কিশোর গল্প : অদ্ভুত ডাকাতির গল্প | Kishor Golpo : Odvut Dakatir Golpo
জায়গাটাকে পুরোদস্তুর শহর বলা না গেলেও গ্রাম বলা যায় না, কোনো মতেই। বরং আধা শহর বা প্রায় শহরই বলা যেতে পারে। কলকাতা থেকে কী-ই বা এমন দূর, বড়ো জোর বিশ কিলোমিটার। শহরের সব বৈশিষ্ট্যই এখানে বিদ্যমান, কয়েকটি মাত্র ছাড়া।
যেমন পাতালরেল, চক্ররেল, ট্রাম কিংবা ভিক্টোরিয়া, নন্দন, অ্যাকাডেমি ইত্যাদি। সুতরাং খোদ কলকাতায় থাকতে পারছেন না বলে বাড়ির মালিক বিজয়কেতন মুখোটির কোনো আপশোশ বা মনোবেদনা নেই। বরং মেট্রোপোলিসের ধোঁয়া কালি যানজট থেকে মুক্ত হয়ে একটু খোলামেলায় থাকলে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে। অদ্ভুত ডাকাতির গল্প
বিজয়কেতনের ভাগ্যটাও ভালো বলতে হবে। ঠাকুর্দার দূরদৃষ্টি ছিল মানতে হবে বৈকি। গঙ্গার ধারে বাইশকাঠা জমির ঠিক মাঝখানে তিনতলা বাড়ি। দেখে বোঝার উপায় নেই যে একশোর বেশি বয়স বাড়িটার। ঝকঝকে তকতকে। চারদিকে রকমারি ফুলের বাগান। আধুনিক আসবাবপত্র।
হাল ফ্যাশানের সোফাসেট থেকে শুরু করে ফ্রিজ টিভি ওয়াশিং মেশিন মোবাইল ফোন ডিভিডি প্লেয়ার মাইক্রোওভেন, এমনকি কম্পিউটার পর্যন্ত। বাড়ির সামনে বিশাল গেট। থামের গায়ে সাদা পাথরে লেখা ব্রিগেডিয়ার বিজয়কেতন মুখোটি। অদ্ভুত ডাকাতির গল্প
বছর দশেক হল অবসর নিয়ে এক্সপোর্টের ব্যাবসা করেন। টাকাপয়সা সোনাদানা জমিজায়গা নিয়ে সম্পত্তির কোনো হিসেব তাঁর আছে বলে মনে হয় না। বাড়িতে লোক বলতে পরিবারের সদস্যসংখ্যা নিজেকে নিয়ে তিন। স্ত্রী এবং তাঁর শ্যালকপুত্র, মানে গিন্নির ভাইপো।
একমাত্র পুত্রসন্তান সস্ত্রীক বিদেশে থাকে। গিন্নির ভাইপোর নাম অবিকল্প সান্যাল। সত্যিই তার বিকল্প নেই। বিজয়কেতনের ভাষায় অকালকুষ্মাণ্ড। মাঝে মাঝে নিজেই আক্ষেপ করে বলেন—“কী ভিমরতিই হয়েছিল আমার গিন্নির, নইলে এমন অপদার্থ ছেলেকে কেউ পুষ্যিপুত্র করে।”
স্কুলের বিদ্যে নাইন ফেল। যত রকম কুসংসর্গে মেশা যায়, যতরকম কু-কাজ করা যায় সবই তার আয়ত্তে। কতবার ভেবেছেন ঘাড়ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেবেন, গিন্নির কথা ভেবে নিজেকে সংযত রেখেছেন। অবিকল্পর ডাক নাম গুণধর। ওর পিসি ডাকে গুনো বলে। সত্যিই গুণধর।
চোর বললে কম বলা হবে। ডাকাতের বাবা। ও নাকি চোর ডাকাতের দলেও নাম লিখিয়েছে এমন কথা বিজয়কেতনের ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা মাঝে মাঝে বলে থাকেন। বাড়িতে কর্মচারীর সংখ্যা সাত। একজন বিজয়কেতনের সদাসঙ্গী ম্যানেজার কাম আড্ডার অংশীদার। একজন গিন্নির খাস কাজের লোক।
ঠাকুর মালি দারোয়ান ড্রাইভার ইত্যাদি নিয়ে আরও পাঁচজন। এত বৈভব, এত প্রাচুর্য সত্ত্বেও বিজয়কেতনের চিন্তার শেষ নেই গুণধরকে নিয়ে। থানা-পুলিশ করলে লোক জানাজানি হবে। তাতে নিজের মুখেই চুনকালি লাগবে। তাই মাঝে মাঝে চিন্তার গাঢ় মেঘে ঢেকে যায় তাঁর মনের আকাশ।
কার্তিক মাসের শেষ। বাতাসে হিমেল ভাব। বেলা ছোটো হয়ে আসছে। পশ্চিমের বারান্দায় আরামকেদারায় বসে আছেন বিজয়কেতন। হাতে একটা মোটা কাগজের খাম। অদ্ভুত ডাকাতির গল্প
খামটা খুলে ভেতর থেকে একটা কাগজ বের করে চোখের সামনে মেলে ধরলেন। কিছুক্ষণ মন দিয়ে পড়ার পর আবার ভাঁজ করে খামে ভরে কোলের ওপর রেখে দিলেন। —বাবু চা খাবেন না কফি?
বিজয়কেতন ডান দিকে তাকালেন। কাঁধের গামছায় হাত কচলাতে কচলাতে নিরাপদ জিজ্ঞেস করল, চা দেব বাবু? অদ্ভুত ডাকাতির গল্প
–চা, আচ্ছা দাও। আর হ্যাঁ শোনো, গিন্নিমাকে একটু ডেকে দিয়ো তো। খানিক পরে গিন্নিমা এলেন। পেছনে পেছনে দু-কাপ চা হাতে করে নিরাপদ। কাপ দুটো টেবিলে নামিয়ে রেখে চলে যেতে গিয়েও থমকে দাঁড়াল নিরাপদ, মনিবের দিকে পেছন করে।
গিন্নি জিজ্ঞেস করলেন কী হল ডাকলে কেন? শরীর খারাপ? না আজ তোমার আড্ডার বন্ধুরা আসবেন না? অদ্ভুত ডাকাতির গল্প
না, না, তেমন কিছু না। আজ বড়ো আনন্দের দিন। বহু দিনের অপূর্ণ একটা সাধ একটা ইচ্ছে আজ পূর্ণ হল।
কী হয়েছে খুলে বলো না কেন বাবা। বুড়ো বয়সে তোমার এই আদিখ্যেতা ভালো লাগে না। বলি কী এমন সাধ পূরণ হল যে তুমি খুশিতে একেবারে যাকে বলে ডগমগ হয়ে গেলে?
বিজয়কেতন হাতের খাম থেকে কাগজটা বের করে গিন্নির হাতে দিলেন। খানিক পরে তাঁর সে কী আর্তচিৎকার, ‘ও মা আমার কী হবে গো। সব্বোনাশ হয়ে গেল । কী অলক্ষুনে চিঠি গো। কে পাঠাল গো। কার এমন কুমতি জাগল। আমাদের.....।'
গিন্নিকে থামিয়ে দিয়ে বিজয়কেতন বললেন আরে এমন দারুণ একটা আনন্দ সংবাদ,কোথায় পাড়াপড়শি আত্মীয়স্বজন মিলে মচ্ছব করবে, তা না উনি ভিয়েন করে মরাকান্না কাঁদতে বসলেন।
আরে কটা লোকের ভাগ্যে এমন সোনার সুযোগ আসে বলতে পার ? বাড়িতে ডাকাত পড়া একি সকলের জীবনে হয়? তাও আবার আগাম চিঠি দিয়ে। এসব তো একশো বছর আগে ঘটত। আর শহরে তো ঘটেই না বলতে গেলে। ওঃ কী দারুণ একটা খবর।
তোমার মাথাটা একদম গেছে। ও মা আমার কী হবে গো। ঠাকুর, তুমি আমার কী সব্বোনাশ করলে। গিন্নিমার কান্না শুনে আধ ডজন কাজের লোক, মায় দারোয়ান পর্যন্ত এসে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে।
গুণধর হাঁফাতে হাঁফাতে এসে জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে পিসেমশাই? কোনো খারাপ খবর? খারাপ খবর কী বলছিস রে হতভাগা। এমন কপাল ক'জনের হয়? এতদিনে জাতে ওঠার মতো একটা সুযোগ এল।
চিঠি দিয়ে বাড়িতে ডাকাতি করতে আসা, এ জিনিস বড়ো জমিদার-টমিদার না হলে হয় নাকি? যাক, এতদিনে ওরা আমাকে স্বীকৃতি দিল। আমি কিস্যু বুঝতে পারছি না পিসেমশাই। কীসের চিঠি, কীসের ডাকাতি, আমার সব গোলমাল হয়ে যাচ্ছে।
আরে বুদ্বু, এসব বুঝতে গেলে এলেম লাগে। নাইন ফেল বিদ্যে নিয়ে যদি সব কিছু বোঝা যেত তা হলে তুইও এদের মতো বড়ো ডাকাত হয়ে যেতিস। কাদের মতো?
তবে আর বলছি কী। বাড়িতে ডাকাত পড়বে। সামনের বুধবার। অমাবস্যার রাতে। ঠিক দুটো কুড়িতে। এই যে তার চিঠি, পড়ে দেখ। না থাক। তোর তো বিদ্যের বহর পাতে দেবার মতো নয়।
আমিই পড়ছি। শোন। আর হ্যাঁ, কালিকিংকর, নিরাপদ, বংশী, প্রাণকেষ্ট, মালতীর মা, তোরাও সবাই মন দিয়ে শোন। অদ্ভুত ডাকাতির গল্প
শ্রীল শ্রীযুক্ত বিজয়কেতন মুখোটি মহাশয়, আগামী বুধবার, তিরিশে কার্তিক, রাত্রি দুটো বেজে কুড়ি মিনিটে আপনার বসতবাটিতে আমরা ডাকাতি করা মনস্থ করেছি। অদ্ভুত ডাকাতির গল্প
আপনি প্রস্তুত থাকবেন। কোনো রকম বাধা দেবার চেষ্টা করলে সপরিবার জ্যান্ত পুঁতে ফেলব। থানা-পুলিশ করার চেষ্টা করলেও লাভ হবে না। হিতে বিপরীত হবে। আশা করি এর অন্যথা হবে না। ভবদীয় অমঙ্গলানন্দ, মহাবলানন্দ, অমিততেজানন্দ, বিশ্বপরাক্রমানন্দ, ত্রিভুনেশ্বরানন্দ।
চিঠির শেষটুকু পড়ার আগেই বংশী দারোয়ান আরিব্বাস বলে লাফ মেরে নিজের ঘরের দিকে দৌড় লাগাল। বাকিরাও 'বাবু আমাদের ছুটি দিয়ে দিন' বলে একসঙ্গে চিৎকার জুড়ে দিল। গুণধর বলল, পিসেমশাই তা হলে কী করবেন? এতো বড়ো সর্বনেশে খবর। পুলিশে খবর দেবেন?
খেপেছিস? জীবনে একবারই সুযোগ এসেছে। আর হয়তো কখনও আসবে না। শোন, একটা কথা জেনে রাখিস, একটু আধটু হার্টের প্রব্লেম না থাকলে, একটু আধটু সুগার কিম্বা স্পন্ডিলাইটিস না থাকলে যেমন স্ট্যাটাস থাকে না, তেমনই বাড়িতে চিঠি দিয়ে ডাকাত ফাকাত না পড়লে লোকে তেমন মান্যি করে না।
গিন্নির কান্না এতক্ষণে থেমে গেছে। ঝাঁপিয়ে উঠে বললেন, থাকো তুমি তোমার পেয়ারের ডাকাত যাকাত নিয়ে। ব্যা ব্যা, কী কুচ্ছিত নাম সব। অবগলানন্দ, মহাবলীপুরম এগুলো নাম নাকি? যা হয় করো। আমি গুনোকে নিয়ে চল্লাম দাদার কাছে। যার ছেলে তাকে ফিরিয়ে দিয়ে শান্তি পাই।
বিজয়কেতন হাত দুটো কাঁধের ওপর তুলে ডাম্বেল ভাঁজার ভাব করে হাসতে হাসতে বললেন, খামোকা ঘাবড়াচ্ছ। ডাকাত মানে কী খারাপ নাকি! ভালো, শিক্ষিত ডাকাতও তো হয়, না কি? দাদার কাছে যাওয়ার দরকার কী?
তা ছাড়া গুনো কি আমাকে একা ফেলে যাবে নাকি? ও একটা ইয়ংম্যান। সাহসী ছেলে। কীরে গুনো, থাকবি না আমার সঙ্গে? ডাকাতের কথা তো এতকাল খগেন মিত্তিরের বইতেই পড়েছিস। আসল ডাকাত কেমন হয় দেখে নে একবার।
বলছিলাম কি পিসেমশাই, আপনি কি সিন্দুকের টাকাকড়ি সোনাদানা রুপোর বাসন কোশন সব ডাকাতদের দিয়ে দেবেন ?
তা ছাড়া কী? বললাম না ওয়ান্স ইন অ্যা লাইফ অপোরচুনিটি। মিস করলে চলবে? ব্রিগেডিয়ার বিজয়কেতন মুখোটির দিল যে কত বড়ো হাড়ে হাড়ে টের পাবে বাছারা । নিরাপদ, প্রাণকেষ্ট, মালতীর মা, কালিকিংকর, বংশীটা কোথায় পালাল আবার, যাক গে ছাড়, হ্যাঁ, শোন সবাই, চিন্তার কোনো কারণ নেই। আমি থাকতে তোদের কোনো ক্ষতি হবে না। বরং লাভই হবে।
আমার দুখানা সিন্দুকে যা সোনাদানা হিরে মানিক আছে তা ওই পাঁচ পিস প্যাংলাকার্তিক ডাকাত নিতে পারবে না, যতই তাদের অমিতেজানন্দ, মহাবলানন্দ, বিশ্বপরাক্রমানন্দ নাম হোক না কেন। বলছিলাম কী এই সুযোগে তোদেরও কিছু লাভ হবে। মেঝে থেকে কুড়িয়ে যা পাবি তাই তোদের রাখার জায়গা নেই।
গিন্নি মুখ ঝামটে বলে উঠলেন, চালাকি পেয়েছ। সব বিলিয়ে দেবে? আমার বাবার দেওয়া মকরচূড় মুকুট, সীতাহার, ললন্তিকা, ময়ূরকঙ্কণ, বিছেকবচ এগুলো বিলিয়ে দিলে দেখাব মজা ।
বিজয়কেতন মুচকি হেসে বললেন, তোমার বাবার কথা আর তুলো না তো, কতকগুলো পেতলের ছাইপাঁশ দিয়ে মেয়েটাকে গছিয়ে দিয়েছেন। নেহাত আমি মকরকেতন মুখোটির ছেলে ব্রিগেডিয়ার বিজয়কেতন মুখোটি, তাই এ যাত্রা বেঁচে গেলে। তোমার ওই ছাতাপড়া গয়না অমন অ্যারিস্টোক্রাট বিলেতফেরত ডাকাতরা ছুঁয়েও দেখবে না।
আচ্ছা আচ্ছা, দেখা যাবে বুধবার। আঁশবটি দিয়ে কচুকাটা করব তোমার পেয়ারের বগলাকান্ত ডাকাতদের। অদ্ভুত ডাকাতির গল্প
“মালতীর মা দুটো পান দে। চিবিয়ে নিয়ে ঠাকুরঘরে যাব।” গিন্নিমা দাপাতে দাপাতে বিদায় নিলেন।
বিজয়কেতন হোঃ হোঃ করে হেসে উঠলেন। নামটাও ঠিকমতো উচ্চারণ করতে পারে না। কোথায় অমঙ্গলানন্দ, আর কোথায় বগলাকান্ত। কোথায় মহাবলানন্দ, আর কোথায় মহাবলীপুরম। বাপের বাড়িতে কখনো ডাকাত পড়েনি তো, তাই অভিজ্ঞতা নেই। হিংসেয় জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে।
সারাদিন বাড়িতে একটা থমথমে ভাব। বিকেলবেলায় বিজয়কেতন সব কর্মচারীদের ডেকে ছোটোখাটো মিটিং করে নিলেন। কার কী কাজ বুঝিয়ে দিলেন। গুণধরকে ডাকেননি। ওকে আগেই বলে রেখেছিলেন বিকেল পাঁচটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে নিতে। Odvut Dakatir Golpo
কাজের লোকদের নির্দেশ দিলেন যে যার ঘরে খেয়ে দেয়ে বিশ্রাম নিতে। ডাকাতদের সামনে যাওয়ার দরকার নেই। ডাকাত হল দেবতা। কিছু অনর্থ হলে বিপদ আসতে পারে। দারোয়ানকে বললেন সদরের গেটটা পুরো খুলে রাখতে। অদ্ভুত ডাকাতির গল্প
গেট বন্ধ দেখলে ডাকাতরা অপমানিত বোধ করতে পারে। বাড়ির সমস্ত আলো জ্বেলে দিতে বললেন। ফ্রিজ, টিভি, ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদির প্লাগ খুলে রাখতে বললেন, যাতে ডাকাতদের কোনো অসুবিধা না হয়। Odvut Dakatir Golpo
ঢং ঢং করে দুটো ঘণ্টা বাজল। মাথায় টুপি আর আলোয়ান গায়ে দিয়ে বারান্দায় বসে আছেন বিজয়কেতন। সদরের লোহার গেটটা হাট করে খোলা। সারা বাড়ি সুনসান। আর মাত্র কুড়ি মিনিট। তারপরেই মাহেন্দ্রক্ষণ। জীবনের স্মরণীয় মুহূর্ত।
বিজয়কেতন হাতঘড়ির দিকে তাকালেন। দুটো বেজে আঠারো। আর দু মিনিট একশো কুড়ি সেকেন্ড মাত্র। সিন্দুকের চাবির গোছাটা পাঞ্জাবির পকেট থেকে বের করে গোল টেবিলটার ওপরে রাখলেন। চারিদিক নিস্তব্ধ। অদ্ভুত ডাকাতির গল্প
শুধু পকেটঘড়ির টিকটিক শব্দ শোনা যাচ্ছে। বাইরে একসঙ্গে অনেকগুলো কুকুর ডেকে উঠল। ধুপধাপ পায়ের শব্দ কানে এল। বিজয়কেতন উঠে দাঁড়ালেন। দুটো কুড়ি।
হঠাৎ পায়ের ওপর ধপাস করে কেউ আছড়ে পড়ল। বিজয়কেতন দেখলেন গুণধর তাঁর পা জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। পিসেমশাই, অন্যায় করে ফেলেছি, বুঝতে পারিনি। এবারের মতো মাফ করে দিন। আর কক্ষনো করব না।
বিজয়কেতন দু হাতে গুনোকে তুলে বললেন। মাপ তোকে আমি চিঠিটা পাওয়া মাত্রই করে দিয়েছি। পড়েই বুঝেছি। তোর মতো অপদার্থ গণ্ডমূর্খ ছাড়া এ আর কারোর মাথা থেকে বেরোবে না। দু-লাইন চিঠি লিখতে চোদ্দোটা বানান ভুল।
আর চলবি পিসির বুদ্ধিতে? এটুকু তোদের দুজনের কারোর মাথাতেই এল না যে এখনকার যুগে, মানে ইনটারনেট, মোবাইল ফোন, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার যুগে চিঠি দিয়ে ডাকাতি হয়? এখন হচ্ছে চেম্বারের যুগ। রগে ঠেকাও, ক্লিক করে ঠুকে দাও। খেল খতম। চিঠি দিয়ে ডাকাতি।
ছোঃ, তোর পিসিকে বলে দে যেন আমার সঙ্গে টক্কর দিতে না আসে। আর ওর ফিনফিনে পেতলের গয়নাগুলো যেন আমার সিন্দুকে না রেখে চালের টিনের মধ্যে রেখে দেয়।
এক এক করে বংশী, নিরাপদ, প্রাণকেষ্ট, মালতীর মা, মোহনানন্দ সবাই এসে হাজির। কারোর চোখেমুখে কোনো বিস্ময়ের লেশমাত্র নেই। গিন্নিমা মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছেন। অদ্ভুত ডাকাতির গল্প
বিজয়কেতন বললেন, আরে বাবা, আমার ওপর ডাকাতি করা কি সহজকথা? তা ছাড়া দরকারই বা কী? দুদিন বাদে আমি চোখ বুজলে সবই তো তোর। তুইও তো আমাদের ছেলে। পুষ্যিপুত্রও তো পুত্র, নাকি?
তবে হ্যাঁ, সব থেকে বড়ো ডাকাতি তো আমিই করলাম। ডা-কা-তি মানে জানিস? ডান কানে তিল। আমার ডান কানে তিলটা দেখেছিস? এটার জন্য আর কেউ ডাকাতি করার সাহস পায় না? যাক, রাত শেষ হয়ে এল। হিম পড়ছে। সবাই শুয়ে পড়ো। অদ্ভুত ডাকাতির গল্প
আর হ্যাঁ মালতীর মা, এককাপ কড়া করে কফি করে আন। আর তোর গিন্নিমার জন্যে দুটো পান । Odvut Dakatir Golpo, Odvut Dakatir Golpo, Odvut Dakatir Golpo, Odvut Dakatir Golpo
নিত্য নতুন সকল আপডেটের জন্য জয়েন করুন
If any objections to our content, please email us directly: helptrick24bd@gmail.com