প্রশ্ন ॥ ১৯০৯ সালের ভারত শাসন আইনের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর। অথবা, মর্লি মিন্টো সংস্কার আইনের ধারাসমূহ বর্ণনা কর।
মর্লি মিন্টো সংস্কার আইনের ধারাসমূহ |
ভূমিকা : ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসন টিকিয়ে রাখার জন্য ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দেরকে উদারতার বাণী শোনান। যে উদারতার বাণী ভারতীয়রা ইতোপূর্বে শুনেছিল কিন্তু কাজ হয়নি।
তাই ১৯০৯ সালে ভারতীয়দের প্রতি উদারতার মনোভাব পোষণ করে ভারত সচিব লর্ড মর্লি এবং লর্ড মিন্টো। এ উদারতার মানসিকতার প্রেক্ষিতে তারা একটি আইন প্রণয়নের চেষ্টা চালান।
যা ১৯০৯ সালের বাস্তবায়িত হয়। এটি ইতিহাসে মর্লি মিন্টো সংস্কার আইন নামে পরিচিত। এ আইন প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য প্রণয়ন করা হয়। এ আইন সকল জাতি, ধর্ম, বর্ণ এর ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মর্লি মিন্টো সংস্কার আইনের ধারাসমূহ
১৯০৯ সালের ভারত শাসন আইন :
১৮৯২ সালের ভারত শাসন আইন ভারতীয়দের দাবিদাওয়া পূরণে ব্যর্থ হয়। কংগ্রেসের নেতৃত্বে ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলন ভারতের রাজনীতিতে নতুন উপাদান যোগ করে। ব্রিটিশ প্রশাসন বিরোধী মনোভাবে উদ্রেক রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সক্রিয় হয়।
যার ফলে ১৯০৬ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পূর্বে আগাখানের নেতৃত্বে মুসলিম প্রতিনিধি দল লর্ড মিন্টোর নিকট তাদের সম্প্রদায়ের দাবিদাওয়া পেশ করে।
এমন পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ভারত সচিব লর্ড মর্লি এবং লর্ড মিন্টোর উদ্যোগে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ১৯০৯ সালে একটি আইন পাশ হয়। যা মর্লি মিন্টো সংস্কার আইন' বা ১৯০৯ সালের ভারত শাসন আইন বলে।
১৯০৯ সালের মর্লি-মিন্টো সংস্কার আইনের বৈশিষ্ট্য বা ধারা :
১৯০৯ সালের মর্লি-মিন্টো সংস্কার আইন একটি সংশোধনী আইন। এ আইনে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন করা হয়নি। নিম্নে ১৯০৯ সালের ভারত শাসন আইনের ধারা বা বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি :
১৯০৯ সালের ভারত শাসন আইনে কেন্দ্র প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের সদস্য সংখ্যা ছিল পূর্বে ছিল ১৬ জন। ১৯০৯ সালের আইনে ৬৯ করা হয়। এ আইনে প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হয়।
বড় বড় প্রদেশে শাসনতান্ত্রিক সুবিধার জন্য ৫০ জন অতিরিক্ত সদস্য এবং ছোট প্রদেশগুলোতে ৩০ জন সদস্য নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়। প্রদেশের আইনসভায় বেসরকারি সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেওয়া হয়। মর্লি মিন্টো সংস্কার আইনের ধারাসমূহ
২. নির্বাচন নীতির স্বীকৃতি প্রদান :
১৯০৯ সালের আইনের আরেকটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সদস্যদের ভোটাধিকার সীমিত করা। পৌরসভা, লোকাল বোর্ড, বণিক সমিতি প্রভৃতিই ভোটাধিকার লাভ করে। কেন্দ্রীয় সংস্থার দ্বারা নির্বাচিত হওয়ার নীতি স্বীকৃত হয়।
৩. মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা :
এ আইনের দ্বারা সর্বপ্রথম মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচনের অধিকার দেওয়া হয়। কেননা ব্রিটিশ ভারতে অবহেলিত মুসলিম সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা খুব বেশি প্রয়োজন ছিল।
এই আইনের দ্বারা প্রথম মুসলমান প্রতিনিধিগণ মুসলমান ভোটার দ্বারা নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ লাভ করে। মর্লি মিন্টো সংস্কার আইনের ধারাসমূহ
৪. আইন পরিষদের সদস্যদের ক্ষমতা ও কার্যক্রম :
১৯০৯ সালের মর্লি-মিন্টো সংস্কার আইনে আইন পরিষদের সদস্যরা যেকোনো প্রশ্ন এবং সম্পূরক প্রশ্ন উত্থাপন করার অধিকার লাভ করে। এমনকি সরকারের সমীপে সুপারিশ আকারে পরিষদে প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারতো।
৫. আইন পরিষদে সভাপতির ক্ষমতা অপ্রতিহত :
আইন পরিষদের সদস্যদের ক্ষমতা ও কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হলে আইন পরিষদে সভাপতির ক্ষমতা অপ্রতিহত রাখা হয়। মর্লি মিন্টো সংস্কার আইনের ধারাসমূহ
এক্ষেত্রে আইন পরিষদের সদস্যরা সরকারের নিকট সুপারিশ আকারে পরিষদে প্রস্তুব উত্থাপন করতে পারলেও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার পরিষদ সভাপতির হাতেই ন্যস্ত রাখা হয়।
৬. গভর্নর জেনারেলের কার্য নির্বাহক পরিষদে ভারতীয় প্রতিনিধি নিয়োগ :
এ সংস্কার আইনে গভর্নর জেনারেলের কার্য নির্বাহক পরিষদে একজন ভারতীয় প্রতিনিধি নিয়োগের ব্যবস্থা গৃহীত হয়। মর্লি মিন্টো সংস্কার আইনের ধারাসমূহ
৭. শাসন পরিষদে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি :
১৯০৯ সালের সংস্কার আইনে শাসন পরিষদে পদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করে ৪জনে উন্নীত করা হয়।
৮. সহযোগিতার নীতি :
১৯০৯ সালের এ সংস্কার আইনের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল সহযোগিতার নীতি গ্রহণ। জনস্বার্থের খাতিরে সরকারে সাথে উপযুক্ত ভারতীয় নেতৃবর্গের সহযোগতার নীতি গৃহীত হয়।
৯. বাংলা প্রদেশে কার্য নির্বাহ পরিষদ গঠন:
এ আইনে ভারত শাসন অনুযায়ী ছোটলাট শাসিত প্রদেশেও কার্যনির্বাহ পরিষদ গঠনের উল্লেখ থাকায় সেই মোতাবেক বাংলায় একটি কার্য নির্বাহক পরিষদ গঠন করা হয়। মর্লি মিন্টো সংস্কার আইনের ধারাসমূহ
১০. রাজনৈতিক অযোগ্যতা :
১৯০৯ সালের এ সংস্কার আইনে রাজনৈতিক অপরাধীদেরকে নির্বাচিত হওয়ার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অযোগ্য বলে ঘোষণা করা হয়। তবে সরকার প্রধানকে এ জাতীয় অযোগ্যতা পরিহার ক্ষমতাও দেওয়া হয়। মর্লি মিন্টো সংস্কার আইনের ধারাসমূহ
উপসংহার :
পরিশেষে বলা যায় যে, ব্রিটিশ ভারতের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে ১৯০৯ সালের সংস্কার আইন একটি গুরুত্ব স্থান দখল করে আছে।
এ আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের কিছু রাজনৈতিক অধিকার প্রদান করলেও সমগ্র ভারত কর্মীর আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়। মর্লি মিন্টো সংস্কার আইনের ধারাসমূহ, মর্লি মিন্টো সংস্কার আইনের ধারাসমূহ, মর্লি মিন্টো সংস্কার আইনের ধারাসমূহ, মর্লি মিন্টো সংস্কার আইনের ধারাসমূহ,
নিত্য নতুন সকল আপডেটের জন্য জয়েন করুন
If any objections to our content, please email us directly: helptrick24bd@gmail.com