কিশোর গল্প : কালীনারায়ণপুর ব্রিজে একদিন

Follow Our Official Facebook Page For New Updates


Join our Telegram Channel!

কিশোর গল্প :  কালীনারায়ণপুর ব্রিজে একদিন | Kishor Golpo : Kalinarayanpur Bridge e Ekdin

কালীনারায়ণপুর ব্রিজে একদিন

বীরনগর স্টেশনে ট্রেনটা দাঁড়িয়ে আছে। অনেকক্ষণ। প্রায় কুড়ি-পঁচিশ মিনিট। ছটা দশে কৃষ্ণনগর থেকে ছেড়েছে। এখন সাতটা। ঠাসাঠাসি ভিড়। গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত। গ্রীষ্মকাল। দিন বড়ো হলেও সন্ধে নেমে এসেছে। অবশ্য প্লাটফর্মে ট্রেনটা দাঁড়িয়ে থাকায় আলোর ঝলমলানিতে বোঝা যাচ্ছে না অন্ধকার নেমেছে কিনা। 

রোজই ট্রেনটা দাঁড়ায় বীরনগর স্টেশনে একটু বেশি সময়ের জন্য। বড়োজোর মিনিট সাতেক। আপ লালগোলা প্যাসেঞ্জারের সঙ্গে ক্রসিং হয়। রানাঘাটের পর থেকে সিঙ্গল লাইন। শুধু বীরনগর আর বাদকুল্লা স্টেশনে ডবল লাইন, মানে আপ এবং ডাউন দু'টো লাইন আছে। 

যে ট্রেনটা আগে পৌঁছায় সেটা দাঁড়িয়ে থাকে। অপেক্ষা করে অন্য ট্রেনটা আসার জন্য। রেলের নিয়ম 'লাস্ট কাম, ফাস্ট গো'। অর্থাৎ যে ট্রেনটা পরে আসে সেটা আগে ছেড়ে যায়। দু'টো ট্রেনের গার্ড নিজেদের মধ্যে গোলা, মানে একটা লোহার রিং বিনিময় করে ক্রসিং হয়ে যাওয়ার প্রতীক হিসেবে।

প্রত্যেকদিনই ডাউন কৃষ্ণনগর লোকাল বীরনগর স্টেশনে আগে পৌঁছায়। আপ লালগোলা প্যাসেঞ্জার পরে এসে গোলা বিনিময় করে আগে ছেড়ে চলে গেলে ডাউন ট্রেনটা ছাড়ে। সব মিলিয়ে বড়োজোর মিনিট দশেক। কালীনারায়ণপুর ব্রিজে একদিন

রানাঘাট এবং বীরনগরের মাঝখানে একটাই স্টেশন, কালীনারায়ণপুর। সেখানে একটাই লাইন, একটাই প্লাটফর্ম। দু'খানা গাড়ি দাঁড়াবার ব্যবস্থা নেই। কালীনারায়ণপুর স্টেশন ছাড়লেই চূর্ণী নদীর ওপরেই রেলব্রিজ। শুধু ট্রেন যাবার জন্যে ব্রিজটা। 

নদীতে খেয়া পারাপার করে। ব্রিজের ওপর দিয়ে পায়ে হেঁটে যাওয়া বারণ। তবু কিছু অতি সাহসী লোকজন ট্রেনের সময় খেয়াল করে, যখন ট্রেন যাওয়া-আসা করে না তখন হেঁটে ব্রিজ পার হয়। সিগন্যাল লাল থাকলে তবেই আসা যাওয়া করে।

ট্রেনের ভিতর প্রচণ্ড গরম। দরদর করে ঘামছি। হাতের রুমালটা ভিজে জবজবে। তবু ভাগ্য ভালো থাকায় আজ জানলার ধারে সিট পেয়েছি। বহুদিন পরে কৃষ্ণনগরে এলাম। অথচ আগে এসব জায়গায় আমার ঘর-বাড়ি ছিল। আমার জন্ম রানাঘাটে। 

পড়তাম কৃষ্ণনগর সরকারি কলেজে। মনে পড়ে গেল কৈশোরের দিনগুলোর কথা । নদীর ধারে ইস্কুল। তার পাশে খেয়াঘাটা, ঘাটের ধারে শিবমন্দির। তার পাশে ঈশ্বরকাকার ছোটো চায়ের দোকান। সামনে বাঁশের খুঁটি পেতে বেঞ্চি। 

মাস্টারমশাইরা টিফিনের সময় চা খেতে আসতেন। কাচের বয়ামে লেড়ো বিস্কুট, পানকেক, বাদামচাক এবং নানা ধরনের বেকারির বিস্কুট। আমার প্রাণের বন্ধু ছিল বারিন। ছায়ার মতো দুজনে ঘুরতাম। আমরা খুবই গরিব ছিলাম। কালীনারায়ণপুর ব্রিজে একদিন

আমাদের থেকেও গরিব ছিল বারিনদের পরিবার। বারিন লেখাপড়ায় ভীষণ ভালো ছিল। ছোটোখাটো চেহারা, মাথাভর্তি উসকোখুসকো চুল। মুখে মালিন্যের ছাপ। কিন্তু চোখদুটো ছিল ভারী উজ্জ্বল। ওর চোখ যেন কথা বলত। হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করে কলেজেও আমরা একসঙ্গে। 

পলিটক্যাল সায়েন্সে অনার্স নিয়ে বি. এ পাশও করেছি। সে অনেক বছর আগের কথা। দেখতে দেখতে পঁয়ত্রিশ বছর কেটে গেছে। এম. এ পাশ করে আমি ব্যাংকের চাকরি নিয়ে চলে গেলাম অনেক দূরে রাজস্থানে। আমাদের রানাঘাটের বাসও উঠে গিয়েছিল সেই সময় থেকে। 

বাবা বাড়ি বিক্রি করে পাকাপাকিভাবে কলকাতায় চলে এলেন। বারিনের সঙ্গেও ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল। আর দেখা হয়নি। প্রথম দু-একবছর চিঠিপত্রে যোগাযোগ ছিল। কুড়ি বছর বাইরে বাইরে অন্য রাজ্যে কাটিয়ে যখন আমি ব্যাংকের এজিকিউটিভ হয়ে কলকাতায় এলাম তখন খোঁজ করার চেষ্টা করেছিলাম। খোঁজ পাইনি। 

লোকমুখে শুনেছিলাম কী একটা ঝামেলায় অন্যায়ভাবে অভিযুক্ত হয়ে কয়েকমাস জেলও খেটেছিল বারিন। তারপর কোথায় যে চলে গেল কে জানে। অনেক চেষ্টা করেও কোনো খোঁজ আমি পাইনি। স্কুলকলেজে বারিনের সাহিত্যের প্রতি খুব ঝোঁক ছিল। চমৎকার লেখার হাত ছিল। 

ভীষণ ভালো ছড়া লিখত। ওর স্বপ্ন ছিল নামী লেখক হবে। ঘরে ঘরে ওর গল্প ছড়ার বই লোকে পড়বে। নামী দামি পত্রপত্রিকায় ওর লেখা ছাপা হবে। বিখ্যাত আবৃত্তিশিল্পীরা ওর কবিতা আবৃত্তি করবে। আমিও ওকে খুব উৎসাহ দিতাম। কালীনারায়ণপুর ব্রিজে একদিন

ট্রেনটা হঠাৎ চলতে শুরু করল। কোনো হুইস্লও দেয়নি। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার জন্য অনেক যাত্রী প্ল্যাটফর্মে নেমে ইতস্তত ঘোরাঘুরি করছিল অসহনীয় গরমের হাত থেকে বাঁচার জন্য। 

ছাত্রজীবনের দিনগুলোর মধ্যে বারিনের স্মৃতির মধ্যে এমনভাবে ডুবে গিয়েছিলাম যে কখন আপ লালগোলা প্যাসেঞ্জার এসে আবার ছেড়ে চলে গেছে টেরও পাইনি। 

আমাদের ট্রেনটা ছেড়ে দিতেই একটা শোরগোল শোনা গেল। গরমের হাত থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য যেসব ডেলি প্যাসেঞ্জার প্ল্যাটফর্মে ঘোরাঘুরি করছিল, চা খাচ্ছিল, তারাও ঘটনার আকস্মিকতায় হতচকিত হয়ে গেটের হ্যান্ডেল ধরার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

—'দাদা, সরুন, সরুন। গেটটা ছেড়ে দাঁড়ান।'

—‘আরে ভাই, হাঁ করে দেখছটা কী? গেটের মুখ থেকে ঝুড়িগুলো সরাও তো। দেব ফেলে লাইনে, তখন বুঝবে। ভেন্ডার কামরায় যেতে পার না?”

জানলা দিয়ে উদ্বেগের সঙ্গে দেখছিলাম রানিং ট্রেনে কেমন সব উঠে পড়ল। সবই

অভ্যেসের ব্যাপার। ডেলি প্যাসেঞ্জার বলেই হয়তো সম্ভব। একজন হকার আপ লালগোলা প্যাসেঞ্জারে এসে বীরনগরে নেমে আবার আমাদের

ট্রেনটাতে উঠেছে। ওরা বোধহয় এরকমই হবে। হকারদের এরিয়া ডিমার্কেশন করা আছে বলে শুনেছি। এই হকারটার এরিয়া হয়তো রানাঘাট থেকে বীরনগরের মধ্যেকার স্টেশন। লোকটা আমার কামরায় উঠতেই একজন ডেলি প্যাসেঞ্জার জিজ্ঞেস করল, 'লালগোলা প্যাসেঞ্জার কোথায় আটকে ছিল ভাই?”

মুখের মধ্যে একরাশ বিরক্তির ছাপ ফুটিয়ে তুলে লোকটা বলল, 'আর বলেন কেন, মানুষের আক্কেল-বুদ্ধি কমে যাচ্ছে দিন দিন। দু'জন উটকো লোক, বয়সের গাছ পাথর নেই, বিরিজের ওপর দে' হেঁটে আসছিল। কালীনারায়ণপুর ব্রিজে একদিন

সিংগেল যে সব্‌জে হয়ে আছে সেদিকে খ্যাল নেই। আপনভোলা হয়ে গপ্পো করতে করতে আসছিল। ডাউন শান্তিপুর লোকাল কালীনারায়ণপুর স্টেশন যখন ছেড়েছে, লোকদুটো তখন বিরিজের মাঝমধ্যিখানে।”

—‘কাটা পড়েছে?' একসঙ্গে তিন চারজন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল। একজন বলল, কত বয়স হবে? বাচ্চা না বুড়ো?' কেউ বলল – 'জলে ঝাঁপ দিতে পারল না?'

আমি অন্যমনস্কভাবে জানলা দিয়ে বাইরেটা দেখছিলাম। কত বদলে গেছে চারদিক এই পঁয়ত্রিশ বছরে। যখন কলেজে পড়তাম কত গ্রাম গ্রাম ছিল এসব জায়গা। পাকা বাড়ি একখানাও ছিল বলে মনে করতে পারছিলাম না। কালীনারায়ণপুর ব্রিজে একদিন

শুধু সবুজ ধানখেত আর মাঝে মাঝে এক আধখানা চালাঘর। দু'চারটে খেত বাদে বাদে একটা করে শ্যালো পাম্প। চাষিরা ভাগ করে চাষের জমিতে জল দিত। কত রকম পাখি বসে থাকত ইলেকট্রিকের তারে। দূরে দূরে ইতস্তত গ্রাম, চালাবাড়ি আর তাল খেজুরের সারি। 

কৃষ্ণনগর স্টেশন থেকে আমাদের কলেজ অনেক দূর। বাসের ভাড়া ছিল তেরো পয়সা। এই বাসভাড়াটুকু আমাদের কাছে ছিল মহামূল্যবান। সেটা বাঁচাবার জন্য আমি আর বারিন ট্রেন লাইন ধরে ধরে হেঁটে কলেজে যেতাম। সময়ের অভাব ছিল না। 

চল্লিশ মিনিটের মতো লাগত। বিপ্রদাস পলিটেকনিকের পাশ দিয়ে চার্চের পেছন দিয়ে আমরা লাইনের পাথর নিয়ে ইলেকট্রিকের পোস্টে মারতাম টিপ পরীক্ষা করার জন্য। ধাতব পোস্টে ধাক্কা খেয়ে পাথরগুলো নিউটনের কথামতো দ্বিগুণ গতিতে ছিটকে যেত। 

একেকদিন বিকেলে ফেরার সময় আমরা পাঁচ পয়সা দিয়ে কাঁচা টমেটো, কখনও শাঁকালু বা কাঁচামিঠে আম, সঙ্গে ফ্রি নুন কিনে প্যান্টের পকেটে রেখে খেতে খেতে চলে আসতাম। কত মজার মজার গল্প হত আমাদের মধ্যে। এখন এসব মনে হলে হাসি পায়

হকারটার কথা কানে যেতেই চমকে উঠলাম। বুকের ভেতরটা ছ্যাঁৎ করে উঠল। মুহূর্তে চোখের সামনে ভেসে উঠল সেদিনটার কথা। আটত্রিশ বছর আগের কথা । কত স্মৃতিই তো ঝাপসা হয়ে গেছে। তবু এই ঘটনার কথা আমি কখনও ভুলতে পারছি না। কালীনারায়ণপুর ব্রিজে একদিন

অলৌকিক বলে যে কিছু হয় সেটা এখন স্বীকার করি না, তখন করতাম। সেদিন বারিন নিজের জীবন বিপন্ন করেও আমার জীবন বাঁচিয়েছিল। না হলে এই আমি আর পৃথিবীর রূপ-রস-গন্ধ উপভোগ করার জন্যে বেঁচে থাকতাম না। ভীষণভাবে বারিনের কথা মনে পড়ল। ওর চোখদুটো আমার সমস্ত চেতনাকে নাড়িয়ে দিল। কালীনারায়ণপুর ব্রিজে একদিন

দিনটা ছিল রবিবার। সকাল ন'টা নাগাদ বারিন এল আমাদের বাড়িতে। বলল, ‘চল অপু, সুমনের কাছে যাই। ওর কাছে পি. এন. বি.-র দেওয়া ইনটারন্যাশনাল পলিটিক্সের কিছু নোটস আছে, টুকে নিয়ে আসি।' তখন জেরক্স মেশিনের চল হয়নি। সব কিছু হাতেই কপি করতে হত।

আমাদের বাড়ি থেকে কালীনারায়ণপুর দু'ভাবে যাওয়া যেত। এক আমাদের বাড়ির সামনের খেয়াঘাট বেরিয়ে সন্ন্যাসী বাগান হয়ে, আর একটা সাইকেলে হিজুলি হয়ে রেলব্রিজের এপারে শ্যামলের দোকানে সাইকেল রেখে খেয়ানৌকা পার হয়ে কালীনারায়ণপুরে সুমনদের বাড়ি।

বারিন বলল, 'তুইও সাইকেল নে। আমাদের বাড়িতে অনেক পাকা কুল হয়েছে, মা তোর জন্যে পেড়ে রেখেছে। ওগুলো নিয়ে সাইকেল রেখে খেয়া পেরিয়ে যাব । আমি রাজি হয়ে গেলাম পাকা কুলের লোভে। 

মাকে বললাম বারিনদের বাড়ি থেকে আসছি। আমি সাঁতার জানতাম না বলে মা কখনো নদী পেরোতে দিত না। খেয়া নৌকায় যাব বললে তক্ষুনি নাকচ হয়ে যেত। দুজনে দুটো সাইকেল নিয়ে যখন কালীনারায়ণপুর খেয়াঘাটে পৌঁছলাম তখন সকাল এগারোটা। 

কলেজে পড়লেও এখনকার কলেজ ছাত্রছাত্রীদের মতো অত স্বাধীনতা ছিল না, বিশেষ করে মফস্সলে। খেয়াঘাটে বারিন সাইকেল রাখত ওখানকার একমাত্র দোকানে। দোকানটা বন্ধ। বারিন বলল, 'চল অপু, সাইকেল নিয়ে নৌকায় উঠি।' 

আমার ভীষণ ভয় করল। বললাম, 'নারে, এমনিতে নৌকায় উঠেছি জানলে মা বকবে, তার ওপর সাইকেল? আমি যাব না। এখানে দাঁড়িয়ে থাকি বরং, তুই চট করে গিয়ে সুমনের কাছ থেকে নোটসগুলো নিয়ে আয়। আমি কপি করে দেব। কাল কলেজে ওকে দিয়ে দেব। কালীনারায়ণপুর ব্রিজে একদিন

বারিন খুব সাহসী। তার ওপর ভালো সাঁতার কাটতে পারে। সে জায়গায় জলে আমি পাথর। কেন যে মা ছোটোবেলা থেকে জলের কাছে যেতে বারণ করত কে জানে। 

ফলে সাঁতারটাই শেখা হল না। বারিন বলল, ‘তুই একটা আস্ত ভিতুরাম। ভিতুর ডিম কোথাকার।। চল, তার চেয়ে বরং ব্রিজ দিয়ে সাইকেল নিয়ে যাই।'

ব্রিজ দিয়ে যাওয়ার কথায় আমি চেঁচিয়ে উঠে বললাম, 'না-না, আমি ওসব পারব না । আমার ভয় করে। ব্রিজটা যা সরু। দু'পাশে এক ফুট করে জায়গাও নেই। তার ওপরে লাইনের মাঝখানে পাতা টিনগুলো ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। নীচে তাকালে জল দেখা যায়।

বারিন বলল, ‘তুই কাঠের স্লিপারগুলোর ওপর পা ফেলে ফেলে যা। এইটুকুন তো ব্রিজ, হুস করে চলে যাবি দেখিস। অকারণে ভয় পেলে কাজ পণ্ড হয়।'

আমার ভয় তবু যাচ্ছে না। বললাম, 'যদি ট্রেন এসে যায় উলটোদিক থেকে। ' ও বলল, ‘এখন কোনো ট্রেন নেই। এগারোটা পঞ্চান্নর কৃষ্ণনগর লোকাল চলে গেছে। এর পরে সাড়ে বারোটার শাস্তিপুর। নে চল, ওপরে ওঠ।' কালীনারায়ণপুর ব্রিজে একদিন

আমরা ব্রিজের সিকিভাগ দিয়েছি কী যাইনি, বারিন চিৎকার করে বলল, 'অপু ট্রেন। কালীনারায়ণপুর প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে দিয়েছে। তার মানে এগারোটা পঞ্চান্নর কৃষ্ণনগর লোকাল যায়নি। লেট করেছে। তুই তাড়াতাড়ি সামনের থাম্বাটার ওপরে গিয়ে বসে পড়। ট্রেনের দিকে তাকাস না। ভয় পাবি না।'

আমার গলা দিয়ে স্বর বেরোচ্ছে না। অনেক চেষ্টা করে বললাম, “তুই কী করবি?’ ট্রেনটা তখন আমাদের থেকে তিরিশ-বত্রিশ ফুট দূরে। সবে প্ল্যাটফর্ম থেকে ছেড়েছে বলে স্পিড খুব বেশি নেই। 

ড্রাইভার আগে দেখেনি। এখন চোখে পড়তেই জোরে হর্ন দিল। হয়তো গতি কমানোর চেষ্টা করল। বোঝার মতো অবস্থায় ছিলাম না আমি।

-‘অপু, শিগগির পালা। লাফ মার থাম্বাটার ওপরে। সাইকেল নিতে না পারলে ছেড়ে দে। যা হয় হবে।' আমার বাহ্যজ্ঞান লুপ্ত। কে যেন আমার শরীরে বল আর মনে সাহস দিল। অবিশ্বাস্য দ্রুততার সঙ্গে সাইকেল দু’হাতে তুলে পিলারটার ওপরে লাফিয়ে চোখ বুজে বসে পড়লাম। 

সঙ্গে সঙ্গে ঝড়ের বেগে ট্রেনটা চলে গেল ধুলো উড়িয়ে। বারিনের কী হল জানতে পারলাম না। আমি 'মা-গো' বলে চিৎকার করে কেঁদে উঠেছিলাম।

ট্রেনটা চলে যেতেই দেখলাম বারিন দাঁড়িয়ে দাঁত বের করে হাসছে। ব্রিজের রেলিঙের পাশে এক চিলতে কাঠের ওপর দাঁড়িয়ে। সাইকেলটা ব্রিজের রেলিঙে ঠেসান দিয়ে রাখা আছে।

‘তুই ঠিক আছিস তো অপু? কিছু হয়নি তো? '

আমার মুখ দিয়ে কথা বেরোল না। সামনে তাকিয়ে দেখলাম স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম লোকে লোকারণ্য।

মুখে দিলে মজা, দেবুর ছানার গজা। এক টাকা পিস, বারোটা দশ টাকা।' দেব

নাকি স্যার? বাক্স আছে। বাড়ির জন্য......।' কালীনারায়ণপুর ব্রিজে একদিন

ঝমঝম শব্দে চমকে উঠলাম। ট্রেনটা কালীনারায়ণপুর ব্রিজ পার হচ্ছে। একই রকম আছে। নীচে নদীতে খেয়া নৌকা চলছে। পিলারের ওপর দুজন লোক পা ঝুলিয়ে বসে আছে। আমি অধীর দৃষ্টিতে বারিনকে খুঁজতে লাগলাম। কালীনারায়ণপুর ব্রিজে একদিন, কালীনারায়ণপুর ব্রিজে একদিন

নিত্য নতুন সকল আপডেটের জন্য জয়েন করুন

Telegram Group Join Now
Our Facebook Page Join Now
Class 8 Facebook Study Group Join Now
Class 7 Facebook Study Group Join Now
Class 6 Facebook Study Group Join Now

Post a Comment