নামায ভঙ্গের কারণ সমূহ - সালাত ভঙ্গের ১৯টি কারণ দলিলসহ

Follow Our Official Facebook Page For New Updates


Join our Telegram Channel!

নামায ভঙ্গের কারণ সমূহ দলিলসহ - 19 reasons for breaking Salat

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে, যারা নামায পড়ে রিগুলার কিন্তু নামায ভঙ্গের কারণ গুলো সম্পর্কে যথাযথ ভাবে অবগত নয়। একজন মুসলিম হিসেবে সালাত ভঙ্গের কারণ সমূহ জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরী। তাই আজ আপনাদের সালাত কি কি কারণে ভঙ্গ হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দিব।

নামায ভঙ্গের কারণ সমূহ - সালাত ভঙ্গের ১৯টি কারণ দলিলসহ
নামায ভঙ্গের কারণ সমূহ

সালাত ভঙ্গের ১৯টি কারণ | যে সকল কারণে নামায ভেঙে যায়

চলুন জেনে নেওয়া যাক নামায ভঙ্গের ১৯ টি কারণ কি কি

১. নামাজে অশুদ্ধ পড়া: 

 নামাজের ভেতর কিরাতে যদি এমন পরিবর্তন হয়, যার ফলে কোরআনের অর্থ ও উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ পাল্টে যায়, তাহলে নামাজ ভেঙে যাবে, আবার তা আদায় করা ওয়াজিব হবে। 

(ফাতাওয়ায়ে শামী : ১/৬৩৩-৬৩৪, ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী ১/৮০, ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ৩/৩৪৪)।


২. নামাজের ভেতর কথা বলা: 

নামাজে এমন কোনো অর্থবোধক শব্দ করা, যা সাধারণ কথার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। (হোক সেটা এক অক্ষর বা দুই অক্ষরে ঘটিত) তাহলে নামাজ ভেঙে যাবে।

(ফাতাওয়ায়ে শামী ১/৬১৩, আল বাহরুর রায়েক : ২/২)


মুআবিয়াহ ইবনুল হাকাম আস সুলামি (রা.) নওমুসলিম অবস্থায় নামাজে কথা বললে রাসুল ﷺ নামাজের পর তাঁকে বলেন, ‘নামাজের মধ্যে কথাবার্তা ধরনের কিছু বলা যথোচিত নয়। বরং প্রয়োজনবশত তাসবিহ, তাকবির বা কোরআন পাঠ করতে হবে।’ 

(মুসলিম : ৫৩৭)


৩. কোনো লোককে সালাম দেওয়া: 

নামাজরত অবস্থায় কোনো লোককে সালাম দিলে নামাজ ভেঙে যায়। 

 (ফাতাওয়ায়ে শামী ২/৯২, আল বাহরুর রায়েক ২/১২০)


৪. সালামের উত্তর দেওয়া:

নামাজরত অবস্থায় কারো সালামের উত্তর দেওয়া নামাজ ভঙ্গকারী কাজ। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল ﷺ আমাকে তাঁর একটি কাজে পাঠিয়েছেন, আমি গেলাম ও কাজটি সেরে ফিরে এলাম। অতঃপর নবী করিম ﷺ -কে সালাম করলাম। তিনি জবাব দেননি। এতে আমার মনে এমন খটকা লাগল, যা আল্লাহই ভালো জানেন। আমি মনে মনে বললাম, সম্ভবত আমি বিলম্বে আসার কারণে নবী ﷺ আমার ওপর অসন্তুষ্ট হয়েছেন। আবার আমি তাঁকে সালাম করলাম; তিনি জবাব দিলেন না। ফলে আমার মনে প্রথমবারের চেয়েও অধিক খটকা লাগল। (নামাজ শেষে) আবার আমি তাঁকে সালাম করলাম। এবার তিনি সালামের জবাব দিলেন ও বললেন, ‘নামাজে ছিলাম বলে তোমার সালামের জবাব দিতে পারিনি। তিনি তখন তাঁর বাহনের পিঠে কিবলা থেকে অন্য মুখে ছিলেন।’ 

(বুখারি : ১২১৭)


৫. উহ্-আহ্ শব্দ করা:

নামাজরত অবস্থায় কোনো ব্যথা কিংবা দুঃখের কারণে উহ্-আহ্ শব্দ করলে নামাজ ভেঙে যাবে। 

(আদ্দুররুল মুখতার ১/৬১৯, আল বাহরুর রায়েক ২/৪, মারাকিল ফালাহ ১/১২১)


৬. বিনা ওজরে কাশি দেওয়া:

অপ্রয়োজনে কাশি দেওয়ার দ্বারাও নামাজ ভেঙে যায়। (ফাতাওয়ায়ে শামী ৩/৬১৮, মারাকিল ফালাহ ১/১২১, আল বাহরুর রায়েক ২/৫)


৭. আমলে কাসির করা:

ফিকাহবিদরা আমলে কাসিরের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন। তার মধ্যে বিশুদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য মত হলো, কোনো মুসল্লি এমন কাজে লিপ্ত হওয়া, যার কারণে দূর থেকে কেউ দেখলে তার মনে প্রবল ধারণা জন্মে যে ওই ব্যক্তি নামাজরত নয়। (ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত ৩/৪৮৫, ফাতাওয়ায়ে শামী ১/৬২৪-৬২৫, বায়েউস সানায়ে ১/২৪১)


৮. বিপদে কিংবা বেদনায় শব্দ করে কাঁদা: 

দুনিয়াবি কোনো বিপদ-আপদ কিংবা দুঃখের কারণে শব্দ করে কাঁদলে নামাজ ভেঙে যায়।  

(হাশিয়াতু তাহতাবি ১/৩২৫, ফাতাওয়ায়ে শামী ১/৬১৯, নূরুল ইজাহ, পৃ. ৬৮)


৯. তিন তাসবিহ পরিমাণ সতর খুলিয়া থাকা:

নাভির নিচ থেকে হাঁটু পর্যন্ত শরীরের কোনো স্থান যদি তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় অনাবৃত থাকে, তাহলে তার নামাজ হবে না। তাই যদি কোনো ব্যক্তির গেঞ্জি, শার্ট বা প্যান্ট নাভির নিচ থেকে রুকু সিজদার সময় সরে গিয়ে তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় এভাবে অতিবাহিত হয়, তাহলে তার নামাজ ভেঙে যাবে। 

(ফাতওয়ায়ে শামী ১/২৭৩, কাফি ১/২৩৮, মাওয়াহিবুল জলীল ১/৩৯৮, মুগনিল মুহতাজ ১/১৮৮, হাশিয়াতুত তাহতাবি ১/৩৩৭)

    

নারীদের মাথাও সতর। কোনো কারণে মাথার ওড়না সরে গেলে নামাজ ভেঙে যাবে। নবী পাক ﷺ ইরশাদ করেছেন,  ‘কোনো প্রাপ্তবয়স্ক নারী ওড়না ছাড়া নামাজ আদায় করলে আল্লাহ তার নামাজ কবুল করেন না।’ 

(আবু দাউদ : ৬৪১, তিরমিজি : ৩৭৭, ইবনে মাজাহ : ৬৫৫)


১০. মুক্তাদি ছাড়া অন্য ব্যক্তির লোকমা (ভুল সংশোধন) লওয়া:

যেমন—ইমাম সাহেব কিরাতে ভুল করছেন, সঙ্গে সঙ্গে নামাজের বাইরের কোনো লোক লোকমা দিলে তা গ্রহণ করা। 

(ফাতাওয়ায়ে শামী ১/৬২২, ফাতাওয়ায়ে আলগীরী ১/৯৮)


১১. সুসংবাদ বা দুঃসংবাদে উত্তর দেওয়া: 

সুসংবাদ অথবা দুঃসংবাদের উত্তর দেওয়া দুনিয়াবি কথার শামিল, তাই এর দ্বারা নামাজ ভেঙে যায়। 

(ফাতাওয়ায়ে শামী ১/৬১৩, আল বাহরুর রায়েক ২/২)


১২. নাপাক জায়গায় সেজদা করা: 

নামাজের জায়গা পবিত্র হওয়া জরুরি। অর্থাৎ নামাজ পড়ার সময় নামাজি ব্যক্তির শরীর যেসব জায়গা স্পর্শ করে, সে জায়গাগুলো পবিত্র হওয়া, যা নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য অপরিহার্য শর্ত। তাই নাপাক বা অপবিত্র জায়গায় সেজদা করলে নামাজ ভেঙে যাবে। 

(বাদায়েউস সানায়ে ১/১১৫, আল বাহরুর রায়েক ২/৩৭, তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৯৫)


১৩. কিবলার দিক থেকে সিনা ঘুুরে যাওয়া: 

কোনো কারণে কিবলার দিক থেকে সিনা (বুক) ঘুরে গেলে নামাজ ভেঙে যায়। তবে যানবাহনে নামাজের ক্ষেত্রে মাসআলা ভিন্ন।  

(মারাকিল ফালাহ ১/১২১, নূরুল ঈজাহ ১/৬৮)


১৪. নামাজে কোরআন শরিফ দেখে পড়া: 

নামাজরত অবস্থায় কোরআন শরিফ দেখে দেখে পড়লে নামাজ ভেঙে যায়। 

(মারাকিল ফালাহ ১/১২৪, হাশিয়াতুত তাহতাবি ১/৩৩৬)


১৫. নামাজে শব্দ করে হাসা:

 নামাজে শব্দ করে অট্টহাসি দিলে ওজুসহ ভেঙে যায়। 

(কানযুদ্দাকায়েক ১/১৪০)


১৬. নামাজে সাংসারিক কোনো বিষয় প্রার্থনা করা: 

নামাজরত সাংসারিক/দুনিয়াবি কোনো দোয়া করলে হানাফি মাজহাব মতে নামাজ ভেঙে যায়। 

(ফাতাওয়ায়ে শামী ১/৬১৯, আল বাহরুর রায়েক ২/৩)। 


১৭. হাঁঁচির জবাব দেওয়া: 

নামাজরত অবস্থায় কারো হাঁঁচির (উত্তরে ইয়ারহামুকাল্লাহ বললে) উত্তর দেওয়া কথা বলার নামান্তর। এর দ্বারা নামাজ ভেঙে যায়। 

(ফাতাওয়ায়ে শামী ২/১১৭)


১৮. নামাজে খাওয়া ও পান করা:

নামাজরত অবস্থায় কিছু খেলে বা পান করলে নামাজ ভেঙে যায়। দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাবার নামাজরত অবস্থায় খেলেও নামাজ ভেঙে যাবে। 

(মারাকিল ফালাহ ১/১২১, নূরুল ঈজাহ ১/৬৮)


১৯. ইমামের আগে মুক্তাদি দাঁড়ানো:

মুক্তাদির পায়ের গোড়ালি ইমামের আগে চলে গেলে নামাজ ভেঙে যাবে। তবে যদি (দুজনের জামাতে নামাজের ক্ষেত্রে) মুক্তাদি ইমামের পায়ের গোড়ালির পেছনেই দাঁড়ায়, কিন্তু তিনি লম্বা হওয়ার কারণে তাঁর সিজদা ইমাম সাহেবকে অতিক্রম করে যায়, তাহলে তাঁর নামাজের কোনো ক্ষতি হবে না। 

(বাদায়েউস সানায়ে ১/১৫৯, আল মাবসুত লিস সারাখসি ১/৪৩)


উল্লেখ্য যে,

প্রসিদ্ধ এই ১৯টি ছাড়াও নামাজ ভঙ্গ হওয়ার আরো কারণ আছে। যেমন—কোনো প্রাপ্তবয়স্ক নারীর পাশে এসে নামাজে দাঁড়িয়ে যাওয়া, ইমামের আগে কোনো রোকন আদায় করে ফেলা, ইচ্ছাকৃত ওজু ভাঙার মতো কোনো কাজ করে ফেলা, পাগল, মাতাল কিংবা অচেতন হয়ে যাওয়া ইত্যাদি নামাজ ভঙ্গের কারণ।

নিত্য নতুন সকল আপডেটের জন্য জয়েন করুন

Telegram Group Join Now
Our Facebook Page Join Now
Class 8 Facebook Study Group Join Now
Class 7 Facebook Study Group Join Now
Class 6 Facebook Study Group Join Now

Post a Comment