বেনামাযির চরম শাস্তি দুনিয়া ও আখিরাতে (PDF)

Follow Our Official Facebook Page For New Updates


Join our Telegram Channel!

দুনিয়া ও আখিরাতে বেনামাযির শাস্তি (PDF) - বেনামাজির শাস্তি - বেনামাজির দুনিয়া ও আখেরাতের শাস্তি - নামায না পড়ার শাস্তি - Punishment for not praying

বেনামাযির চরম শাস্তি দুনিয়া ও আখিরাতে (PDF)

বে-নামাযীর চরম শাস্তি দুনিয়া ও আখিরাতে

মাওলানা মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দিন ক্বাদেরী


প্রিয় পাঠক, আজকে আপনাদের বে-নামাযীর দুনিয়া ও আখিরাতে চরম শাস্তি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করব, ইনশা-আল্লাহ। আশাকরি, পোস্টটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।

যে ব্যক্তি নামায আদায় করে না ইসলামে তার কোন অংশ নেই। হাদিস শরীফে বর্ণনা এসেছে- যার মধ্যে নামায নেই, তার মধ্যে দ্বীনের কোনো অংশ নেই। বে-নামাযী মাথাবিহীন মুসলমান। মানব দেহের জন্য যেমন মাথা আবশ্যক, ঠিক তেমনি মুসলমানের জন্য নামায আবশ্যক। ইমাম আজম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি'র মতে, বে-নামাযী নামায আদায় না করা পর্যন্ত তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে এবং তাকে জেলখানায় বন্দী রাখা ওয়াজিব। ইমাম মালেক ও ইমাম শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহিমার মতে, বে-নামাযী কাফের না হলেও সে বড় ফাসিক। তাকে তাওবা পড়িয়ে রীতিমতো নামায পড়ানোর জন্য প্রস্তুত করা আবশ্যক। যদি সে তওবা না করে তাকে হত্যা করা ফরয। নামায আদায় না করাকে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুফরি কাজ ও কাফিরের স্বভাব বলে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। দুনিয়া ও আখিরাতে বে-নামাযীর জন্য চরম শাস্তি অবধারিত।


বে-নামাযীর ঠিকানা নিশ্চিত জাহান্নাম 

পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,

مَا سَلَكَكُمْ فِي سَقَرَ قَالُوا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَدِّينَ


‘জাহান্নামীদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমাদেরকে কিসে জাহান্নামে নিয়ে এসেছে? তারা বলবে, আমরা নামাযী ছিলাম না।’

বে-নামাযী হাশরের ময়দানে চরমভাবে লাঞ্চিত ও অপমানিত

হাশরের ময়দানে সমবেত সকলকে সিজদা করার আদেশ দেয়া হবে। নামাযী বান্দাহরা আল্লাহর হুকুম তামিল করে সিজদায় লুটিয়ে পড়বে। কিন্তু সম্পূর্ণ সুস্থ থাকা সত্বেও দুনিয়াতে যারা নামায আদায় করে না, তারা সেদিন সিজদা করতে পারবে না। কারণ তাদের কোমর তক্তার মত শক্ত ও সোজা হয়ে থাকবে। লজ্জায় ও অনুতাপে তাদের দৃষ্টি নিম্নমুখী থাকবে। অপমান তাদেরকে আচ্ছাদিত করে রাখবে। মহান আল্লাহ পাক বলেন,
বেনামাজির শাস্তি - বেনামাজির দুনিয়া ও আখেরাতের শাস্তি - নামায না পড়ার শাস্তি - Punishment for not praying

‘যে দিন পায়ের গোছা উম্মুক্ত করা হবে এবং লোকদেরকে সিজদার জন্য আহ্বান করা হবে। তখন তারা সিজদা করতে পারবে না। তাদের চোখ লজ্জায় অধ: মুখী থাকবে। অপমান তাদেরকে আচ্ছাদিত করে ফেলবে। (কারণ) তাদেরকে (দুনিয়াতে) সিজদার দিকে আহ্বান করা হতো এমতাবস্থায় তারা সুস্থ ছিল।’


বে-নামাযী আল্লাহর জিম্মাদারী থেকে মুক্ত

হযরত মুয়ায ইবনে জাবল (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে দশটি বিষয়ে উপদেশ দিয়েছেন। তম্মাধ্যে একটি হল
বেনামাজির শাস্তি - বেনামাজির দুনিয়া ও আখেরাতের শাস্তি - নামায না পড়ার শাস্তি - Punishment for not praying

‘ফরয নামাযকে ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দিওনা। কেননা, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ফরয নামায ছেড়ে দেবে তার কাছ থেকে আল্লাহর জিম্মাদারী উঠে যাবে।’

বে-নামাযীর স্থান হবে কারূন, ফেরাউন, হামান ও উবাই ইবনে খালফের সাথে

হযরত আমর ইবনুল আস রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত,
বেনামাজির শাস্তি - বেনামাজির দুনিয়া ও আখেরাতের শাস্তি - নামায না পড়ার শাস্তি - Punishment for not praying

‘আর যে ব্যক্তি নামাযের প্রতি যত্নবান হবে না নামায তার জন্য নূর, দলীল এবং মুক্তিদানকারী হবে না। আর কিয়ামত দিবসে তার হাশর হবে কারূন, ফেরাউন, হামান ও উবাই ইবনে খালফের সাথে।’

বে-নামাযীকে কিয়ামতের দিন শুকরের চেহারায় উঠানো হবে

একদিন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা তাঁর সাহাবীদের সাথে বসে আছেন। এ সময় এক আরব্য যুবক কাঁদতে কাঁদতে মসজিদের দরজায় এসে দাঁড়াল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা জিজ্ঞাসা করলেন, হে যুবক! তুমি কাঁদছ কেন? সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা মৃত্যুবরণ
করেছেন। তাকে গোসল দেওয়ার এবং কাফন পরিধান করানোর কেউ নেই । তিনি হযরত আবু বকর ও ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে পাঠান। তারা গিয়ে দেখেন মৃত ব্যক্তির চেহারা কালো শুকরের ন্যায় হয়ে গেছে। তাঁরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর নিকট এসে আরয করলেন, আমরা তাকে কাল শুকরের ন্যায় দেখেছি। অতঃপর নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা মৃতের কাছে দাঁড়িয়ে দোয়া করেন ফলে সে পূর্বের ন্যায় হয়ে গেল। তারপর তিনি তার জানাযা পড়ালেন। লোকেরা তাকে দাফন করতে গিয়ে দেখেন তার চেহারা পুনরায় কাল হয়ে গেছে।
তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা যুবককে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তোমার পিতা দুনিয়াতে কি কাজ করত? যুবক বলল-
তিনি জীবদ্দশায় নামায তরককারী ছিলেন। অতঃপর নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা বললেন, হে আমার সঙ্গীরা! তোমরা বে-নামাযীর অবস্থা দেখ, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা বেনামাযীকে কাল শুয়রের ন্যায় উঠাবে। আমরা আল্লাহর কাছে তা থেকে আশ্রয় চাই।

বে-নামাযীর মাথা পাথরের আঘাতে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হবে

হযরত ছামুরা ইবনে জুনদুব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদা নবীজি ফজরের নামাযের পর এরশাদ করেন, হে আমার সাহাবাগণ!


বেনামাজির শাস্তি - বেনামাজির দুনিয়া ও আখেরাতের শাস্তি - নামায না পড়ার শাস্তি - Punishment for not praying

গত রাতে আমার নিকট আল্লাহর তরফ থেকে প্রেরিত দুইজন ফেরেস্তা এসে বলল, চলুন আমাদের সাথে। আমি তাদের সাথে চলতে লাগলাম। অবশেষে এমন এক স্থানে গিয়ে পৌঁছলাম, যেখানে একজন লোক শোয়া অবস্থায় রয়েছে। অপর ব্যক্তি একটি পাথর হাতে নিয়ে তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ঐ মুহুর্তে দেখলাম, দাঁড়ানো লোকটি তার হাতের পাথরখানা শায়িত লোকটির মাথায় সজোরে নিক্ষেপ করল। এতে শায়িত লোকটির মাথা চুর্ণ বিচূর্ণ হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল। অত:পর নিক্ষেপকারী পাথর খানা পুনরায় তুলে নিয়ে আসার জন্য গেল। এরই মাঝে আঘাতপ্রাপ্ত লোকটির মাথা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেল। অর্থাৎ একজন পাথর নিক্ষেপ করতে লাগল আর আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তি বারবার সুস্থ হয়ে যাচ্ছিল। এ অবস্থা দেখে আমি অবাক হয়ে ফেরেস্তাদের জিজ্ঞাসা করলাম, সুবহানাল্লাহ! এরা কারা? উত্তরে তারা বললেন, নিক্ষেপকারী হচ্ছে একজন ফেরেস্তা আর যার মাথায় নিক্ষেপ করা হচ্ছে সে একজন বে-নামাযী । সুন্নাত ও নফল তো দূরের কথা সে ফরয নামাযও আদায় করত না। বরং সে ঘুমিয়ে তথা অলসতায় সময় কাটাত।

বে-নামাযীর বুকের উপর কঠিনভাবে পাথর চাপা দেয়া হবে

হযরত আবু হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে, রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, সবুজ ক্ষেত থেকে সামনে কিছুদুর বোরাকে এগিয়ে যাবার পর আমাকে একদল বে- নামাযী দেখানো হলো। দেখলাম, তারা অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করছে। তাদের মধ্যে নারী-পুরুষ উভয় শ্রেণির লোক রয়েছে। তাদেরকে অত্যন্ত উত্তপ্ত মাটিতে ফেলে রাখা হয়েছে এবং বিরাট পাথর তাদের বুকের উপর কঠিনভাবে চাপা দেয়া হচ্ছে। ফলে তাদের দেহ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। আবার তা ভাল হচ্ছে। আবার তাদের পাথর মেরে টুকরো টুকরো করা হচ্ছে । এ কঠিন শাস্তি দেখে আমি আমার সাথী জিবরাইলকে তাদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করলাম এবং তাদের উপর এ অমানুষিক নির্যাতন ও শাস্তির কারণ কী জানতে চাইলাম। আমার প্রশ্নের উত্তরে জিবরাইল বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার উম্মতের মধ্যে যারা সময় মত নামায আদায় করেনি, নামাযে অলসতা করেছে এবং নামাযের সময় ঘুমে বা গল্প গুজবে সময় কাটিয়েছে তাদেরকে এই কঠিন শাস্তি দেয়া হচ্ছে। তারা বে-নামাযী । তাই তাদের এমন কঠিন পরিণতি । নবীজি বলেন, বে-নামাযীর এমন কঠিন পরিণতি দেখে আমি খুবই মর্মাহত হলাম।

বে-নামাযীর মুখে ও পীঠে চরমভাবে আঘাত করা হবে

হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে, ১০ প্রকার লোকের বিশেষ শাস্তি নির্ধারিত আছে জাহান্নামে। এদের একজন হলো বে-নামাযী। তার হাত বাঁধা থাকবে আর আযাবের ফেরেস্তা তার মুখমন্ডল ও পিঠে আঘাত করতে থাকবে। জান্নাত বলবে তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমি তোমার জন্য নই, আর তুমিও আমার জন্য নও। জাহান্নাম বলবে, আমার কাছে এসো, আমার কাছে এসো। তুমি এসো আমার জন্য। কেননা, আমি তোমার জন্য।

বে-নামাযীর নাম জাহান্নামের দরজায় লিখে দেয়া হয়

‘কুররাতুল উয়ুন' নামক কিতাবে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি এক ওয়াক্ত ফরয নামায বিনা ওযরে ইচ্ছাকৃতভাবে তরক করে তার নাম জাহান্নামের দরজায় লিখে দেয়া হয়।

বে-নামাযীর স্থান ‘জুব্বুল হুযন’ নামক বিষাক্ত কূপ

জাহান্নামের মধ্যে ‘জুব্বুল হুযন' নামক (দুঃখের কুপ) একটি বিশাল স্থান রয়েছে। যেখানে বিষাক্ত বিচ্ছু বসবাস করে। প্রতিটি বিচ্চুর আকৃতি খচ্চরের মত। নামায তরককারীদের শাস্তির জন্য এগুলো নির্ধারিত আছে।

বে-নামাযীর ঠিকানা 'লামলাম’ নামক সাপের জঙ্গল

হাদিস শরীফে আরো বর্ণিত আছে, জাহান্নামের মধ্যে ‘লামলাম' নামক একটি জঙ্গল আছে। সেখানে উটের পিঠের মত মোটা সাপ আছে। এক মাসের রাস্তার সমান এদের দৈর্ঘ্য। যারা নামায পড়ে না তাদের উপর এ সাপ চাপিয়ে দেয়া হবে।

ক. দুনিয়াতে বে-নামাযীর ৫ প্রকার শাস্তি অবধারিত

১. বে-নামাযীর রুজি রোজগারে কোন বরকত থাকে না 
২. তার কপালে কোন নূর থাকে না 
৩. সে কোন সৎ কাজ করলেও এর পুরস্কার পায় না 
৪. আল্লাহর দরবারে তার দোআ কবুল হয় না 
৫. নেককার লোক তার জন্য দোআ করলেও সে দোআ তার কোন কাজে আসে না।

খ. মৃত্যুকালীন বে-নামাযীর ৩ প্রকার শাস্তি অবধারিত

১. অত্যন্ত কঠিন ও জঘন্য অবস্থায় বে-নামাযীর মৃত্যু হবে 
২. প্রচন্ড ক্ষুধা অবস্থায় তার মৃত্যু হবে 
৩. প্রচন্ড তৃষ্ণা অবস্থায় তার মৃত্যু হবে। গোটা সমূদ্রের পানি দিলেও তার তৃষ্ণা মিটবে না।

গ.মৃত্যুর পর বে-নামাযীর কবরে ৩ প্রকার শাস্তি অবধারিত

১. কবরের মাটি দু'দিক থেকে বে-নামাযীকে এমনভাবে চাপ দিবে যে, এক পাঁজরের হাড্ডি অন্য পাঁজরের মধ্যে ঢুকে যায়। 
২. তার কবরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। 
৩. তার কবরে এমন ভয়াল আকৃতির একটি সাপ মোতায়েন করা হয়, যার চোখ আগুনের মত এবং নখ লোহার মত এবং তা এত লম্বা যে, তার উপর একদিন হাঁটলেও তার প্রান্ত সীমায় পৌঁছা যায় না। সাপটির আওয়াজ বিদ্যুত গর্জনের মত। সে তাকে বলতে থাকে আমার প্রভু আমাকে তোমার জন্য মোতায়েন করেছেন। তুমি ফজরের নামায আদায় করনি তাই আমি তোমাকে জোহর পর্যন্ত কামড়াতে থাকব। তুমি জোহর নামায আদায় করনি, তাই আমি তোমাকে আছর পর্যন্ত কামড়াতে থাকব। তুমি আসর নামায আদায় করনি। তাই আমি তোমাকে মাগরিব পর্যন্ত কামড়াতে থাকব। তুমি মাগরিব নামায আদায় করনি। তাই আমি তোমাকে এশা পর্যন্ত কামড়াতে থাকব। এই বলে সাপ তাকে ছোবল মারে। তখন সে সত্তর হাত নিচে চলে যায়। কিয়ামত পর্যন্ত এভাবে তার উপর আযাব চলতে থাকবে।

ঘ.কবর থেকে উঠার পর বে-নামাযীর ৪ প্রকার শাস্তি অবধারিত

১. বে-নামাযীর হিসাব নিকাশ হবে খুবই কঠিন 
২. আল্লাহ পাক তার প্রতি রাগান্বিত থাকবেন 
৩. তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে। 
৪. এই প্রকার বর্ণনা হাদিসে পাওয়া যায়নি। সম্ভবত বর্ণনাকারী ভুলক্রমে বাদ দিয়েছেন।

অসম্পূর্ণ ও অসময়ে নামায আদায়ের শাস্তি 

যারা নামাযকে নষ্ট করে তাদের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-
বেনামাজির শাস্তি - বেনামাজির দুনিয়া ও আখেরাতের শাস্তি - নামায না পড়ার শাস্তি - Punishment for not praying

অর্থাৎ অত:পর তাদের পর এলো অপদার্থ পরবর্তীরা। তারা নামায নষ্ট করলো এবং কু-প্রবৃত্তির অনুসরণ করল। সুতরাং অচিরেই তারা পথভ্রষ্টতা প্রত্যক্ষ করবে।”* নামায অসময়ে বা জামাতবিহীন আদায় করা নামায নষ্ট করার শামিল। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ, ইমাম নখয়ী, কাসেম, মুজাহিদ, ইবরাহীম, উমর বিন আব্দুল আজিজ প্রমূখ বিশিষ্ট তাফসীরবিদদের মতে, আলোচ্য আয়াতে নামায নষ্ট করা বলতে ‘অসময়ে নামায পড়া' বুঝানো হয়েছে। আবার কারো মতে, সময়সহ নামাযের আদব ও শর্তসমূহের মধ্যে কোন ত্রুটি করা নামায নষ্ট করার শামিল। আবার কারো মতে, নামায নষ্ট করা বলতে জামা'আত ছাড়া নিজ গৃহে নামায পড়া বোঝানো হয়েছে।

হযরত আব্বাছ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
(গাইয়ুন) জাহান্নামের একটি গুহার নাম। স্বয়ং জাহান্নামও এর থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে। ‘গাইয়া হলো, জাহান্নামের একটি নদীর তলদেশ, যার গভীরতা অনেক, যেখানে আছে রক্ত ও পুঁজের নিকৃষ্টতম আস্বাদ। 
অপর বর্ণনা মতে 'গাইয়া” জাহান্নামের একটি উপত্যকার নাম।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, (গাইয়ুন) শব্দটি জাহান্নামের একটি গর্তের নাম। এতে সমগ্র জাহান্নামের চাইতে অধিক আযাব রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা যাদের জন্য এই গুহা প্ৰস্তুত করে রেখেছেন তারা হলো-
১. যে ব্যক্তি যেনায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। 
২. যে ব্যক্তি মদ পানে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে, 
৩. যে ব্যক্তি সুদ গ্রহণ থেকে বিরত হয় না। 
৪. যারা পিতামাতার অবাধ্য, 
৫.যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়, 
৬. যে নারী অপরের সন্তানকে তার স্বামীর সন্তানে পরিণত করে। অর্থাৎ যে নারী- পর পুরুষের সাথে অপকর্মে লিপ্ত হয়ে সন্তান গর্ভধারণ করে এবং ঐ সন্তানকে নিজ স্বামীর সন্তান বলে পরিচয় দেয়। 

বে-নামাযীর ওযর-আপত্তি আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য হবেনা

কিয়ামতের দিন আল্লাহ পাক বে-নামাযীকে নামায না পড়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা বিভিন্ন উযর- আপত্তি পেশ করবে।
যেমন:

ক. এক বে-নামাযী বলবে, আমার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক কর্মব্যস্ততার কারণে নামায আদায় করতে পারিনি। তখন আল্লাহ হযরত দাউদ ও হযরত সুলাইমান আলাইহিমাস সালামকে সেখানে উপস্থিত করা হবে। আল্লাহ পাক বলবেন, দেখ আমার এই দুইজন সম্মানিত নবীকে বিশাল সম্রাজ্যের অধিপতি ও সম্রাট বানিয়েছিলাম। তাঁরা নবুয়তের মহান দায়িত্বও পালন করেছিলেন। তারা কোনদিন নামায ত্যাগ করেননি। আজ তুমি মিথ্যা অজুহাত পেশ করছো। প্রশাসনিক দায়িত্ব ও রাজ্য পরিচালনার কর্মব্যস্ততা যদি নামায থেকে বিরত রাখত তাহলে নিশ্চয় আমার এ নবীদ্বয়কে বিরত রাখত। কর্মব্যস্ততার জন্য নয় বরং অলসতা ও অমনোযোগিতার জন্য তুমি নামায আদায় করনি। তখন আল্লাহ পাক আদেশ দিবেন হে ফেরেস্তা তাকে দোযখে নিক্ষেপ কর।

খ. আরেকজন বলবে, হে প্রভু! আমি অসুস্থ ছিলাম। রোগের যন্ত্রনার কারণে আমি নামায আদায় করতে পারিনি। তখন আল্লাহ পাক হযরত আইয়ুব আলাইহিস সালামকে উপস্থিত করবেন। আল্লাহ পাক বলবেন, হে অসুস্থতার ওযর পেশকারী বান্দাহ! তুমি কি আমার বান্দাহ হযরত আইয়ুব আলাইহিস সালাম এর চেয়ে বেশী অসুস্থ ছিলে? তিনি তো দীর্ঘ ১৮ বছর যাবৎ মারাত্মক রোগে আক্রান্ত ছিলেন। কিন্তু তিনি তো এক মুহুর্তের জন্য ও আমার যিকির তথা নামায ছাড়েননি। হে বান্দাহ! তুমি মিথ্যাবাদী। অসুস্থতার কারণে নয় বরং অলসতাবশত: ইচ্ছা করেই নামায ত্যাগ করেছো। আল্লাহ বলবেন, হে ফেরেস্তারা তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ কর।

গ. আরেকজন বে-নামাযীকে হাজির করা হলে আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করবেন, কেন তুমি নামায পড়নি? সে বলবে, হে আল্লাহ! আমি অধিক সন্তান- সন্ততির অধিকারী ছিলাম। তাদের ভরণপোষণের দায়িত্বভার পালনে এতই ব্যস্ত ছিলাম যে, সময়মত নামায আদায় করার মোটেও সময় পাইনি। তখন আল্লাহ পাক হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামকে তথায় উপস্থিত করবেন। আল্লাহ পাক তার দিকে ইঙ্গিত করে বেনামাযীকে বলবেন, দেখ তোমার সন্তান সন্ততি বেশী ছিল নাকি আমার নবী ইয়াকুব আলাইহিস সালাম এর সন্তান বেশী ছিল? আল্লাহ পাক বলবেন, আমার নবী ইয়াকুব আলাইহিস সালাম দীর্ঘদিন যাবৎ প্রিয় সন্তান হযরত ইউছুফ আলাইহিস সালাম এর বিচেছদ ব্যথায় কাঁদতে কাঁদতে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। কোমর বাঁকা হয়ে অল্প বয়সে বুড়ো হয়ে গিয়েছিলেন। তা সত্বেও এক মুহুর্তের জন্য আমার যিকির তথা নামায ছাড়েননি। আল্লাহ ফেরেস্তাদেরকে হুকুম করবেন, একে ও জাহান্নামে নিক্ষেপ কর।

ঘ. আরেকজন বে-নামাযী মহিলাকে মহান আল্লাহর আদালতে হাজির করা হবে। তাকে জিজ্ঞসা করা হবে তুমি কেন নামায আদায় করনি? উত্তরে সে বলবে, স্বামীর অত্যধিক কাজের চাপে আমি নামা আদায় করার সময় পাইনি। কারণ, আমার সব সময় ভয় হতো যে, যদি নামায পড়তে গিয়ে ঘরের কোন কাজ কর্ম থেকে যায়, তাহলে স্বামী আমাকে মারধর করবে। সে কারণে আমি নামায আদায় করতে পারিনি। তখন আল্লাহ বলবেন, তোমার স্বামী তো যালেম ছিল না বিবি আছিয়ার স্বামী ফেরআউন তো অধিক যালেম ছিল। যালিমের স্ত্রী হয়েও বিবি আছিয়া এক ওয়াক্ত নামাযও তরক করেনি। স্বামীর যুলুম যদি কাউকে নামায থেকে বিরত রাখত তাহলে নিশ্চয় আছিয়াকে বিরত রাখতো। হে বান্দী! নিশ্চয় তুমি ইচ্ছা করে অলসতা বশত: নামায তরক করেছো। আল্লাহর নির্দেশে ফেরেস্তারা তাকেও জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে।
['তাফসীরে রুহুল বয়ান' কৃত: আল্লামা ইছমাইল হক্কী (রহ.)]

বে-নামাযী ইহকাল ও পরকালে সকলের নিকট ঘৃণিত ব্যক্তি 

বে-নামাযীকে কেউ পছন্দ করে না। কারণ সে আল্লাহ ও রাসুলের আদেশ অমান্যকারী। পরিবারে, সমাজে সকলেই তাকে ঘৃনার চোখে দেখে। তাকে কেউ বিশ্বাস করেনা। বে-নামাযী আল্লাহর রহমত ও বরকত থেকে বঞ্চিত। ফেরেস্তারা তাকে অভিশম্পাত করে। বে-নামাযী সর্বদা পেরেশানী ও টেনশনের মধ্যে থাকে। সে দুনিয়া ও আখিরাতের পরম সুখ ও মহান পুরষ্কার হতে বঞ্চিত।

নামায কাজা করার শাস্তি ৮০ ‘হুকবা’ জাহান্নাম 

বিনা কারণে নামায 'কাযা' করার শাস্তি সম্পর্কে নবীজি ইরশাদ করেন, 

বেনামাজির শাস্তি - বেনামাজির দুনিয়া ও আখেরাতের শাস্তি - নামায না পড়ার শাস্তি - Punishment for not praying

যে ব্যক্তি অবহেলা বশত: নামায তরক করল কলে নামাযের ওয়াক্ত চলে গেল অতঃপর নামায কাযা ' আদায় করল, তাকে জাহান্নামে এক 'হুকবা পরিমাণ সময় শাস্তি ভোগ করতে হবে। এক 'হুকবা' পরিমাণ হবে (পরকালের হিসাবে) ৮০ বছরের সমান। আর প্রত্যেক বছর হবে ৩৬০ দিনের এবং প্রতিটি দিন হবে (দুনিয়ার) ১,০০০ বছরের সমান। এ হিসাবে পরকালের এক বছর হবে ৩,৬০,০০০ (তিন লক্ষ ষাট হাজার) বছরের সমান। সুতরাং পরকালের ৮০ বছর হবে দুনিয়াবী ২,৮৮,০০,০০০ (দু' কোটি আটাশি লক্ষ) বছরের সমান। এটা কেবল এক ওয়াক্ত নামায অবহেলা বশতঃ কাযা করলে। আর ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দিলে কত ‘হুকবা দোযখের আগুনে জ্বলতে হবে তা আল্লাহই ভাল জানেন। আর যারা সারাজীবন অবহেলা করে নামায তরক করেছে তাদের কী পরিমাণ শাস্তি হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না । [মাজালিছুল আবরার]

নামায ‘কাজা’ কারীর সবকিছু ধ্বংস হওয়ার নামান্তর 

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তির আসরের সালাত কাজা হল, তার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ সবকিছু যেন ধ্বংস হয়ে গেল। [সহীহ মুসলিম, হাদিস: ১৩০৪] 

শুধু পরকালীন শাস্তি নয়, নামায না পড়লে ইহকালীন জীবনও বরকতশূন্য হয়ে যায়। আল্লাহ পাক সকল ঈমানদার-মুসলমানকে নামাযের প্রতি অধিক যত্নশীল হয়ে নিয়মিত নামাযী হওয়ার তাওফিক দান করুন, আমিন।



নিত্য নতুন সকল আপডেটের জন্য জয়েন করুন

Telegram Group Join Now
Our Facebook Page Join Now
Class 8 Facebook Study Group Join Now
Class 7 Facebook Study Group Join Now
Class 6 Facebook Study Group Join Now

Post a Comment