প্রশ্ন ॥ জাতীয় সংসদে নারীদের সংরক্ষিত আসনের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর। Importance of reserved seats for women in National Parliament
সংসদীয় ব্যবস্থায় যে দশ সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে। সে দশ সরকার গঠন করে এবং দেশ শাসন করে। এদেশে অনেক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান আছে। সেসব প্রতিষ্ঠানে নারীর অংশগ্রহণ খুবই কম। তবে সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে নারীর অবস্থান ক্রমবর্ধমান।
বিশেষ করে সংরক্ষিত আসনে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। প্রথম সংসদ হতে অষ্টম সংসদ পর্যন্ত সংরক্ষিত আসনে মোট ২০৩ জন মহিলা মনোনীত হয়েছেন। এদের মধ্যে একাধিক বার সাংসদ হয়েছেন ৮ জন। সংসদীয় এই সংরক্ষণ ব্যবস্থা রাজনীতিতে নারীর আগমন ত্বরান্বিত করেনি।
১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদে সরাসরি নির্বাচিত হয়েছেন ৭ জন নারী সাংসদ। ২০০১ সালের নির্বাচনে হন ৬ জন। এটা সন্তোষজনক নয়। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে সরাসরি সাংসদ নির্বাচিত হন ৫ জন। এতে বৃদ্ধির হার ছিল খুবই কম।
তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে নারী জাগরণ ঘটে। এতে ৩০ জন নারী সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ নির্বাচনে ২৩টি আসনে জয়লাভ করেন ১৯ জন নারী। শেখ হাসিনা ৩টি আসনে এবং বেগম খালেদা জিয়াও ৩টি আসনে জয়ী হন।
এ নির্বাচনে যেসব নারী পরজিত হয়েছেন তারা অল্প ভোটে পরাজিত হয়েছেন। এটা নারীদের জন্য একটি ইতিবাচক দিক। ইতিপূর্বে কোনো নির্বাচনে এরূপ ঘটনা ঘটে নি। সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত নারীরা পরোক্ষ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে আসছেন।
২০০১ সালের নির্বাচনের পর সংরক্ষিত নারী আসন দশ বছরের জন্য ৩০ হতে ৪৫ করা হয়। সে মোতাবেক ২০০৪ সালে ৪৫ জন নারী সাংসদ মনোনীত হন। ২০০৮ সালে সংরক্ষিত আসনে মনোনীত হন ৪৫ জন নারী সাংসদ।
সরাসরি নির্বাচিত হন না বলে তারা নিজেদের দায়বদ্ধ মনে করেন না। এজন্য প্রচলিত ব্যবস্থায় নারীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ক্ষমতার অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম হননি। এতে তাদের মর্যাদাও বাড়েনি।
যাহোক, নির্বাচনে অংশগ্রহণ কিংবা বিজয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে স্থিতাবস্থা লক্ষ করা গেলেও ১৯৭৩-২০০৮ পর্যন্ত নির্বাচনি রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণের একটি ইতিবাচক ধারা লক্ষ করা যায়।
তাছাড়া, বিগত বছরগুলোর নির্বাচনি ফলাফল ও প্রাপ্ত ভোটের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, নারী প্রার্থীগণ ক্রমান্বয়ে ভোটারদের নিকট রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হচ্ছেন। তারা জেন্ডার বৈষম্য মোকাবিলা করে তাদের নিকট যোগ্য প্রার্থী হয়ে উঠছে।
তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটাও বলা যায় যে, জাতীয় সংসদে নরীর অবস্থান সন্তোষজনক নয়। কারণ জনসংখ্যার তুলনায় নারীর প্রতিনিধিত্ব অনেক কম। এর জন্য জেন্ডার বৈষম্য ও জেন্ডার ভায়োলেন্স কমাতে হবে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কুফল দূর করতে হবে।
তাছাড়া সংসদে নারী আসন বাড়িয়ে সেখানে সরাসরি নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করতে হবে। এটা করতে পারলে সংসদে নারীর অবস্থান সংহত ও সন্তোষজনক হবে। এটা যত তাড়াতাড়ি করা যাবে, জাতির জন্য তত মঙ্গলজনক হবে।
নারীদের সংরক্ষিত আসন পেলে নারীরা প্রত্যক্ষভাবে ভোট দিয়ে নারী প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে। পরোক্ষ নির্বাচনের কুফল দূর হবে। রাজনীতিতে নারী অংশগ্রহণের হার বেড়ে যাবে। এতে করে রাজনৈতিক অংশগ্রহণে নারীরা উদ্বুদ্ধ হবে।
তাছাড়া প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পাবে। তাই জাতীয় সংসদে নারীদের সংরক্ষিত আসনের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, জাতীয় সংসদে নারীদের সংরক্ষিত ক্ষমতা, দ্বৈত ভূমিকা, জেন্ডার বৈষম্য দূরীকরণ, নারী রাজনীতির প্রসার এবং প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়বে।
নিত্য নতুন সকল আপডেটের জন্য জয়েন করুন
If any objections to our content, please email us directly: helptrick24bd@gmail.com