আল-ফারাবীর আত্মতত্ত্ব ও রাজনীতি সম্পর্কে তার মতবাদ

Follow Our Official Facebook Page For New Updates


Join our Telegram Channel!

প্রশ্ন  আল-ফারাবীর আত্মতত্ত্ব সংক্ষেপে লিখ । অথবা, আত্মা সম্পর্কে আল-ফারাবীর ধারণা কী? ব্যাখ্যা কর। রাজনীতি সম্পর্কে আল-ফারাবির মত কীঅথবারাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে আল ফারাবির মতবাদ আলোচনা কর।

আল-ফারাবীর আত্মতত্ত্ব ও রাজনীতি সম্পর্কে তার মতবাদ

প্রশ্ন  আল-ফারাবীর আত্মতত্ত্ব সংক্ষেপে লিখ ।

ভূমিকা : আবু নসর মুহাম্মদ আল-ফারাবী ৮৭০ খ্রিস্টাব্দে তুরস্কের 'ফারাব' নামক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মুসলিম চিন্তাবিদদের মধ্যে অন্যতম। ফারাবী আত্মা সম্পর্কে চমকপদ মত দিয়েছেন। তিনি আত্মার অমরত্বে বিশ্বাস করতেন কিন্তু ব্যক্তিগত অমরতার কথা বলেননি।

আল ফারাবীর আত্মাতত্ত্ব :

আল-ফারাবী আত্মা সম্পর্কে অভিনব মতবাদ প্রদান করেন। যথা : 

  • দেহ (Body) ও 
  • আত্মা (Soul).

দেহ বিভিন্ন অংশের সমন্বয়ে গঠিত, আর আত্মা এই সকল দৈহিক গুণের অতীত। আল-ফারাবীর মতে আত্মা (Soul) নিম্নস্তর হতে উচ্চস্তরে গমন করে আল কিন্দির মত আল ফারাবী ও মানবাত্মাকে ৪টি বুদ্ধিবৃত্তিতে বিভক্ত করেন।

১. সুপ্ত বা সম্ভাব্য বুদ্ধিবৃত্তি (আকফল হায়য়ুলানি)

২. সক্রিয় বুদ্ধিবৃত্তি (আক্কল বিল ফিল) 

৩. অর্জিত বুদ্ধিবৃত্তি (আক্কল মুস্তাফাদ) ও

৪. চালক বুদ্ধিবৃত্তি (আক্কল ফা'ল)

ফারাবী বলেন, মানুষ ও পশুর মধ্যে সুপ্ত বুদ্ধিবৃত্তি রয়েছে, কিন্তু উভয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। মানুষের মধ্যে আছে চালক বুদ্ধিবৃত্তি যা পশুর মধ্যে নেই। আল-ফারাবীর আত্মতত্ত্ব ও রাজনীতি সম্পর্কে তার মতবাদ

এই চালক বুদ্ধিবৃত্তি মানুষের অর্জিত বৃদ্ধিবৃত্তিকে জাগিয়ে তোলে। মানুষের মৃত্যুর পর এই চালক বুদ্ধিবৃত্তি আপন উৎসে প্রত্যাবর্তন করে এবং খোদার সঙ্গে পুনরায় মিলিত হয় এবং পরমাত্মার সঙ্গে মিলিত হয়ে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান লাভ করে।

ফারাবী বলেন, তিনটি বৃত্তি থেকে চতুর্থ বৃত্তিটি আলাদা। এই চতুর্থ বৃত্তি অর্থাৎ চালক বুদ্ধিবৃত্তি খোদা হতে মানুষের নিকট আসে এবং ঘুমন্ত মানুষকে জাগিয়ে তোলে। 

এই শক্তিই মানুষকে ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় সম্পর্কে পার্থক্য নির্দেশ করতে সাহায্য করে এবং মৃত্যুর পর এটি খোদার নিকট প্রত্যাবর্তন করে বলে ফারাবী মত প্রদান করেন। 

আল-ফারাবী বলেন, আত্মার উন্মেষের সঙ্গে আমাদের সুপ্ত বুদ্ধিবৃত্তি ইন্দ্রিয়ানুভূতির সীমা অতিক্রম করে প্রজ্ঞার জ্ঞানরাজ্যে প্রবেশ করে এবং উন্নত ধরণের জ্ঞান অর্জন করে। 

এক্ষেত্রে মৃত্যুর পর আত্মা দেহ হতে মুক্তি লাভ করে এবং দেশ ও কালের সীমা অতিক্রম করে সীমাহীনভাবে বহু ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। আল-ফারাবীর আত্মতত্ত্ব ও রাজনীতি সম্পর্কে তার মতবাদ

পরিশেষে আত্মা পরমাত্মার সাথে মিলিত হয়ে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান লাভ করবে। এভাবে ফারাবী তাঁর আত্মাতত্ত্ব সম্পর্কিত মতবাদ প্রদান করেন। আল-ফারাবীর আত্মতত্ত্ব ও রাজনীতি সম্পর্কে তার মতবাদ

উপসংহার : 

পরিশেষে বলা যায় যে, আল-ফারাবী একজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। আত্মা সম্পর্কিত ফারাবীর উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে তিনি মানবাত্মা ও পরমাত্মা সম্পর্কে আলোচনার ক্ষেত্রে সীমারেখা টেনেছেন। 

তাঁর আত্মা সম্পর্কিত মতবাদের দ্বারা পরবর্তীতে অনেক দার্শনিক প্রভাবিত হয়েছেন। তাঁর আত্মাতত্ত্ব দর্শনের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য মতবাদ হিসেবে স্থান লাভ করে আছে।

 


প্রশ্ন  রাজনীতি সম্পর্কে আল-ফারাবির মত কী? অথবা, রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে আল ফারাবির মতবাদ আলোচনা কর।

 

ভূমিকা : সমগ্র মুসলিম জগতের একজন মৌলিক চিন্তাবিদ হলো আল ফারাবি। মধ্যযুগের গ্রিক ঐতিহ্যবাহী যুক্তিবাদী দার্শনিকদের মধ্যে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। মানুষের রাজনৈতিক কার্যকলাপকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে অধ্যয়ন করার প্রয়াস পান আল ফারাবি। 

তিনি রাষ্ট্রের উৎপত্তি, সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ কাঠামো ও রাষ্ট্রের শ্রেণিবিন্যাস প্রভৃতি বিষয়ে মৌলিক তত্ত্বের অবতারণা করেন। আল-ফারাবীর আত্মতত্ত্ব ও রাজনীতি সম্পর্কে তার মতবাদ

রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে আল ফারাবির মতবাদ : 

নিম্নে রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে আল ফারাবির মতবাদ আলোচনা করা হলো : 

১. পারস্পরিক অধিকার বর্জন তত্ত্ব :

রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে আল ফারাবি যে মতবাদ প্রদান করেন তার সাথে আধুনিককালের সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীর সামাজিক চুক্তিবাদীদের মতবাদের সাদৃশ্য থাকায় সমালোচকগণ ফারাবির এই মতবাদকে 'পারস্পরিক অধিকার বর্জন তত্ত্ব' বলে অভিহিত করেছেন। 

ফারাবির মতে, মানুষের সমষ্টিগত সুখ স্বাচ্ছন্দ্য বিধানের জন্য রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছে। রাষ্ট্র সকল সমবায়ের শ্রেষ্ঠ এবং বিবর্তনের মাধ্যমে এই সমবায় ব্যবস্থা সমগ্র বিশ্বের মানব জাতির মধ্যে প্রযোজ্য হবে। জাতি রাষ্ট্রীয় মর্যাদা লাভ করে সাম্রাজ্য গঠন করবে এবং এ জাতি বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত হতে পারে। 

২. নতুন ব্যাখ্যা দান : 

আল-ফারাবি প্লেটোর 'রিপাবলিক' 'লজ' গ্রন্থ দুটির গবেষণা করে নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে রাষ্ট্রের ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের নতুন ব্যাখ্যা প্রদান করেন। তবে তার ব্যাখ্যা প্লেটোর বিশ্লেষণ থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। 

সমগ্র সভ্য জগতকে নিয়ে বৃহত্তর এবং মধ্যপন্থি জাতি সম্পর্কে আল ফারাবি ইসলামি ভাবধারার আলোকে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তার মতে, মানুষের মধ্যে যুক্তি বিশ্লেষণের যে ক্ষমতা বিদ্যমান তার উপরই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত। 

ফারাবির মতে, “ক্ষমতার দরুণই মানুষ কোনো জিনিসের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে আবার কোনো জিনিসের প্রতি বিতৃষ্ণা পোষণ করে। ক্ষমতাই সকল প্রেম ও ঘৃণা, বন্ধুত্ব ও শত্রুতা, শান্তি ও যুদ্ধের ভিত্তি।

৩. ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা : 

আদিমকালে মানুষে মানুষে দ্বন্দ্ব কলহ লেগেই থাকতো। ফলে দুর্বল সবসময় সবলের দ্বারা নিষ্পেষিত হতো। এরূপ অবস্থায় মানুষের নিজেদের মধ্যে চুক্তি সম্পাদন করে।

আল ফারাবি বলেন, তখন কেউ যদি চুক্তির শর্তাদি ভঙ্গ করেতবে অন্য সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে তার প্রতিবাদ করবে এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে নিজেদের স্বাধীনতা রক্ষার চেষ্টা করবে। 

৪. রাষ্ট্রের উৎপত্তি : 

রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে আল ফারাবির মতবাদের সাথে অষ্টাদশ শতাব্দীর সামাজিক চুক্তিবাদীদের মতবাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আল ফারাবির রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদ সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীর রাজনৈতিক চিন্তাধারাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। 

তাঁর মতে, রাষ্ট্রের অস্তিত্ব পূর্বেও ছিল। কিন্তু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষ চুক্তিবদ্ধ হয়। ফলে রাষ্ট্রের বিকাশে চুক্তির ভূমিকা রয়েছে। রাষ্ট্রের উৎপত্তির প্রসঙ্গে তিনি কতিপয় ধারণার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করেছেন। 

প্রথমত, একজন মানুষ অপরের সঙ্গে ঐক্যসূত্রে আবদ্ধ হলে যে সমবেত শক্তির সৃষ্টি হয় তা রাষ্ট্রের উৎপত্তির একটি উপাদান। 

দ্বিতীয়ত, পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা রাষ্ট্রের উৎপত্তির একটা কারণ। 

তৃতীয়ত, বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে বস্তুগত সম্পর্কের ফলশ্রুতিতেও ঐক্যের মনোভাব সৃষ্টি হয় । তাছাড়া, ভাষা, রীতিনীতি ও ভৌগোলিক সান্নিধ্যের কারণে ঐক্যবোধ সৃষ্টি হয়। 

চতুর্থত, প্রধান নেতার অধীনে প্রকৃত সংগঠনের ফলে জনগণের মধ্যে পারস্পরিক সহানুভূতির মনোভাব পরিলক্ষিত হয় যা সার্বভৌমত্বে রূপ লাভ করে। আল-ফারাবীর আত্মতত্ত্ব ও রাজনীতি সম্পর্কে তার মতবাদ

উপসংহার: 

পরিশেষে বলা যায় যে, আল ফারাবি ইসলামি রাষ্ট্রচিন্তার একজন মৌলিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদ হলেও তাঁর রাষ্ট্রচিন্তায় গ্রিক রাষ্ট্রচিন্তার ব্যাপক প্রভাব লক্ষণীয়। 

মানুষ কল্যাণ লাভ করতে পারে এ রকমের ক্ষুদ্রতম রাজনীতিক ইউনিট থেকে ফারাবি তাঁর মদিনা রাষ্ট্রের ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। 

ইসলামি রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে যে কজন মহান জ্ঞান সাধক শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ রূপে আজও জ্যোতিষ্কমান, আল ফারাবি তাদের মধ্যে অন্যতম। আল-ফারাবীর আত্মতত্ত্ব ও রাজনীতি সম্পর্কে তার মতবাদ, আল-ফারাবীর আত্মতত্ত্ব ও রাজনীতি সম্পর্কে তার মতবাদ, আল-ফারাবীর আত্মতত্ত্ব ও রাজনীতি সম্পর্কে তার মতবাদ

নিত্য নতুন সকল আপডেটের জন্য জয়েন করুন

Telegram Group Join Now
Our Facebook Page Join Now
Class 8 Facebook Study Group Join Now
Class 7 Facebook Study Group Join Now
Class 6 Facebook Study Group Join Now

Post a Comment