কিশোর গল্প : কম্পিউটারের পাখি | Computerer Pakhi

Follow Our Official Facebook Page For New Updates


Join our Telegram Channel!

কিশোর গল্প - কম্পিউটারের পাখি | Kishor Golpo Computerer Pakhi

লেখক: অপূর্ব দত্ত
কম্পিউটারের পাখি

কম্পিউটারটা চালু করতেই রিম্পির চোখের সামনে ফুটে উঠল সুন্দর একটা ছবি। ছোটোমামা প্রায়ই কম্পিউটারের ওয়ালপেপারটা বদলে দেয়। এটা ওর একটা নেশা। ছোটোমামা বলে, একটা জিনিস বেশিদিন দেখতে ওর ভালো লাগে না। কাল রাত্তিরেও রিম্পি যখন কম্পিউটার খোলে তখনও এই ছবিটা ছিল না। 

আজ বুটিং শেষ হওয়া মাত্রই রিম্পির চোখে পড়ল এই ছবিটা। দারুণ ছবি – দেখলে মন ভরে যায়। কত রকম রং। আর কত যে অদ্ভুত অদ্ভুত গাছপালা। রিম্পি অনেকক্ষণ ধরে ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকল। 

এরকম ছবি সে আগে একবার দেখেছে। ছোটোমামার ন্যাশানাল জিয়োগ্রাফি বইয়ের মধ্যে। কিন্তু সেটা খুব ছোটো। আজ চোখের সামনে এত বড়ো একটা সুন্দর ছবি দেখে ওর মনটা খুশিতে ভরে গেল।

রিম্পিকে এখন নিয়মিত কম্পিউটার অভ্যেস করতে হয়। সেভেনে ওঠার পর কম্পিউটার শেখা বাধ্যতামূলক। অন্যান্য দিন রাত্রিবেলা করে। আটটার সময় ছোটোমামা ইনটারনেট করে।

ছোটোমামার শেষ হলে তারপর ও করে। আজ থেকে স্কুলে গরমের ছুটি পড়ে গেছে। সেজন্য মা বলেছে আজ থেকে সকালবেলা কম্পিউটার করতে। 

আটটা থেকে কনটা। মানে মা অফিসে বেরোবার আগে পর্যন্ত। মা ন'টার সময় অফিসে বেরোয়। বাবা তারও আগে। ছোটোমামা তারও আগে।

রিম্পি একদৃষ্টে ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছে। একটা গ্রামের ছবি। ছোটোমামা বোধ হয় ইনটারনেট থেকে ডাউনলোড করেছে। দোতলা একটা বাড়ি। রাজবাড়ির মতো। ভেতরে হালকা হলুদ রঙের আলো জ্বলছে। কম্পিউটারের পাখি

বাড়িটার সামনে একটা রাস্তা। পিচরাস্তা নয়। পাথর বিছানো। রাস্তার দুপাশে লম্বা লম্বা গাছ। পাহাড়ি অঞ্চলে যে রকম গাছ দেখা যায় সেরকম। রিম্পি অনেকগুলোর নামও জানে। পাইন, সেডার, বার্চ উইলো ইত্যাদি। 

গাছগুলোর নীচে অনেক শুকনো পাতা পড়ে আছে। বোধ হয় বসন্তকাল। বাড়িটার দোতলার একটা ঘরের জানলা খোলা। খড়খড়ি দেওয়া জানলা। লম্বা লেজওলা গাঢ় নীল রঙের একটা পাখি বারবার খোলা জানলাটা দিয়ে বেরোচ্ছে আর সবথেকে লম্বা গাছটায় গিয়ে বসছে। 

কিছুক্ষণ এদিক ওদিক দেখে আবার জানলা দিয়ে ঘরে ঢুকে যাচ্ছে। রিম্পির খুব কৌতূহল হল পাখিটা ঘরে ঢুকে কী করছে জানার জন্যে। মনোযোগ দিয়ে পাখিটার যাওয়া দেখতে দেখতে রিম্পির মনে হল যদি কম্পিউটার স্ক্রিনের মধ্যে ঢুকে পড়া যেত তাহলে হয়তো ভালো দেখা যেত। 

পরক্ষণেই নিজের ওপরে বিরক্ত হল রিম্পি। কী সব অবাস্তব ভাবনাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। এসব তো ছোটোবেলায় হত। ও যখন ক্লাস ওয়ানে পড়ত তখন ছোটোমামার কম্পিউটার করার সময় পাশে এসে বসত আর এটা কী ওটা কী, এটা কেন হয় ওটা কেন হয় জিজ্ঞেস করত। 

ছোটোমামা একটুও বিরক্ত হত না, মজা করে বলত, জানিস তো ওর মধ্যে লোক থাকে। সেই সব কিছু লিখে দেয়, ছবি এঁকে দেয়। রিম্পির এখন সেভেন। কম্পিউটার সম্বন্ধে অনেক কিছু শিখে গেছে। স্ক্রিনের মধ্যে ঢুকে পড়ার কথা ভেবে নিজে নিজেই খানিক হেসে নিল।

রিম্পি তাকিয়ে আছে পাখিটার দিকে। মন দিয়ে ওর গাছে বসা এবং ঘরে ঢোকা দেখছে। ঘরে কোনো শব্দ নেই শুধু সিলিং ফ্যানের শব্দ ছাড়া। রিম্পিকে অবাক করে দিয়ে পাখিটা হঠাৎ জিজ্ঞেস করল—এই মেয়েটা, তোমার নাম কী?

রিম্পি চমকে গেল। কম্পিউটারের ছবি আবার কথা বলে নাকি। তবে কি ক্লাস ওয়ানে ছোটোমামা যেটা বলত সেটাই ঠিক। সত্যিই কি ভেতরে লোক থাকে। ভয়ে ভয়ে বলল, আমার নাম রিম্পি।

পাখিটা ফিচ করে হেসে ফেলল। কোন্ স্কুলে পড়? ব্রজবালা বালিকা বিদ্যালয়ে ?

সেটা আবার কী? কোনো স্কুলের নাম এরকম হয় নাকি? আমি গোখেল মেমোরিয়ালে পড়ি। ক্লাস সেভেনে। কম্পিউটারের পাখি

পাখিটা আবার হেসে ফেলল। রিম্পি বুঝতে পারছে না পাখিটা কেন হাসছে। ওর মনখারাপ হয়ে যাচ্ছে। বাড়িতে কেউ নেই যে ডেকে দেখাবে বা পাখিটার কথা শোনাবে। পাখিটা বলল, তুমি পুকুরে সাঁতার কাটো?

–না। পুকুরে সাঁতার কাটা খারাপ। মা পছন্দ করে না। আমি সপ্তাহে একদিন সুইমিং ক্লাবে যাই সুইমিং শিখতে। পাখিটা এবার আর হাসল না। গম্ভীর গম্ভীর মুখে বলল, সুইমিং মানে কী? ছুঁচ ? 

সুই মানে তো ছুঁচ রিম্পি বলল, ধুস বোকা, কিচ্ছু জানে না। সাঁতারের ইংরেজিই তো সুইমিং। —ও। তাই বল। আমি তো বাবা ইংরেজি স্কুলে পড়িনি। কী করে বুঝব। এতক্ষণে রিম্পি একটু ধাতস্থ হয়ে সাহস করে বলল, তোমার নাম কী ? তুমি কোথায় থাকো ?

—আমার নাম পাখি। আমি আকাশে থাকি, কখনও গাছে থাকি, আবার কখনো- সখনো অ্যান্টেনাতেও থাকি। তুমি বিহঙ্গ বা বিহঙ্গম বলে কাউকে চেনো?

রিম্পি ঘাড় নাড়ল। চিনি না। কম্পিউটারের পাখি

—খেচর খগ পতত্রী এদের কাউকে?

—না বাবা। তুমি বিদঘুটে বিদঘুটে কী সব নাম বলছ শুনে চমকে যাচ্ছি। খেচর মানে জান না? তুমি আবার নাকি সেভেনে পড়। তুমি সেভেনে পড়তেই পার না।

রিম্পি থতমত খেয়ে বলল, না না খেচর মানে জানি। পাখি। তুমি তো পাখি। —তাইতো বললাম। আমি তো আকাশে থাকি। তুমি আকাশে দেখতে পাওনা আমাকে ?

রিম্পি অবাক হয়ে বলল, তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে পাখি? আকাশ দেখার সুযোগ কোথায়? শহরে কি আকাশ দেখা যায়? দেখছ না চারদিকে উঁচু-উঁচু ফ্ল্যাট বাড়ি সবটুকু আকাশকে আমাদের সামনে থেকে মুছে দিয়েছে।

—বিকেলবেলা পার্কে বা মাঠে খেলতে যাও না? নদীর ধারে বেড়াতে যাও না? রিম্পি ঘাড়ের ওপর হামলে পড়া চুলগুলোকে রাবারব্যান্ড দিয়ে বাঁধতে বাঁধতে বলল, কখন খেলতে যাই বলো। সোমবার আর বুধবার তো স্কুল থেকেই সোজা অঙ্ক- কোচিং স্যারের বাড়ি চলে যাই। 

ফিরতে ফিরতে সন্ধে পেরিয়ে যায়। অন্ধকারে কি আকাশ দেখা যায় বলো। মঙ্গলবার যাই সুইমিং শিখতে। বৃহস্পতিবার স্কুল থেকে ফিরেই চলে যাই নাচের ক্লাসে। নাচের ক্লাস থেকে ফিরে আবৃত্তি শিখতে যাই। শুক্রবার আঁকার ক্লাস, আর শনিবারে আবার তিনটে স্যারের কাছে পড়া। আকাশ কখন দেখব বলো।

পাখি হতাশ হয়ে বলল, তোমাদের জানলা দিয়ে তো আবার আকাশ দেখা যায় না। ঠিক বলেছি না?

রিম্পি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। তারপর জিজ্ঞেস করল, তুমি পড়াশোনা করো না? —কেন করব না। আমি স্কুলে পড়ি না বটে, তবে অনেক বই পড়ি। তুমি সীতার বনবাস, টুনটুনির বই, শিশু ভোলানাথ, আবার যকের ধন পড়েছ? আমি পড়েছি। আমার মা-বাবা বইমেলা থেকে এসব বই কিনে দিয়েছিল। আমার কাছে ক্ষীরের পুতুল, নালক, বুড়ো আংলা, ঘনাদা- টেনিদা, ফেলুদা-কাকাবাবু সব আছে।

—এগুলো কীসের বই গো পাখিদা? সায়েন্সের? আমাকে তো কেউ কখনও কিনে দেয়নি।

—এগুলো বাংলা সাহিত্যের অমর কীর্তি। নামকরা লেখকদের লেখা। একবার পড়া শুরু করলে থামতে পারবে না। আর ছড়ার বইয়ের কথা তো বলার নয়। রবিবাবুর খাপছাড়া, সুকুমারবাবুর আবোল-তাবোল, নীরেন্দ্রনাথ চক্কোত্তির সাদা বাঘ, অন্নদাবাবু,

সরলবাবু, কার্তিকবাবুর কত কত ছড়ার বই। তুমি ছড়া ভালোবাসো নিশ্চয়। —ছড়া কী গো, রাইম্স? আমি রাইম্স পড়তে ভালোবাসি। তবে বেঙ্গলিতে নয়। বেঙ্গলিটা আমি ভালো পারি না।

পাখি এবার জোরে হেসে উঠল। তুমি না বাঙালি। বাঙালি হয়ে বলতে আছে যে বাংলা ভালো পার না? ইচ্ছে করলেই পারবে। আজ থেকেই চেষ্টা করো। শপথ নাও, প্রয়োজন না পড়লে সহজে ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করবে না। কম্পিউটারের পাখি

স্কুলের পড়াশোনা তো ইংরেজিতে করতে হবেই, সেটা কিছু নয়। কিন্তু একজন বাঙালির সঙ্গে যখন কথা বলবে তখন চেষ্টা করবে ইংরেজি শব্দ ব্যবহার না করতে। পারবে না?

রিম্পির মুখে এতক্ষণে হাসি ফুটল। বলল, তুমিই ঠিকই বলেছ পাখিদা। আমাকে তো আগে কেউ এভাবে বলেনি। আমি আজ থেকে চেষ্টা করব বাংলা বই বেশি বেশি করে পড়তে।

—খুব ভালো। খুব ভালো। আমি তোমাকে অনেক বাংলা বই এনে দেব। ক্লাসের পড়ার মাঝখানে সময় বার করে নিয়ে পড়বে। আইনস্টাইনকেও জানবে, আবার জগদীশ বোসকেও জানবে। হ্যারি পটারের বই নিশ্চয় পড়বে, তবে সেইসঙ্গে সহজপাঠ, হলদে পাখির পালক, আর্মানি চাঁপার গাছ এগুলোও অবশ্যই পড়তে হবে। 

একটা কথা, যখনই সুযোগ পাবে কিছুক্ষণ নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকবে। মাঝে-মাঝে ছুটি-ছাটার দিনে বাবা-মার সঙ্গে গ্রামের দিকে চলে যাবে। বিশাল নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে গোটা পৃথিবীটাকে চেনার চেষ্টা করবে। কম্পিউটারের পাখি

রিম্পির মুখ থেকে কথা হারিয়ে গেছে। কথা বলতে গিয়ে গলা কাঁপছে। স্বর বেরোচ্ছে না। অস্ফুটে বলল, পাখিদা, আমি তো এখন কম্পিউটার বন্ধ করব। 

তুমি পরে আসবে তো? আমার এখনও অনেক কথা জানার আছে। আচ্ছা পাখিদা, তুমি একবার ঘরের ভিতরে যাচ্ছিলে, আবার গাছে বসছিলে কেন গো?

—একবার বাইরের পৃথিবীকে দেখছিলাম, আর একবার মনের পৃথিবীটাকে দেখছিলাম। বাইরের জগৎটাকে দেখা খুবই দরকার, বুঝলে রিম্পি।

রিম্পিও আস্তে ঘাড় নাড়ল। বলল, তুমি বেশ ভালো পাখিদা। কেমন সুন্দর করে বোঝালে আমাকে। পৃথিবীর সব লোক কেন তোমার মতো সুন্দর হয় না। কম্পিউটারের পাখি

আমি নিশ্চয় আকাশ দেখব, ছড়ার বই পড়ব। আর সবাইকে তোমার মতো ভালোবাসব। সবাইকে তোমার কথা বলব। আর আমার সব বন্ধুদের বলব তাদের কম্পিউটারে তোমার ওয়ালপেপারটা লাগাতে।

—আর একটা কাজ করতে হবে রিম্পি। তোমার বন্ধুদেরও বলতে হবে। তোমরা সবাই পড়াশোনায় ভীষণ ভীষণ ভালো। অনেক নম্বর পাও। কম্পিউটারের পাখি

কিন্তু তোমরা কল্পনা করতে ভুলে গেছ। তোমরা নিজের মতো নানারকম কল্পনা করতে শেখো, যা তোমাদের নিজস্ব। একান্ত নিজস্ব। বড়োদের কোনো হাত থাকবে না সেখানে। পারবে না রিম্পি? বলো, পারবে না?

—পারব। নিশ্চয় পারব। আমার বন্ধুরাও পারবে। আমি ওদেরেকে তোমার কথা বলব। আবার দেখা হবে পাখিদা। ভালো থেকো। কম্পিউটারের পাখি, কম্পিউটারের পাখি, কম্পিউটারের পাখি, Computerer Pakhi, Computerer Pakhi, Computerer Pakhi

নিত্য নতুন সকল আপডেটের জন্য জয়েন করুন

Telegram Group Join Now
Our Facebook Page Join Now
Class 8 Facebook Study Group Join Now
Class 7 Facebook Study Group Join Now
Class 6 Facebook Study Group Join Now

Post a Comment