Follow Our Official Facebook Page For New Updates
বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগ: চর্যাপদ (বিস্তারিত ব্যাখ্যাসহ জানুন)
প্রাচীন যুগ : চর্যাপদ
'চর্যাপদ' বাংলা কাব্য গগনের শুকতারা। শুকতারা যেমন নতুন প্রভাতের বার্তা ঘোষণা করে তেমনি 'চর্যাপদ' সম্ভাবনাময় বিরাট বাংলা সাহিত্যের শুভ সূচনার ইঙ্গিত বহন করে এনেছে । বাংলা ভাষায় লেখা প্রাচীনতম সাহিত্যিক দৃষ্টান্ত হিসেবে 'চর্যাপদ' নামে বৌদ্ধতান্ত্রিক পদসংকলন উপস্থাপিত করা যায়।
চর্যাগীতিকাগুলো বৌদ্ধ সহজিয়াদের আধ্যাত্মিক সাধন সংগীত। চর্যাপদের ভাব ও ভাষা দুই-ই বাঙালির। শুধু বাংলা ভাষা কেন, সমস্ত পূর্বভারতের নব্যভাষার প্রথম গ্রন্থ 'চর্যাচর্যবিনিশ্চয়'। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে চর্যাপদের রচনাকাল ৬৫০ থেকে ১২০০ খ্রিষ্টাব্দ।
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এর মতে চর্যাপদের রচনাকাল ৯৫০ থেকে ১২০০ খ্রিষ্টাব্দ। ড. সুকুমার সেনের মতে চর্যাপদের রচনাকাল ৯০০ থেকে ১৩৫০ খ্রিষ্টাব্দ । আধুনিক পণ্ডিতদের মতে গ্রন্থটির প্রকৃত নাম 'চর্যাগীতিকোষ'।
বাংলার পাল বংশের রাজারা বৌদ্ধ ছিলেন। তাঁদের আমলে চর্যাগীতিকাগুলোর বিকাশ ঘটেছিল। সেন রাজাদের প্রতাপের জন্যই বাংলাদেশের বাইরে গিয়ে তাদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে হয়েছিল। তাই বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন বাংলাদেশের বাইরে নেপালে পাওয়া গেছে।
চর্যাপদ আবিষ্কারের প্রেক্ষাপট :
পাঞ্জাবের মহারাজা রণজিৎ সিংহের পুরোহিত পুত্র রাধাকিষণ ১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের সকল ভাষার পুথি সংরক্ষণের জন্য লর্ড লরেন্সকে অনুরোধ জানায়। লরেন্স প্রাদেশিক গভর্নরদের সাথে পরামর্শ করে পুথি সংগ্রহের ব্যবস্থা করেন।
বঙ্গীয় এশিয়াটিক সোসাইটি 'বিবিধার্থ পত্রিকা'র সম্পাদক রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্রের সাহায্যে পুথি সংগ্রহের কাজ শুরু করেন। রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র নেপাল গিয়ে সংস্কৃত ভাষায় রচিত অনেকগুলো বৌদ্ধ ধর্ম ও সাহিত্যের পুঁথি প্রাপ্ত হন এবং ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে 'Sanskrit Buddhist Literature in Nepal' গ্রন্থে সেগুলোর একটি তালিকা প্রকাশ করেন।
চর্যাপদ আবিষ্কার :
[৩৪, ৩৩, ২৮, ২৭তম বিসিএস লিখিত]
১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দে রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্রের মৃত্যুর পর বঙ্গীয় এশিয়াটিক সোসাইটি প্রদত্ত দায়িত্ব পেয়ে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৮৯৭ ও ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে দুইবার নেপালে যান। ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে তৃতীয়বারের মতো নেপালে গিয়ে নেপালের রাজ দরবারের গ্রন্থশালা (রয়েল লাইব্রেরি) থেকে চর্যাপদ সহ হাতে লেখা চারটি গ্রন্থ আবিষ্কার করেন। গ্রন্থ চারটি হলো -
(১) চর্যাচর্যবিনিশ্চয়
(২) সরহপাদের দোহা
(৩) কৃষ্ণপাদের দোহা
(৪) ডাকার্ণব।
✉ চর্যাপদ প্রকাশ:
(২৭তম বিসিএস লিখিত]
- হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর সম্পাদনায় ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে (১৩২৩ বঙ্গাব্দ) কলকাতার বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে গ্রন্থ চারটি "হাজার বছরের পুরান বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধ গান ও দোহা” নামে প্রকাশিত হয়। গ্রন্থ চারটির মধ্যে কেবল চর্যাপদের ভাষা বাংলা। বাকিগুলো অপভ্রংশ ভাষায় রচিত। চর্যাপদ প্রকাশের পর অসমিয়া, উড়িয়া, মৈথিলী ও হিন্দি ভাষার পণ্ডিতেরা তাঁদের ভাষার নিদর্শন বলে দাবি করেন।
- হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর উপাধি মহামহোপাধ্যায় এবং শাস্ত্রী। পারিবারিক পদবি ভট্টাচার্য। ১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দে সংস্কৃত কলেজ থেকে একমাত্র ছাত্র হিসেবে প্রথম বিভাগে পাশ করে শাস্ত্রী। উপাধি লাভ করেন। ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মহামহোপাধ্যায় উপাধি লাভ করেন ।
- ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে বিজয়চন্দ্র মজুমদার 'The History of the Bengali Language' গ্রন্থে চর্যাপদের ভাষা নিয়ে প্রথম গবেষণা করেন। তিনি চর্যার ভাষাকে খিচুড়ি ভাষার সমষ্টি বলে মত প্রকাশ করেন।
- ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় 'The Origin and Development of the Bengali Language' (ODBL) গ্রন্থে ভাষাতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করে সর্বপ্রথম প্রমাণ করেন চর্যাপদের ভাষা বাংলা। তাঁর মতে চর্যাপদের ভাষার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের প্রাচীন কথ্য ভাষার প্রভাব রয়েছে।
- ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ চর্যাপদের ধর্মমত সম্পর্কে প্রথম আলোচনা করেন এবং ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি চর্যাপদের সঠিক পাঠ নির্দেশ করেন।
- চর্যাপদের তিব্বতি অনুবাদের সংবাদ প্রথম দিয়েছিলেন ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধায় । সংগীত অনুবাদকের নাম কীর্তিচন্দ্র।
- ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচী চর্যাপদের তিব্বতি অনুবাদ সংগ্রহ করে প্রকাশ করেন ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে।
- ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে ড. শশিভূষণ দাশগুপ্ত চর্যাগীতির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন।
- চর্যাপদ রচনা করেছেন: বৌদ্ধ সহজিয়া সাধকগণ। এগুলো ছিল তাদের সাধন সঙ্গীত।
- বিহারের পণ্ডিত রাহুল সাংকৃত্যায়ন 'চর্যাগীতি' নিয়ে হিন্দি ও ইংরেজিতে প্রচুর গবেষণা করেন।
- ড. তারাপদ মুখোপাধ্যায় চর্যাপদ থেকে বিশেষ্য, সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের রূপ এবং বাক্যগঠনরীতির স্বরূপ দৃষ্টান্ত যোগে দেখিয়েছেন।
- চর্যাপদের অনুলিপির লিপিকাল বার শতক বলে পণ্ডিতগণ অনুমান করেন।
- চর্বাপন বৌদ্ধ সহজিয়াদের বাংলা ভাষায় রচিত গীতিকবিতা। সহজিয়া মতের প্রবর্তক মীননাথ বা মৎসেন্দ্রনাথ।
- চর্যা অর্থ- পালনীয়, আচরণীয়, অনুষ্ঠেয়।
- অচর্য পালনীয় নয়, আচরণীয় নয়।
- 'বিনিশ্চয়' – নিশ্চিত ভাবে জানা।
- "দোঁহা : প্রাচীন বাংলার অপভ্রংশ ও মধ্যযুগের হিন্দিতে রচিত দুই চরণ বিশিষ্ট পদ।
- চর্যাপদের সংকলক : কানু।
- চর্যার পুঁথিটি বঙ্গাক্ষরে লিপিকৃত এবং বাঙালির লেখা বলে অনুমান করা হয়।
- চর্যার কালে বাংলা ও বাঙালির জীবনে মূল অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি ছিল কৃষিভিত্তিক।
- চর্যাপদের রচনা শুরু হয়: পাল যুগে ।
- চর্যাপদে উঠে এসেছে বাংলাদেশের বাঙালি জীবন ।
- কবিরা নামের শেষে গৌরবসূচক উপাধি 'পাদানাম' বা 'পা' সংযুক্ত করতো।
- চর্যাপদের ইংরেজি অনুবাদ করেছেন পল্লিকবি জসীমউদ্দীনের কন্যা হাসনা জসীম উদ্দীন মওদুদ। বইটির নাম 'মিস্টিক পোয়েট্রি অব বাংলাদেশ' (২০১৭)।
পিডিএফে আরো যা যা জানতে পারবেন:
- চর্যাপদের নামকরণ নিয়ে নানা মত
- উল্লেখযোগ্য কয়েকজন পদকর্তা
- চর্যাপদে ব্যবহৃত প্রবাদ বাক্য
- কিছু গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ
- চর্যাপদের ভাষা
- চর্যাপদের সমাজচিত্র
- চর্যাপদের ধর্মমত
- নতুন চর্যাপদ। ইত্যাদি
বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগ: চর্যাপদ, বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগের সময়কাল, বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগ pdf, বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগ mcq
নিত্য নতুন সকল আপডেটের জন্য জয়েন করুন
Telegram Group
Join Now
Our Facebook Page
Join Now
Class 8 Facebook Study Group
Join Now
Class 7 Facebook Study Group
Join Now
Class 6 Facebook Study Group
Join Now
If any objections to our content, please email us directly: helptrick24bd@gmail.com