অভাগীর স্বর্গ গদ্যাংশ সকল সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর - নবম ও দশম শ্রেনি | Ovaghir Shorgo Creative Questions and Answers Class 9 & Ten/SSC
অভাগীর স্বর্গ সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর :
সৃজনশীল প্রশ্ন-১: এই নিষ্ঠুর অভিযোগে গফুর যেন বাক্রোধ হইয়া গেল। ক্ষণেক পরে ধীরে ধীরে কহিল, কাহন খানেক খড় এবার ভাগে পেয়েছিলাম। কিন্তু গেল সনের বকেয়া বলে কর্তামশায় সব ধরে রাখলেন? কেঁদে কেটে হাতে পায়ে পড়ে বললাম, বাবু মশাই, হাকিম তুমি, তোমার রাজত্ব ছেড়ে আর পালাব কোথায়? আমাকে পণদশেক বিচুলি না হয় দাও। চালে খড় নেই। বাপ বেটিতে থাকি, তাও না হয় তালপাখার গোঁজাগাঁজা দিয়ে এ বর্ষাটা কাটিয়ে দেব, কিন্তু না খেতে পেয়ে আমার মহেশ যে মরে যাবে।
ক. কাঙালীর বাবার নাম কী? ১
খ. ‘তোর হাতের আগুন যদি পাই, আমিও সগ্যে যাব’ উক্তিটি ব্যাখ্যা করো। ২
গ. উদ্দীপকে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের যে সমাজচিত্রের ইঙ্গিত রয়েছে তা ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. কাঙালীর সঙ্গে উদ্দীপকের গফুরের সাদৃশ্য থাকলেও কাঙালী সম্পূর্ণরূপে গফুরের প্রতিনিধিত্ব করে না - মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ করো। ৪
১ প্রশ্নের উ.
ক. কাঙালীর বাবার নাম রসিক বাঘ।
খ. ‘তোর হাতের আগুন যদি পাই, আমিও সগ্যে যাব’- মা গভীর ধর্মবিশ্বাস থেকে কাঙালীকে এ উক্তিটি করেছিল।
মুখুয্যে বাড়ির গৃহকর্ত্রীর মৃত্যুর পর সৎকারের দৃশ্য দেখে অভাগীর ভেতরে এক ধরনের ভাবানুভ‚তির সৃষ্টি হয়। মৃতের শবযাত্রার আড়ম্বরতা ও সৎকারের ব্যাপকতা দেখে অভাগী বিস্মিত হয়। ভাবে, তার মৃত্যুর সময় স্বামীর পায়ের ধূলি নিয়ে মৃত্যুর পর পুত্র কাঙালী মুখাগ্নি করলে সেও স্বর্গে যাবে। তাই অভাগী তার সেই শেষ ইচ্ছার কথাই সন্তানের কাছে বলে।
গ. উদ্দীপকে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে বর্ণিত সামন্তবাদী সমাজচিত্রের ইঙ্গিত রয়েছে।
‘অভাগীর স্বর্গ’ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অসামান্য সৃষ্টি। এখানে অভাগী ও কাঙালীর জবানিতে বর্ণভেদ প্রথা ও দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত মানুষের গভীর আর্তনাদ ও সমাজপতিদের নির্মম নির্যাতনের চিত্র ফুটে উঠেছে। নীচু জাতের দরিদ্র অভাগীর মৃত্যুর পর তার সৎকারের জন্য সামান্য একটু কাঠ তারা পায়নি। কাঙালী জমিদারের গোমস্তা অধর রায়ের কাছে গেলে তাকে সেখান থেকে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। অন্য সমাজপতিররাও করে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য। এভাবে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে বারবার সমান্তবাদী সমাজের নির্মমতা প্রকাশ পেয়েছে।
উদ্দীপকের গফুর দারিদ্র্যের নির্মম কষাঘাতে জর্জরিত। যেখানে বাপ-বেটির অন্ন জোটে না সেখানে অবলা প্রাণী মহেশকে খাওয়াবে কী? মহেশকে বাঁচানোর জন্য পণদশেক বিচুলির জন্য গফুর কর্তামশাইয়ের পায়ে পড়ে কাকুতি মিনতি করেছে। এই কর্তাবাবুদের প্রবল প্রতিপত্তি থাকা সত্তে¡ও গফুরদের কষ্টে ও বুকফাটা আহাজারিতে তাদের প্রাণ কাঁদেনি। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য সে সমাজে সুস্পষ্ট দেয়াল তুলে দিয়েছিল। এই বৈষম্যপূর্ণ সমাজের চিত্র ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে আরো বিস্তৃতভাবে আলোচিত হয়েছে। তাই বলা যায়, সামন্তবাদের নির্মম রূপ উদ্দীপকের সাথে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের সমাজব্যবস্থাকে সাদৃশ্যময় করে তুলেছে।
ঘ. কাঙালী ও গফুর উভয়েই শোষিত শ্রেণির প্রতিনিধি হলেও উভয়ের হৃদয়-বেদনার মাঝে গুণগত পার্থক্য রয়েছে।
‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে কাঙালী নিম্নবর্ণের হওয়ার কারণে সমাজপতিরা তার মৃত মায়ের সৎকারে কাঠ ব্যবহার করতে দেয়নি। অভাগী ছেলের হাতের আগুন পেয়ে স্বর্গে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা নিম্নবর্ণের হওয়ার কারণে কাঙালী বারবার ধরনা দিয়েও একটু কাঠ জোগাড় করতে পারেনি। শেষমেশ নদীর চরে অভাগীকে পুঁতে ফেলতে হয়েছে। এতে কাঙালীর কিশোর হৃদয়ে কঠিন আঘাত লেগেছে।
উদ্দীপকে দরিদ্র গফুর ভাগে যেটুকু খড় পেয়েছিল কর্তামশাই গতবারের পাওনার অজুহাতে তা কেড়ে নিয়েছে। বাপ-বেটি না হয় তালপাখার গোঁজাগাজাঁ দিয়ে বর্ষাটা কাটিয়ে দিতে পারবে। কিন্তু মহেশের কী হবে? মহেশ যে না খেয়ে মরে যাবে। এই মানসিক দুর্ভাবনায় আচ্ছন্ন গফুর। দরিদ্র ও মুসলমান হওয়ার কারণেই তার প্রতি জমিদারদের এমন ব্যবহার। সে সমাজে যেন তার মতো গরিবের বাঁচবার অধিকারই নেই।
‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে কাঙালীকে মৃত মায়ের সৎকারের জন্য কাঠ দেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়েছে গলাধাক্কা । এমন অত্যাচার করা হয়েছে শুধু নীচু জাতের মানুষ হওয়ার অজুহাতে। মাতৃহারা আশ্রয়হীন একটি শিশুর কাকুতি মিনতি সমাজপতিদের মনে কোনো আবেদন সৃষ্টি করেনি। অন্যদিকে গরিব মুসলমান হওয়ার কারণে কর্তাবাবুরা নানা ছুতানাতায় গফুরকে বঞ্চিত করেছে। তবে এখানে গফুর ও কাঙালীর মধ্যে মানসিক যন্ত্রণা ও বেদনার গুণগত পার্থক্য বিদ্যমান। একজন মায়ের সৎকারে কাঠ জোগাড় করতে পারেনি অন্যজন একটি অবোধ প্রাণীর জন্য খড় সংগ্রহ করতে পারেনি। একজনের মাঝে ল করা যায় মাতৃভক্তি, অন্যজনের মাঝে প্রাণীপ্রীতি।
সৃজনশীল প্রশ্ন-২: দশ বছরের মা-মরা মেয়ে রাবেয়া গৃহকর্মীর কাজ করে নিজের এবং অসুস্থ বাবার অন্ন সংস্থান করে। চিকিৎসার অভাবে রাবেয়াকে ছেড়ে একদিন বাবা ইহধাম ত্যাগ করেন। দাফন কাফনের খরচ এবং কবরের জায়গা না থাকায় রাবেয়া গাঁয়ের মোড়লের সহযোগিতা চেয়ে খালি হাতে ফিরে আসে। অনন্যোপায় হয়ে বাবার মৃতদেহের পাশে বসে কাঁদতে থাকে। প্রতিবেশী মনসুর এ খবর পেয়ে রাবেয়ার পাশে দাঁড়ায় এবং যাবতীয় ব্যবস্থা করে।
ক. গ্রামের শ্মশানটি কোন নদীর তীরে অবস্থিত? ১
খ. “তোর হাতের আগুন যদি পাই বাবা, বামুন মার মত আমিও সগ্যে যেতে পাবো।”- উক্তিটি বুঝিয়ে লেখো। ২
গ. উদ্দীপকে মনসুর এবং ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের গোমস্তা অধর রায় একে অন্যের বিপরীত- ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. উদ্দীপকে ফুটে ওঠা বিষয়টি ছাড়াও ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে অন্যান্য বিষয়ের আলোচনা রয়েছে- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো। ৪
২ নং প্র. উ.
ক. গ্রামের শ্মশানটি গরুড় নদীর তীরে অবস্থিত।
খ. [১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের ‘খ’ নং উত্তর দেখো]
গ. ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে গোমস্তা অধর রায় অসহায়ের পাশে না দাঁড়ালেও উদ্দীপকের মনসুর রাবেয়াকে সহযোগিতা করে অধর রায়ের বিপরীত চরিত্রকে ধারণ করে।
‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে জমিদারের গোমস্তা অধর রায়ের মাঝে সামন্তবাদের নির্মম রূপের প্রকাশ ঘটেছে। সামন্তবাদীরা কখনো হতদরিদ্র মানুষের দুঃখ-দুর্দশা বুঝতে চেষ্টা করে না। তারা সব সময় মানুষকে শোষণ করে নিজের লাভের চিন্তায় মগ্ন থাকে। ফলে অসহায়ের আর্তনাদ তাদের কানে পৌঁছায় না। গল্পের গোমস্তা অধর রায় তেমনই একটি চরিত্র।
উদ্দীপকের মনসুর সামন্তবাদী চরিত্রের বিপরীত রূপকে ধারণ করে। কেননা সামন্তবাদীরা নিজের স্বার্থবাদী চিন্তায় মগ্ন থাকলেও মনসুর তা করেনি। সে প্রতিবেশী অসহায় রাবেয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে। রাবেয়া মৃত বাবার দাফনের জন্য যখন কোনো সহযোগিতা পায়নি তখন মনসুর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে অধর রায়কে আমরা অসহায়ের পাশে দাঁড়াতে দেখিনি। সে উল্টো সাহায্যপ্রার্থীকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের মনসুর এবং ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের গোমস্তা অধর রায় একে অন্যের বিপরীত চরিত্র।
ঘ. উদ্দীপকে ফুটে ওঠা সামন্তবাদী সমাজচিত্র ছাড়াও ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে কাঙালীর মাতৃভক্তি এবং সমাজের নীচু শ্রেণির মানুষের দুর্দশার চিত্র দরদি ভাষায় বর্ণিত হয়েছে।
‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে কাঙালী সমাজের হতদরিদ্র মানুষের প্রতিনিধি। সমাজের সামন্তবাদী মানসিকতা একটি কিশোরের হৃদয়ে কীভাবে সমাজের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে তার সকরুণ চিত্র গল্পে অঙ্কিত হয়েছে। এছাড়া কাঙালীর মাতৃভক্তি এবং মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণে সচেষ্ট এক কিশোরের কাহিনি এই গল্পের প্রতিপাদ্য।
উদ্দীপকে দরিদ্র মানুষের অসহায়ত্বের চিত্র রূপায়িত হলেও ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পটি আরও নানা দিক থেকে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। গল্পের কাঙালীর মাতৃভক্তি পাঠক হৃদয়ে যে চেতনার অবতারণা ঘটায় উদ্দীপকে তা অনুপস্থিত। তাছাড়া গল্পে মুখুয্যেবাড়ির আড়ম্বরতা ও সৎকারের ব্যাপকতা সমাজের ধনী শ্রেণির বিলাসিতার চিত্র তুলে ধরে, যা উদ্দীপকে আলোচনা করা হয়নি। উদ্দীপকে কেবল একটি অসহায় মানুষের আহাজারির চিত্র অঙ্কিত হয়েছে।
‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে প্রকাশিত হয়েছে সমাজের অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষের মর্মবেদনার স্বরূপ। তাদের প্রতি সমাজপতিদের নির্মম আচরণের পরিচয়ও তুলে ধরা হয়েছে। উদ্দীপকটি এদিক থেকে গল্পের সাথে মিলে যায়। কিন্তু গল্পে কাঙালীর মাতৃভক্তি, মানুষের ধর্মবিশ্বাস ইত্যাদি বিষয় উঠে এলেও উদ্দীপকে তেমন কিছুর উল্লেখ নেই। তাই বলা যায়, মন্তব্যটি যথার্থ।
সৃজনশীল প্রশ্ন-৩: ফটিক বারো-তেরো বছরের এক কিশোর বালক। নতুনকে জানার দুর্বার আকর্ষণ নিয়ে সে কলকাতায় আসে। কিন্তু এখানকার পরিবেশের সঙ্গে গ্রামের ফটিক খাপ খাওয়াতে পারে না। তার বারবার মনে পড়ে স্নেহময়ী ময়ের কথা। মায়ের কোলে ফিরে যাওয়ার তীব্র ইচ্ছায় সে একদিন সকল বন্ধন ছিন্ন করে। মায়ের কাছে ফিরে যাওয়ার আশায় থেকে একদিন সবার কাছ থেকে চিরদিনের জন্য ছুটি নিয়ে অসীমের পথে যাত্রা করে ।
ক. ‘অশন’ শব্দটির অর্থ কী? ১
খ. মরণকালে স্ত্রীকে পায়ের ধুলো দিতে গিয়ে রসিক কেঁদে ফেলল কেন? ২
গ. উদ্দীপকের ফটিকের সঙ্গে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের কাঙালী চরিত্রের সাদৃশ্য ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. উক্ত সাদৃশ্যের দিকটি ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের সমাজবাস্তবতাকে তুলে ধরতে সহায়তা করলেও উদ্দীপকে তা ঘটেনি। উক্তিটি বিশ্লেষণ করো। ৪
৩ নং প্র. উ.
ক. ‘অশন’ শব্দটির অর্থ হলো খাদ্যদ্রব্য।
খ. অভাগীকে পায়ের ধুলা দিতে গিয়ে তার প্রতি নিজের অবহেলার অনুশোচনায় রসিক দুলে কেঁদে ফেলল।
রসিক দুলে অভাগীকে ফেলে আরেকটা বিয়ে করে অন্য গ্রামে চলে গিয়েছিল। কিন্তু অভাগী ছেলেকে বুকে জড়িয়ে একাই গ্রামে থেকে যায়। মৃত্যুকালে সে সেই স্বামীর পায়ের ধুলা নিতেই উদগ্রীব হয়ে ওঠে। কিন্তু যে স্ত্রীকে রসিক দুলে ভাত-কাপড় দেয়নি; কখনো যার খোঁজখবর নেয়নি তার এই পতিভক্তি রসিক দুলেকে অনুশোচনায় পোড়ায়। এজন্য পায়ের ধুলা দিতে গিয়ে সে গভীর কষ্টে কেঁদে ফেলে।
গ. মাতৃভক্তির দিক থেকে উদ্দীপকের ফটিকের সঙ্গে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের কাঙালীর সাদৃশ্য রয়েছে।
‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের কাঙালী পনেরো বছরের এক কিশোর। এ পৃথিবীতে মা তার একমাত্র আপনজন। মাকে সে ভালোবাসে প্রচণ্ডভাবে। তাই মায়ের অসুস্থতার সময় সে ব্যাকুল হয়ে কবিরাজের কাছে গিয়েছে। এমনকি মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে গিয়ে জমিদারের গোমস্তা দ্বারা লাঞ্ছনা ও অত্যাচারের শিকার হয়েছে।
উদ্দীপকের ফটিক গ্রামের এক দুরন্ত কিশোর। মাকে গভীরভাবে ভালোবাসে বলেই মাকে ছেড়ে শহরে এসে সে থাকতে পারেনি। বারবার মায়ের কাছে ফিরে যেতে চেয়েছে। মায়ের কাছে ফিরে যাওয়ার তীব্র ইচ্ছায় সে একদিন সকল বন্ধন ছিন্ন করে পৃথিবী থেকে চলে যায়। মায়ের প্রতি ভালোবাসার দিক থেকে উদ্দীপকের ফটিক ও ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের কাঙালীর চরিত্রটি সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ. মায়ের কথা রাখতে গিয়ে কাঙালি সমাজের জাতিভেদ প্রথার নিষ্ঠুরতাকে উপলব্ধি করেছে। কিন্তু উদ্দীপকে তেমন কোনো চিত্র আমরা পাই না।
‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে পনেরো বছরের কিশোর কাঙালী। এ পৃথিবীতে তার মা ছাড়া আর আপন কেউ ছিল না। মা ছিল তার সব কিছু। মায়ের মৃত্যুর পর মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে গিয়ে কাঙালী সামন্তবাদের নির্মম রূপ দেখে। মায়ের প্রতি অগাধ ভালোবাসার সূত্র ধরেই সে পরিচিত হয় স্বার্থমগ্ন সমাজব্যবস্থার নির্মমতার সঙ্গে।
উদ্দীপকের ফটিক অত্যন্ত মাতৃভক্ত। মাকে ছেড়ে শহরে এসে সে একা হয়ে যায়। তার কিশোর হৃদয় মাকে দেখার জন্য, মাকে কাছে পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। মাকে দেখার তীব্র ইচ্ছায় একদিন সে পৃথিবীর সঙ্গে সকল বন্ধন ছিন্ন করে স্বর্গে পাড়ি জমায়। ‘অভাগীর স্বগর্’ গল্পে মায়ের জন্য এমন গভীর অনুরাগের কথা বলা হলেও গল্পে বর্ণিত সমাজব্যবস্থার ঘৃণ্য মনোভাবের চিত্র প্রকাশ পায়নি উদ্দীপকে।
গল্পের কাঙালী মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে গিয়ে দেখেছে সমাজের বিত্তবানরা কতটুকু নির্মম হয়। গল্পকার কাঙালীর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আমাদের সামনে জাতভেদ ও মানুষের সংকীর্ণ মানসিকতার চিত্র তুলে ধরেছেন। ছেলের হাতের আগুনটুকু পাবেন- এইটুকুই ছিল কাঙালীর মায়ের অন্তিম আকাক্সক্ষা। অথচ সামান্য কাঠের অভাবে কাঙালী পারল না মায়ের কথা রাখতে। রক্ষণশীল হিন্দু সমাজের ঘৃণ্য জাতিপ্রথা আর স্বার্থান্ধ মানুষের অমানবিকতার শিকার হয় সে পদে পদে। অল্প সময়ের ব্যবধানেই বুঝে যায় তাদের মতো হতদরিদ্র, নীচু জাতির মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার কোনো মূল্য নেই এই সমাজে। কিন্তু উদ্দীপকে রয়েছে কেবল মায়ের জন্য গভীর মমত্ববোধের কথা। সে মমতার টানে ফটিক নিজের জীবন বিসর্জন দেয়। সমাজের বিশেষ কোনো অসংগতির চিত্র উদ্দীপকে নেই। তাই বলা যায়, আলোচ্য উক্তিটি যথার্থ।
সৃজনশীল প্রশ্ন-৪: মালেক সাহেবের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির দেখাশোনা করেন সামাদ। প্রতিবছর তিনি মালিকের প থেকে ভাড়াটিয়াদের মাঝে ঈদে-পূজায় বস্ত্র ও খাদ্য বিতরণ করেন। প্রয়োজনে দারোয়ানকে ভাড়াটিয়াদের মেয়ের বিয়ে, ছেলেমেয়েদের স্কুলে আনা-নেওয়া, বাজার করা, দাফন-কাফনসহ সব কাজে ব্যবহার করান।
ক. কাঙালীর মা কোন জাতের মেয়ে ছিল? ১
খ. দারোয়ান রসিক দুলেকে চড় মারল কেন? ২
গ. উদ্দীপকের সামাদ ও ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের জমিদারের গোমস্তার বৈসাদৃশ্য দেখাও। ৩
ঘ. গল্পের উল্লিখিত গ্রামের পরিস্থিতি যদি উদ্দীপকের সাথে মিলতো তাহলে গল্পের পরিণতি এমন হতো না-উক্তিটি বিশ্লেষণ করো। ৪
৪ নং প্র. উ.
ক. কাঙালীর মা দুলে জাতের মেয়ে ছিল।
খ. রসিক দুলে অনুমতি ছাড়া বেলগাছ কাটতে যাওয়ায় দারোয়ান তাকে চড় মারল।
অভাগী মৃত্যুর সময় কাঙালীর হাতের আগুন পাওয়ার অভিলাষ ব্যক্ত করে গেছে। তার সৎকারের জন্য কাঠ প্রয়োজন ছিল। রসিক দুলে স্ত্রীর শেষ ইচ্ছা পূরণের জন্য বাড়ির উঠানের বেলগাছটা তাই কাটতে গিয়েছিল। কিন্তু সামন্তবাদী নিয়মে জমিদারের অনুমতি ছাড়া সে গাছ কাটতে পারবে না। এমনকি নিজ বাড়ির আঙিনায় নিজ হাতে পোঁতা হলেও নয়। এজন্য বেলগাছটি কাটতে গেলে দারোয়ান তাকে চড় মেরে বসে।
গ. মানুষের প্রতি সহানুভ‚তি প্রদর্শনের দিক থেকে উদ্দীপকের সামাদের সাথে জমিদারের গোমস্তার চরিত্র পুরোপুরি বিপরীত।
‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে বর্ণিত কাঙালীর মা মারা গেলে তাকে দাহ করার জন্য গাছের আবেদন জানাতে কাঙালী ছুটে যায় জমিদার গোমস্তার বাড়িতে। একটা বেলগাছের জন্য অনেক অনুরোধ করে গোমস্তাকে। গাছটি ছিল কাঙালীর মায়ের হাতে লাগানো। অথচ কাঙালী তাও পেল না ঘুষ দিতে না পারায়। গোমস্তা অধর রায় গাছ তো দিলই না উল্টো কাঙালীকে গালমন্দ ও প্রহার করে তাড়িয়ে দিল। কাঙালী নীচু জাতের জানার পর তার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করল।
উদ্দীপকে বর্ণিত সামাদ পরোপকারী ব্যক্তি। তার মধ্যে কোনো ধর্মীয় ভেদাভেদ ছিল না। ভাড়াটিয়াদের যেকোনো কাজে সে এগিয়ে আসত। বাড়িওয়ালার প্রতিনিধি হলেও সে মনুষ্যত্ববোধের অধিকারী ছিল। কিন্তু গল্পের জমিদারের গোমস্তা ছিল শোষক ও বর্ণবাদী শ্রেণির অন্তর্গত।
ঘ. ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে বর্ণিত গ্রামের মানুষরা যদি উদ্দীপকের সামাদের মতো মানবতাসম্পন্ন হতো তবে গল্পের পরিণতি এমন দুঃখভরা হতো না।
‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে মুখুয্যের স্ত্রীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আতিশয্য দেখে কাঙালীর মা স্বপ্ন দেখে স্বর্গে যাওয়ার। তারও ইচ্ছে জাগে ছেলের হাতের মুখাগ্নি পাওয়ার। কাঙালীর মা ছিল তথাকথিত দুলে জাতের মেয়ে। নীচু জাতের ধোঁয়া তুলে কেড়ে নেওয়া হয় তার স্বপ্ন। কাঙালী যখন মায়ের ইচ্ছে পূরণে জমিদার বাড়িতে কাঠ চাইতে যায় তখন হেনস্তা হতে হয় তাকে। একদিকে জমিদারের গোমস্তার অসহযোগিতা অন্যদিকে অন্ধ সমাজ। কাঙালীর মায়ের অন্তিম ইচ্ছা আর পূরণ হয় না।
উদ্দীপকের সামাদ মানবিকবোধে উজ্জ্বল। মালেক সাহেব তাঁকে সমস্ত সম্পত্তি দেখাশোনার দায়িত্বে নিয়োজিত করেছেন। কিন্তু সামাদ সেই ক্ষমতার অপব্যবহার করেন না। বরং ভাড়াটিয়াদের নানা কাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। তাঁর অধীনে থাকা দারোয়ানকেও নানা সেবামূলক কাজে লাগান। কিন্তু ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে বর্ণিত গ্রামের চিত্র এর তুলনায় সম্পূর্ণই বিপরীত।
‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে দেখা যায় সামন্তবাদের নির্মম রূপ। ক্ষমতার অহংকারে জমিদারের গোমস্তা হয়ে ওঠে মহাপ্রতাপশালী। মানুষকে সে মানুষ বলে মনে করে না। এমনকি তার চাকর ও দারোয়ানরাও ক্ষমতার অপব্যবহার করে। সমাজে জাতিভেদপ্রথার কারণে তথাকথিত নীচু জাতের মানুষের সাথে জন্তুর মতো আচরণ করা হয়। কিন্তু উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসার উদাহরণ। মানুষের সেবা করার ক্ষেত্রে সামাদ বিবেচনা করেননি কে হিন্দু কে মুসলিম। মালিক অনুপস্থিত থাকলেও তার সুযোগ নেননি তিনি। বরং নিজের অধীন কর্মকারীদের ভালো কাজে ব্রতী করেছেন। গল্পে বর্ণিত গ্রামের মানুষেরা এমন মনোভাব পোষণ করলে মূল্য পেত কাঙালীর মায়ের অন্তিম ইচ্ছা। কিশোর কাঙালীকে বরণ করতে হতো না নির্মম মানসিক ও শারীরিক যাতনা। গোটা সমাজই হতো মানবিক, সুন্দর।
সৃজনশীল প্রশ্ন-৫: মন্টু বাসে বাসে চকলেট বিক্রি করে। তার বোনের বিয়ের জন্য বেশ কিছু টাকার প্রয়োজন। সেদিন বাসে এক ভদ্রলোকের হাত ধরে দুটো চকলেট নেওয়ার জন্য অনুনয় করে মন্টু। “এই ছোটলোকের বাচ্চা, আমার গায়ে হাত দিলি কেন?” বলেই লোকটি মন্টুর গলায় সজোরে ধাক্কা দেয়। পড়ে গিয়ে মন্টু মাথায় ভীষণ আঘাত পায়। তিন মাস ধরে জমানো সব টাকা খরচ হয়ে যায় চিকিৎসায়। বোনটাকে আর বিয়ে দেওয়া হয় না তার।
ক. কাঙালীর বাবা কোন গাছ কাটতে উদ্যত হয়েছিল? ১
খ. ‘দুলের মড়ার কাঠ কী হবে শুনি?’- অধর রায় এ কথা কেন বললেন? ২
গ. উদ্দীপকে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের যে দিকটি ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. উদ্দীপকের মণ্টুর স্বপ্নভঙ্গের কারণটি ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের আলোকে বিশ্লেষণ করো। ৪
৫ নং প্র. উ.
ক. কাঙালীর বাবা বেলগাছ কাটতে উদ্যত হয়েছিল।
খ. সামন্তবাদী চেতনার ধারক হওয়ায় অধর রায় প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন।
‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে সামন্তবাদী সমাজবাস্তবতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে কাঙালী মায়ের মৃতদেহ সৎকারের জন্য কাঠ পাওয়ার আশায় বিভিন্ন জায়গায় ধরনা দেয়। কিন্তু সবাই তাকে নিরাশ করে। কারণ কাঙালীরা দুলে। আর দুলেরা নীচু জাত হওয়ায় সমাজপতিদের মতে তাদের মড়া পোড়ানোর প্রয়োজন নেই। এমন বর্ণবাদী চেতনা পোষণ করার কারণেই অধর রায় কাঙালীকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেন।
গ. উদ্দীপকে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের জাতভেদ প্রথার দিকটি ফুটে উঠেছে।
‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে আমরা ল করি সমাজের উঁচু শ্রেণির মানুষের মৃত্যুর পর তাদের সৎকার হয় মহা আয়োজনে। কিন্তু দরিদ্র ও নীচু জাত হওয়ার কারণে অভাগীর মুখাগ্নি করার জন্য তার ছেলে কাঙালী কাঠ সংগ্রহ করতে পারেনি। বরং কাঠ সংগ্রহ করতে গেলে কাঙালী ও তার বাবা অপমানিত ও নিগৃহীত হয়।
উদ্দীপকে বর্ণিত মন্টু বোনের বিয়ে দেওয়ার জন্য বাসে বাসে চকলেট বিক্রি করে। বাসে এক ভদ্রলোকের হাত ধরে অনুনয়-বিনয় করলে ‘কথিত’ ভদ্রলোকটি তাকে ছোটলোক বলে অপমান ও তিরস্কার করে। শুধু তাই নয়, সজোরে গলাধাক্কা দিলে মন্টু পড়ে গিয়ে মারাত্মক আহত হয়। মন্টুকে নিজের চিকিৎসায় জমানো সব টাকা খরচ করতে হয়। কথিত ভদ্রলোকটির আচরণ ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের সামন্ত জমিদারের মতোই অমানবিক ও নিষ্ঠুর। উদ্দীপকে ভদ্রলোকটির কারণে মন্টু তার অসহায় অবস্থা থেকে আরো অসহায় হয়ে পড়ল। তার দরিদ্রতার জন্য ওই লোকটি তাকে ছোটলোকের বাচ্চা বলে গালি দিয়েছিল। ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের কাঙালী তার মায়ের অন্তিম ইচ্ছে পূরণ করতে পারেনি জমিদার ও তার লোকদের কারণে। নীচু জাত বলে মায়ের মুখাগ্নি পর্যন্ত করতে পারেনি। উল্টো তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নিগৃহীত হতে হয়েছে। তাই উদ্দীপকে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের জাতভেদ প্রথার দিকটি উল্লিখিত হয়েছে।
ঘ. ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে উল্লিখিত জাতভেদ প্রথার নির্মমতার শিকার হওয়াই মন্টুর স্বপ্নভঙ্গের কারণ।
সমাজে উঁচু-নীচু আর জাতভেদ প্রথা কীভাবে মানুষের জীবনকে বিষিয়ে তোলে, কীভাবে নিষ্ঠুরতা আর অপমান বিষণœতার জন্ম দেয়, তার প্রমাণ ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্প। নীচু জাত বলে মায়ের মুখাগ্নি করার কাঠ পর্যন্ত সংগ্রহ করতে পারেনি কাঙালী। অভাগীর হাতে লাগানো উঠানের বেলগাছ কাটতে গেলে কাঙালীর বাবার গালে কষে চড় মারে জমিদারের লোক। কাঠের জন্য কাঙালী জমিদারের গোমস্তার কাছে ছুটে গেলেও তার কপালে জুটেছে গালি আর লাঞ্ছনা। মৃত মায়ের অন্তিম ইচ্ছে পূরণ করতে না পারার যন্ত্রণায় সে দগ্ধ হয়েছে।
সমাজে গরিব দুঃখী অনাথদের দেখে নাক সিঁটকানো, অবজ্ঞা বা দুর্ব্যবহার করার অভ্যাস কারো কারো মাঝে বিদ্যমান। উদ্দীপকে বর্ণিত ভদ্রলোকের মাঝে যেমনটা রয়েছে। অসহায় হয়ে মন্টু হাত ধরে দুটো চকলেট নেওয়ার আবদার করায় তাকে গলা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে লোকটি যে পশুত্বের পরিচয় দিয়েছে তা নিন্দনীয় ও বড় ধরনের অপরাধ।
কাঙালী তার দুঃখীনি মায়ের অন্তিম ইচ্ছে পূরণ করতে পারেনি সমাজের মিথ্যে আভিজাত্যের অহংকারে নিমগ্ন কিছু নির্দয় মানুষের কারণে। বংশগৌরব ও আভিজাত্য তাদের পশুর স্তরে নিয়ে গিয়েছে। কাঙালীর ভেতরের কষ্ট ও আর্তনাদ তাদের বিবেককে এতটুকু নাড়া দিতে পারেনি। একইভাবে উদ্দীপকে বর্ণিত ভদ্রলোক নামধারী লোকটির নিষ্ঠুরতায় মন্টুর স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। বোনের বিয়ে দূরে থাক তার জীবন নিয়েই সংকটে পড়ে সে। এ ধরনের নরপিশাচরাই সমাজে নানা অনাচারের সৃষ্টি করে থাকে। জাতিভেদ প্রথার কারণে একদিকে কাঙালী তার মায়ের শেষ ইচ্ছে পূরণে ব্যর্থ হয়েছে অন্যদিকে মন্টুরও স্বপ্ন ভেঙেছে তার বোনকে বিয়ে দিয়ে সুখী করতে না পারায়।
সৃজনশীল প্রশ্ন-৬: জাত গেল, জাত গেল বলে
একি আজব কারখানা।
সত্য কাজে কেউ নয় রাজি,
সবই দেখি তা না না না।
ক. কাঙালী কোন জাতের অন্তর্ভুক্ত? ১
খ. কাঙালী তার মাকে আগুন দিতে পারল না কেন? ২
গ. উদ্দীপকটি কোন দিক থেকে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের প্রতিনিধিত্ব করে? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. “উদ্দীপকটির মূলভাব ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের পূর্ণাঙ্গ ভাবের প্রকাশক”। মতামত দাও। ৪
৬ নং প্র. উ.
ক. কাঙালী দুলে জাতের অন্তর্ভুক্ত।
খ. সামন্তবাদী সমাজব্যবস্থার নিষ্ঠুরতার কারণে কাঙালী তার মাকে আগুন দিতে পারল না।
কাঙালীর মায়ের শখ ছিল মৃত্যুর পর মুখুয্যে বাড়ির গিন্নির মতো ছেলের হাতের আগুন পাওয়ার। কিন্তু তার মৃত্যুর পর ছেলে কাঙালী মায়ের সেই আশা পূরণ করতে পারে না। কাঙালীরা নীচু জাতের মানুষ হওয়ায় সামন্তবাদী সমাজে মৃতদেহ সৎকারে আগুন দেওয়ার নিয়ম নেই। তবুও কাঙালী নানাভাবে থাকে আগুন দেয়ার জন্য কাঠ সংগ্রহের চেষ্টা করলে সকলেই তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে। জমিদারের গোমস্তা ঘুষ চায়। অবশেষে বাধ্য হয়ে কাঙালীরা অভাগীকে নদী চড়ায় পুঁতে ফেলে।
গ. উদ্দীপকের ভাবটি জাতভেদ প্রথা পালনের দিক থেকে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পকে প্রতিনিধিত্ব করে।
‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে বর্ণিত অভাগী মুখুয্যে বাড়ির গৃহকর্ত্রীর মৃত্যুর পর সৎকারের দৃশ্য দেখে ভেবেছিল মৃত্যুর পর গেলে পুত্র মুখাগ্নি করলে সেও স্বর্গে যাবে। কাঙালী বাবাকে হাজির করতে পারলেও পারেনি মায়ের সৎকারের কাঠ জোগাড় করতে। পারে নি জাতভেদ প্রথার নিষ্ঠুরতার শিকার হওয়ায়।
উদ্দীপকের রচয়িতা জাতভেদ প্রথা দেখে বিস্মিত হয়েছেন। মানুষ জাতভেদ প্রথার বশবর্তী হয়ে যে কর্মকাণ্ড করে তাকে হাস্যকর বলে জ্ঞান করেছেন। মানুষ তার সত্য কাজ বা কর্তব্য কাজকে ফলে রেখে অনর্থক বা অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। জাতভেদ প্রথায় মানুষ মানুষকে হেয়প্রতিপন্ন করে। এই জাতভেদ প্রথার কারণেই গল্পের কাঙালীর কচি মন ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। তাঁর মমতাময়ী মাকে যথাযথভাবে শেষকৃত্য না করে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে। তাই উদ্দীপকের ভাবটি জাতভেদ প্রথা পালনের দিক থেকে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পকে প্রতিনিধিত্ব করে।
ঘ. উদ্দীপক ও ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের মূলকথা সমাজে উঁচু-নীচু জাতভেদ প্রথার ভয়াবহতার দিকটি তুলে ধরা। আলোচ্য উদ্দীপক তাই অভাগীর স্বর্গ গল্পের পূর্ণাঙ্গ ভাবের প্রকাশক।
‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে গরিব-দুঃখী নীচু শ্রেণির এক নারী অভাগী। উঁচু জাতের মুখুয্যেবাড়ির গৃহকর্ত্রীর মৃত্যুর পর তার সৎকার করা হয়েছিল আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে। নীচু জাতের বলে অভাগীকে তা দূরে দাঁড়িয়ে দেখতে হয়। স্বর্গপ্রাপ্তির আশায় অভাগী তার ছেলে কাঙালীকে বলেছিল তাকে মৃত্যুর পর মুখাগ্নি করতে। প্রচলিত সমাজব্যবস্থার নিয়ম ভেঙে কাঙালী নীচু জাতের হয়ে মায়ের সৎকার করতে পারেনি, পারেনি মুখাগ্নি করতে।
উদ্দীপকে জাতভেদ নিয়ে জীবনের চরম সত্যকে তুলে ধরা হয়েছে। যারা জাত গেল জাত গেল বলে চিৎকার করে তারা কখনও সমাজের মঙ্গল চিন্তা করতে পারে না। তারা জাতের নামে সমাজকে বহুধা বিভক্ত করে রাখে। তারা মনুষ্যত্ব ও মানসিকতাকে বিকশিত করতে দেয় না। তাই সমাজে এত ভাঙন, বিপর্যয় ও বিশৃঙ্খলা।
একই রক্তমাংসের মানুষ হয়েও মানুষে মানুষে অসংখ্য ভেদাভেদ। একদল আরেক দলকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে দূর দূর করে। ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে দেখি একটি সামান্য সৎকার করার কাজ নিয়ে কত বিপত্তি ঘটে গেল। নিজের বাড়ির উঠানের বেলগাছ কাটতে দিল না শক্তির উন্মত্ততায় আর বংশের আভিজাত্যতায়। নীচু জাতের মানুষের যেন ধর্মীয় ও মানবিক অধিকার নেই। উদ্দীপকেও একই ভাবে জাতভেদ প্রথার কথা তুলে ধরা হয়েছে। তাই উদ্দীপকটির মূলভাব ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের পূর্ণাঙ্গ ভাবের প্রকাশক।
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
১. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর : শরৎচন্দ্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৭৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
২. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট. উপাধি লাভ করেন কত সালে?
উত্তর : শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট. উপাধি লাভ করেন ১৯৩৬ সালে।
৩. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কত সালে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর : শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৯৩৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
৪. ঠাকুরদাস মুখুয্যের বর্ষীয়সী স্ত্রী কয়দিনের জ্বরে মারা গেলেন?
উত্তর : ঠাকুরদাস মুখুয্যের বর্ষীয়সী স্ত্রী সাত দিনের জ্বরে মারা গেলেন।
৫. ঠাকুরদাস মুখুয্যের কয় ছেলে?
উত্তর : ঠাকুরদাস মুখুয্যের চার ছেলে।
৬. ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে বর্ণিত শ্মশান কোন নদীর তীরে অবস্থিত?
উত্তর : ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে বর্ণিত শ্মশান গরুড় নদীর তীরে অবস্থিত।
৭. কাঙালীর বয়স কত?
উত্তর : কাঙালীর বয়স পনেরো বছর।
৮. কাঙালীর মায়ের নাম কী?
উত্তর : কাঙালীর মায়ের নাম অভাগী।
৯. অভাগীর স্বামীর নাম কী?
উত্তর : অভাগীর স্বামীর নাম রসিক দুলে।
১০. কাঙালী কিসের কাজ শিখতে আরম্ভ করেছে?
উত্তর : কাঙালী বেতের কাজ শিখতে আরম্ভ করেছে।
১১. অভাগী কাকে রূপকথা বলতে চায়?
উত্তর : অভাগী তার ছেলেকে রূপকথা বলতে চায়।
১২. কার হাতের আগুন পেলে অভাগী স্বর্গে যেতে পারবে বলে মনে করে?
উত্তর : কাঙালীর হাতের আগুন পেলে অভাগী স্বর্গে যেতে পারবে বলে মনে করে।
১৩. কাঙালী ভিন গ্রামের কবিরাজকে কয় টাকা প্রণামী দিল?
উত্তর : কাঙালী ভিন গ্রামের কবিরাজকে এক টাকা প্রণামী দিল।
১৪. কাঙালী কী বাঁধা দিয়ে কবিরাজকে প্রণামী দিল?
উত্তর : কাঙালী ঘটি বাঁধা দিয়ে কবিরাজকে প্রণামী দিল।
১৫. কাঙালীর আনা বড়িগুলো অভাগী কোথায় ফেলে দিল?
উত্তর : কাঙালীর আনা বড়িগুলো অভাগী চুলায় ফেলে দিল।
১৬. গ্রামে কে নাড়ি দেখতে জানত?
উত্তর : গ্রামে ঈশ্বর নাপিত নাড়ি দেখতে জানত।
১৭. অভাগী কাঙালীকে কার কাছ থেকে আলতা চেয়ে আনতে বলল?
উত্তর : অভাগী কাঙালীকে নাপতে বৌদির কাছ থেকে আলতা চেয়ে আনতে বলল।
১৮. অভাগী কার পায়ের ধুলো নিতে চায়?
উত্তর : অভাগী রসিক দুলের পায়ের ধুলো নিতে চায়।
১৯. রসিক কী গাছ কাটতে যায়?
উত্তর : রসিক বেলগাছ কাটতে যায়।
২০. ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে গ্রামের স্থানীয় কাছারির কর্তা কে?
উত্তর : ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে গ্রামের স্থানীয় কাছারির কর্তা গোমস্তা অধর রায়।
২১. ‘অন্তরীক্ষ’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : ‘অন্তরীক্ষ’ শব্দের অর্থ আকাশ।
২২. অভাগী কোন স¤প্রদায়ের নারী?
উত্তর : অভাগী দুলে স¤প্রদায়ের নারী।
২৩. কাঙালীকে কাছারি থেকে গলাধাক্কা দিল কে?
উত্তর : কাঙালীকে কাছারি থেকে গলাধাক্কা দিল পাঁড়ে।
২৪. অধর রায় গাছের দাম কত চায়?
উত্তর : অধর রায় গাছের দাম পাঁচ টাকা চায়।
২৫. ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে বর্ণিত বেলগাছটি কার হাতের পোঁতা?
উত্তর : ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে বর্ণিত বেলগাছটি অভাগীর হাতের পোঁতা।
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
১. “সে যেন একটা উৎসব বাধিয়া গেল।”- লেখক এ কথা বলেছেন কেন?
উত্তর : ঠাকুরদাস মুখুয্যের স্ত্রীর মৃত্যুতে বাড়িতে স্বজনদের উপস্থিতিতে সৃষ্ট অবস্থা বর্ণনায় লেখক প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন।
‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে ঠাকুরদাস মুখুয্যে একজন পয়সাওয়ালা লোক। তার স্ত্রীর মৃত্যুতে বাড়িতে অনেক লোকজন উপস্থিত হয়েছে। ছেলে-মেয়ে, নাতিপুতি এলাকার মানুষ সকলেই বর্ষীবয়সী গিন্নির লাশ দেখতে এসেছে। আর এত মানুষের উপস্থিতিতে বাড়ি গমগম করছিল। তাই লেখক বলেছেন, “সে যেন একটা উৎসব বাধিয়া গেল।”
২. অভাগী একটু দূরে থেকে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া দেখল কেন?
উত্তর : অভাগী ছোট জাতের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় একটু দূরে থেকে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া দেখল।
আভাগী ছিল দুলে সম্প্রদায়ের নারী। তাদেরকে সমাজে ছোট জাত মনে করা হয়। সমাজের সৃষ্ট এই কুসংস্কারের কারণে ছোট জাতের লোকেরা কখনো উঁচু জাতের মানুষের কাছে আসতে সাহস করে না। গল্পের অভাগী ছিল নীচু জাতের আর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হচ্ছিল উঁচু জাতের মানুষের। তাই অভাগী একটু দূরে দাঁড়িয়ে থেকে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া দেখল।
৩. বামুন ঠাকরুণের শ্মশান সৎকারের শেষটুকু দেখা অভাগীর ভাগ্যে আর ঘটল না কেন?
উত্তর : কাঙালীর সাথে বাড়ি ফিরে আসায় বামুন ঠাকরুণের শ্মশান সৎকারের শেষটুকু দেখা অভাগীর ভাগ্যে আর ঘটল না।
অভাগী ঠাকুরদাস মুখুয্যের স্ত্রীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া দূর থেকে দেখছিল। সে ছোট জাতের হওয়ায় নিজেরও অমন করে স্বর্গে যাওয়ার বাসনা নিয়ে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া দেখছিল। কিন্তু শেষবেলা কাঙালী এসে তাকে ডাকায় এবং ক্ষুধার কথা বলায় তাকে তখনই বাড়িতে ফিরতে হয়। তাই শ্মশান সৎকারের শেষটুকু তার আর দেখা হয় না।
৪. কাঙালীর মায়ের নাম অভাগী রাখা হয়েছিল কেন?
উত্তর : জন্মের সময় মা মরে যাওয়ায় কাঙালীর মায়ের নাম অভাগী রাখা হয়েছিল।
অভাগীর বাবা অভাগীর এই নাম রেখেছিলেন। অভাগীর যখন জন্ম হয় তখন তার মা মারা যায়। ফলে বাবা রাগ করে মা-মরা মেয়ের নাম রাখেন অভাগী। মূলত মা-মরা মেয়ে হওয়ার কারণেই তার নাম অভাগী রাখা হয়েছিল।
৫. কাঙালীর ভাত রান্না দেখে অভাগীর চোখ ছলছল করে উঠল কেন?
উত্তর : কাঙালীর ভাত রান্নার অপটুতা দেখে ছেলের প্রতি মমতায় অভাগীর চোখ ছলছল করে উঠল।
অভাগী অসুস্থ হওয়ায় সে বিছানা থেকে উঠতে পারছিল না। তাই ছেলে কাঙালীকে ভাত রান্না করে নিতে বলে। কাঙালী অদ হাতে রাঁধতে গিয়ে নানা অসুবিধার সম্মুখীন হয়। ফেন ঝাড়তে পারে না, ভাত বাড়তে পারে না। এমন অপটুতা দেখে অভাগীর মায়া হয়। তাই তার চোখ ছলছল করে ওঠে।
৬. ঈশ্বর নাপিত অভাগীর নাড়ি দেখে মুখ গম্ভীর করল কেন?
উত্তর : অভাগীর অবস্থা ভালো না হওয়ায় ঈশ্বর নাপিত অভাগীর নাড়ি দেখে সে মুখ গম্ভীর করল।
অভাগী বেশ কয়েক দিনের জ্বরে শয্যাশায়ী। তার অবস্থার ক্রমেই অবনতি হয়। নাড়ি পরীক্ষা করে গ্রামের ঈশ্বর নাপিত বুঝতে পারল অভাগীর অবস্থা ভালো নয়। তার বাঁচার আশা ক্ষীণ। অভাগীর নাড়ি দেখে তাই সে মূুখ গম্ভীর করল।
নিত্য নতুন সকল আপডেটের জন্য জয়েন করুন
If any objections to our content, please email us directly: helptrick24bd@gmail.com