আজকের আর্টিকেলে আমরা জানতে পারব উপনিবেশবাদ কি? এবং নব উপনিবেশবাদ কাকে বলে? এসব কিছুর বিস্তারিত।
উপনিবেশবাদ কাকে বলে?
বাংলা ছিল ইংল্যান্ডের উপনিবেশ। যখন কোন দেশ অন্য দেশকে দখল করে তখন তাদের ঐতিহ্য অনুযায়ী দেশটি পরিচালনা করে তা উপনিবেশবাদ নামে পরিচিত।
উপনিবেশবাদ হলো এক ধরনের শাসনব্যবস্থা, যার মাধ্যমে কোন দেশকে বৃহৎ শক্তিশালী দেশ দ্বারা পরিচালিত হওয়াকে বুঝায়। বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো ক্ষুদ্র ও দুর্বল দেশকে দখল করে উপনিবেশিক শাসন কায়েম করতেন।
উপনিবেশবাদ : প্রাচীনকালে উপনিবেশবাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ শাসন ব্যবস্থা ছিল। উপনিবেশবাদের ইংরেজী প্রতিশব্দ Colonialism Colonialism শত্রুটি ল্যাটিন শব্দ Colonia হতে উৎপত্তি লাভ করেছে। এর অর্থ মানব সমাজের একটি স্থানান্তরিত অংশ।
উপনিবেশিকতার আধুনিক অর্থ হলো এক জাতির উপর অন্য জাতির আধিপত্য বিস্তার। যখন একটি দেশ অন্য দেশে বসবাস করে এবং নিজেদের সভ্যতা ও সংস্কৃতি অনুযায়ী সেই দেশকে গড়ে তোলার চেষ্টা করে তখন তাকে উপনিবেশবাদ বলে। ইংল্যান্ড বিভিন্ন দেশকে তাদের উপনিবেশবাদে পরিণত করেছিলেন। ভারতবর্ষ ইংল্যান্ডের উপনিবেশ ছিল।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা:
বিভিন্ন বিজ্ঞানী উপনিবেশবাদকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিম্নে উপনিবেশবাদের সংজ্ঞাসমূহ উল্লেখ করা হলো :
রুপার্ট এমারসন-এর মতে, উপনিবেশবাদ হলো কোন বিদেশি জনসাধারণের উপর দীর্ঘ সময় ধরে শাসন প্রতিষ্ঠা এবং তা বজায় রাখার ব্যবস্থা।
ই. এম. উইনসলো-এর মতে, উপনিবেশবাদ বলতে এমন এক ভূ-খণ্ড অধিকারকে বুঝিয়েছেন যেখানে বসবাসের নতুন স্থান লাভ করাই ইউরোপীয়দের ইচ্ছা ছিল এবং যেখানে দ্বন্দ্ব-বিরোধ এই ইচ্ছারই আনুষঙ্গিক এমনকি অপ্রয়োজনীয় ঘটনা ছিল এবং যেখানে এই দ্বন্দ্ব বিরোধ এই ইচ্ছার চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
জে. এ. হরসন-এর মতে, সঠিকতম অর্থে উপনিবেশবাদ হচ্ছে জাতীয়তাবাদের এক বহিঃসম্প্রসারণ, উপনিবেশবাদীরা যে নতুন প্রাকৃতিক এবং সামাজিক পরিবেশে উপনিবেশ স্থাপন করেন সেখানে তাদের নিজস্ব সভ্যতাকে অনুপ্রবিষ্ট করার যে ক্ষমতা তাদের রয়েছে সেটাই উপনিবেশবাদ নির্ধারণের মানদণ্ড।
টাউনসেন্ড ও পিক-এর মতে, উপনিবেশবাদ বলতে এক বিশেষ ধরনের শোষণকেই বুঝায়।
A. G. Frank;ঞর মতে, উপনিবেশবাদ হলো বিভিন্ন জনপদের মধ্যে আধিপত্যের জোরালো সম্পর্ক।
ব্রিটিশরা ভারতবর্ষকে দুইশত বছর শাসন করে। বাংলা ছিল ব্রিটিশদের উপনিবেশ। ব্রিটিশরা তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি দ্বারা বাংলা শাসন করতেন। ব্রিটিশদের প্রভাবে বাংলার অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক দিক পরিবর্তিত হয়।
প্রাচীনকালে বৃহৎ দেশগুলো ছোট দেশকে দখল করে উপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠান করেন। বর্তমানে উপনিবেশিক শাসনব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়েছে। পৃথিবীতে স্বাধীন রাষ্ট্রের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। উপনিবেশ থেকে বের হয়ে আজ বাংলাদেশ স্বাধীন
নব উপনিবেশবাদ কাকে বলে?
বর্তমান বিশ্বের বৃহৎ ও শক্তিধর দেশগুলো ক্ষুদ্র ও দুর্বল দেশগুলোর উপর সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ইত্যাদি দিক দিয়ে চাপ ও শোষণ করে তা নব উপনিবেশবাদ নামে পরিচিত।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উপর শক্তিধর দেশগুলো নব উপনিবেশিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে আসছে। বিশ্বের ছোট ছোট দেশগুলো পরিচালনা ও চাপ প্রয়োগে এই শাসনব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম।
নব উপনিবেশবাদ :
একটি দেশের উপর অন্য দেশের যেকোন ধরনের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবকেই নব উপনিবেশবাদ বলে।
ছোট ছোট দেশকে বাণিজ্য ও সাহায্য নীতির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করার অন্যতম মাধ্যম নব উপনিবেশবাদ। উপনিবেশিক শোষণ এবং প্রাধান্য বিস্তারের উদ্দেশ্যকে বজায় রাখার অন্যতম হাতিয়ার নব উপনিবেশবাদ ।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা :
বিভিন্ন বিজ্ঞানী নব উপনিবেশবাদকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিম্নে তাদের প্রদত্ত সংজ্ঞাগুলো উল্লেখ করা হলো :
জোহান গালতুং-এর মতে, নব্য উপনিবেশবাদ হলো বিভিন্ন জনগণের মধ্যে এক ধরনের আধিপত্যের সম্পর্ক। অধ্যাপক চার্লস-এর মতে, নব্য উপনিবেশবাদ বলতে অন্য দেশের স্বাধীনতার উপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণকে বুঝায় ।
বি. জি. হুয়েন-এর মতে, একটি দেশের উপর অন্য দেশের যেকোন ধরনের রাজনৈতিক অথবা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাবই হচ্ছে নব্য উপনিবেশবাদ ।
পরিশেষে বলা যায় যে, নব উপনিবেশ একটি নতুন শাসনব্যবস্থা, যার সাহায্যে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলো ছোট ছোট দেশগুলো পরিচালনা করে থাকে।
আধুনিক বিশ্বের উপনিবেশদের প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, জার্মানি, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড রাষ্ট্রগুলো নব উপনিবেশক শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করে থাকে।
নিত্য নতুন সকল আপডেটের জন্য জয়েন করুন
If any objections to our content, please email us directly: helptrick24bd@gmail.com