ণয় অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার। বাস্তব সার্বভৌমত্ব অনেক দিন ক্ষমতায় থাকলে আইনসম্মত সার্বভৌমের রূপ পরিগ্রহ করে।
ফলে কেবল শক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত কর্তৃত্বের প্রতি মানুষের যে স্বাভাবিক বিরোধী মনোভাব থাকে, তা আস্তে আস্তে দূরীভূত হয়। কাজেই বাস্তব ও আইনসঙ্গত সার্বভৌমের মধ্যে পার্থক্য তত গুরুত্বপূর্ণ ও বিজ্ঞানসম্মত নয় ।
অস্টিনের সার্বভৌমত্ব সংক্রান্ত মতবাদ Austin's Theory of Sovereignty
' জন অস্টিন (John Austin) হলেন ব্রিটিশ আইনবিদ; তথা দার্শনিক। আইনসঙ্গত সার্বভৌম তত্ত্বের প্রবক্তা হিসেবে জন অস্টিনের নাম রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ইতিহাসে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে।
হস ও জ্যা বোঁদার রচনায় সার্বভৌম সম্পর্কে যে বিতর্ক ও আলোচনার সূচনা হয়েছিল তা ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। অস্টিন এ বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে আইনজ্ঞের দৃষ্টিতে সার্বভৌমত্বের সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা দিয়ে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেন।
ব্রিটিশ আইনবিদ জন অস্টিন ১৮৩২ সালে তাঁর রচিত বিখ্যাত 'Lectures on Juriesprudence' (আইনশাস্ত্রের উপর বক্তৃতা) গ্রন্থে আইন ও সার্বভৌমিকতা সম্পর্কে তাঁর ধারণা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও সংঘটনসমূহ (PDF)
অস্টিনের সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পর্কিত মতবাদের সমালোচনা Criticism of the Austinian Theory of Sovereignty:
বিভিন্ন লেখক বিভিন্নভাবে অস্টিনের সার্বভৌমত্ব মতবাদের সমালোচনা করেছেন। তাদের মধ্যে স্যার হেনরী মেইন (Sir Henry Maine), জে. ডব্লিউ গার্নার (J. W. Gamer), সিজউইক (Sidgwick),
এইচ. জে. লাস্কি (H. J. Laski) প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নিচে এ সকল লেখকদের বিভিন্নমুখী মতামতের মূল সূত্রগুলো সংক্ষেপে বর্ণিত হলো :
১। অস্টিন রাজনৈতিক সার্বভৌমত্বের ধারণাকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করেছেন। অস্টিনের সার্বভৌমত্ত্ব সংক্রান্ত মতবাদ সম্পূর্ণভাবে আইনমূলক মতবাদ। কাজেই এটাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ হতে সমালোচনা করা হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও সংঘটনসমূহ (PDF)
স্যার হেনরী মেইন, সিজউইক প্রমুখ লেখকগণ মনে করেন যে, অস্টিনের মতবাদ সম্পূর্ণ কৃত্রিম। মেইন বলেন, সার্বভৌম ক্ষমতার অবস্থান কোন নির্দিষ্ট ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের মধ্যে নির্দেশ করা যায় না। অদ্যাবধি কোন সার্বভৌম শাসক সম্পূর্ণ অপ্রতিহত ক্ষমতার অধিকারী হন নি।
অস্টিন ইংল্যান্ডের উদাহরণ দিয়ে বলেন যে, সেখানে রাজা বা রানী এবং পার্লামেন্টের সমন্বয়ের মধ্যে সার্বভৌম ক্ষমতার সন্ধান পাওয়া যায়।
মেইনের মতে, সমাজজীবনে অসংখ্য প্রভাবশালী সংস্থা ও সংঘ রয়েছে যেগুলো সার্বভৌম ক্ষমতার ব্যবহার সর্বদাই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। অস্টিন (Austin) এ সকল প্রভাবকে উপেক্ষা করেছেন।
অন্যভাবে বলা যায় যে, অস্টিন সার্বভৌম ক্ষমতার আইনগত নিকটির স্বরপই শুধু বর্ণনা করেছেন কিন্তু রাজনৈতিক সার্বভৌমত্বের প্রতি এতটুকু দৃষ্টিপাত করেন নি।
নিত্য নতুন সকল আপডেটের জন্য জয়েন করুন
If any objections to our content, please email us directly: helptrick24bd@gmail.com