প্রশ্ন॥ মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক চিন্তাধারা আলোচনা কর।Discuss the political thought of Maulana Bhasani.
রাজনীতিকে যিনি ক্ষমতায় আরোহণের সিঁড়ি হিসেবে না মনে করে মনে করেছেন জনকল্যাণের উপায় হিসেবে,
সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দূর করা ও জনকল্যাণেই ছিল যাঁর রাজনীতির মূলমন্ত্র তিনি হচ্ছে বাংলার দরদী ও নির্লোভ জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী মজলুম জননেতা হিসেবে তিনি সমধিক পরিচিত।
ভারতীয় উপমহাদেশে হাতেগানা যে ক'জন রাজনীতিবিদ সারা জীবন অন্যায়-অবিচার, জুলুম, নির্যাতন-দুঃশাসন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকে এসবের নিরসনে সংগ্রাম করেছেন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী নিঃসন্দেহে তাদের মধ্যে অন্যতম।
আরো পড়ুন: মওলানা ভাসানীকে মজলুম জননেতা বলার কারণ
মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক চিন্তাধারা :
নিম্নে মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক চিন্তাধারা আলোচনা করা হলো :
১. রাজনৈতিক আদর্শ :
মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক আদর্শ সম্বলিত কোনো গ্রন্থ নেই। তিনি সময়ের প্রয়োজনে কিছু সংখ্যক পুস্তিকা প্রকাশ করেছেন এবং জীবনের শেষ পর্যায়ে 'হক কথা' নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন।
এই পুস্তিকাবলি, সাপ্তাহিক পত্রিকা এবং তাঁর বক্তৃতা বিবৃতি থেকে তাঁর রাজনীতিক মতাদর্শের পরিচয় পাওয়া যায় ।
আরো পড়ুন: মওলানা ভাসানীর কৃষক আন্দোলন
২. সংগ্রামী ব্যক্তিত্ব :
মওলানা ভাসানী ছিলেন মূলত সংগ্রামী ব্যক্তিত্ব। সভা, সমাবেশ ও আন্দোলন ছিল তাঁর প্রধান হাতিয়ার। তিনি সমাবেশকে ব্যবহার করেছেন কর্মপন্থা নির্ধারণ ও জনসাধারণের অধিকার সচেতনতা সৃষ্টির কাজে এবং আন্দোলনকে ব্যবহার করেছেন অধিকার প্রতিষ্ঠার কাজে।
৩. রাজনৈতিক পদক্ষেপ :
মওলানা ভাসানী অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অহিংস আন্দোলনের পথ অনুসরণের পক্ষপাতি থাকলেও প্রয়োজনে সহিংস পন্থায় বিরুদ্ধ শক্তির মোকাবিলা করা অন্যায় মনে করেননি।
সবসময় তিনি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন। তিনি জনসমর্থন যাচাই করে রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতেন।
৪. রুবিয়াতের আদর্শ :
মওলানা ভাসানী রুবিয়াতের আদর্শ প্রচার করতেন। রুবিয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রুবিয়াত কোনো ধর্মের কথা নয়। উহা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের একটি স্বতঃসিদ্ধ বিধান।
তাই হিন্দু-মুসলিম, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সকল মানুষের জন্য হকুমতে রব্বানিয়া অর্থাৎ যে দেশে রুবিয়াতের আদর্শ রাষ্ট্রীয় ভিত্তিতে কায়েম হইয়াছে তাহা কল্যাণকর ছাড়া কিছু নয়।
মুসলমানদের জন্য যিনি রব বা পালনকর্তা, বিবর্তনকারী প্রভু হিন্দুর জন্যও একই বিধান আলো-হাওয়া, ফল, পানি, বস্ত্র, খাদ্য সবই যোগাইতেছেন। একমাত্র রুবিয়াতের আদর্শই মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি করতে পারে। "
৫. গণতন্ত্রের ধারক :
মওলানা ভাসানী গণতন্ত্রকে উত্তম সরকার ব্যবস্থা হিসেবে মনে করতেন। তিনি দীর্ঘ এগারো বছর আসামের আইনসভার সদস্য থাকাকালে সংসদীয় গণতন্ত্র সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন এবং তৎকালীন উপমহাদেশীয় অনেক রাজনৈতিক নেতার গণতান্ত্রিক মতাদর্শ তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল।
তিনি মনে করেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রই ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের বিকাশের জন্য সবচেয়ে উপযোগী তাঁর গণতন্ত্র ছিল জনগণের গণতন্ত্র । মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক চিন্তাধারা
৬. অর্থনৈতিক মুক্তি :
মওলানা ভাসানী রাজনৈতিক গণতন্ত্রের চেয়ে অর্থনৈতিক গণতন্ত্রের প্রতি অধিক জোর দিয়েছেন। তাঁর মতে, রাজনৈতিক গণতন্ত্রের সাফল্যের পূর্বশর্ত অর্থনৈতিক গণতন্ত্র।
তিনি কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার জেলে, তাঁতি, পিয়ন, আর্দালী প্রভৃতি শোষিত শ্রেণির অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। তাঁর আন্দোলনের বুঝি ছিল লাঙ্গল যার জমি তার।
৭. রাজনৈতিক হাতিয়ার :
মওলানা ভাসানীর রাজনীতির একটি বিশেষ দিক হচ্ছে ফরাসি দার্শনিক রুশোর ন্যায় রাজনীতিতে অনুভূমি ও আবেগের প্রসার। বাংলার সহজ-সরল মানুষের আবেগের প্রতিনিধিত্ব করেছেন মওলানা ভাসানী। মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক চিন্তাধারা
৮. মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা :
বাংলার শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর অবদান ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সংগ্রাম ও আন্দোলন অনাগত দিনের রাজনীতিবিদ, সমালোচক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গবেষকদের চিন্তার খোলাক জোগাবে। মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক চিন্তাধারা
৯. নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি :
মওলানা ভাসানী স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি জনগণের প্রকৃত মুক্তি ও শান্তির পথ প্রশস্ত করবে।
১০. সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী :
মওলানা ভাসানী সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছিলেন। তিনি মানুষের শোষণে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, সাম্রাজ্যবাদ বিশ্বের সমস্যা ও সংকটের অন্যতম মূল উৎস। তিনি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক চিন্তাধারা
উপসংহার :
উপরিউক্ত আলোচনা পরিশেষে বলা যায় যে, মওলানা ভাসানী আসামে বাঙালিদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রাণপণ সংগ্রাম করেন।
১৯৪৮ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর কাছে আসামে বসবাসকারী বাঙালি দুঃখ-দুর্দশা বর্ণনা করে তিনি কেঁদে ফেলেন। মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক চিন্তাধারা
তার দৃঢ়চেতা মনোভাব আপসহীন সংগ্রাম, ন্যায়ের প্রতি অবিচল শেষ পর্যন্ত তাকে একজন সত্যিকারের মজলুম জননেতায় পরিণত করে। তিনি আসামে বাঙালিদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় অসামান্য ভূমিকা পালন করে । মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক চিন্তাধারা
মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক চিন্তাধারা, মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক চিন্তাধারা
নিত্য নতুন সকল আপডেটের জন্য জয়েন করুন
If any objections to our content, please email us directly: helptrick24bd@gmail.com