একটি উত্তম কর কাঠামোর বৈশিষ্ট্য লিখ।
ভূমিকা : সরকার কতগুলো লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে কর হার, কর আদায়ের পদ্ধতি, করের আইন-কানুন প্রভৃতি বিষয় তথা কর কাঠামো নির্ধারণ করে থাকে।
এসব লক্ষ্যে ও উদ্দেশ্যের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ বা রাজস্ব আদায়, আয় বৈষম্য কমানো, অপ্রয়োজনীয় ভোগ ও উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যেসব বৈশিষ্ট্যের কারণে একটি দেশের
একটি উত্তম কর কাঠামোর বৈশিষ্ট্য:
১. উৎপাদনশীল :
কর আদায়ের প্রাথমিক লক্ষ্যই হলো অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ করা। কাজেই কর কাঠামো এমন হওয়া উচিত যেন তা সরকারের রাজস্ব আদায়ে যথেষ্ট উৎপাদনশীল হয়। এক বাক্যে বলা যায়, একটি উত্তম কর কাঠামো অবশ্যই রাজস্ব সংগ্রহে উৎপাদনশীল হবে।
২. করের কানুন মেনে চলে :
উত্তম কর ব্যবস্থা অবশ্যই এডাম স্মিথ প্রণীত করের চারটি কানুন যেমন- সমতার কানুন, সরলতা ও নিশ্চয়তার কানুন, সুবিধার কানুন এবং মিতব্যয়িতার কানুন মেনে চলবে।
৩. প্রগতিশীল :
কর কাঠামো প্রগতিশীল হওয়া ব্যাঞ্ছনীয়। এর পরে আয় বাড়ালে অধিকহারে কর রাজস্ব আদায় করা সম্ভব এবং করের বোঝা বণ্টনে সমতা অর্জন সম্ভব।
৪. স্থিতিস্থাপক:
কর কাঠামো অবশ্যই স্থিতিস্থাপক হবে। স্থিতিস্থাপক কর কাঠামোতে করের ভিত্তি যে হারে বাড়ে কর আদায়ের পরিমাণ তার চেয়ে অধিক হারে বাড়ে। জিডিপি বৃদ্ধির সাথে সাথে ট্যাক্স/ জিডিপি এর হার বাড়তে থাকে।
৫. ন্যায়বিচার ও সমতার সহায়ক :
একটি উত্তম কর ব্যবস্থা এমন হবে যেন তা সমাজে ন্যায় বিচার ও সমতা প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয়। সামজের বিত্তশালী ধনী ব্যক্তিগণের নিকট থেকে অধিকহারে কর আদায় করে দারিদ্র্য বিমোচনে ব্যয় করা হলে সমাজের ধনী- গরিবের ব্যবধান কমে আসে এবং সামাজিক ন্যায়বিচার ও সমতা অর্জিত হয়।
৬. দক্ষ ও যোগ্য প্রশাসন :
কর প্রশাসনের সাথে জড়িত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দক্ষতা ও যোগ্যতা উঁচুমানের হওয়া বাঞ্ছনীয় উত্তম কর কাঠামোর আওতায় সংশ্লিষ্ট দক্ষ ও যোগ্য কর্মকর্তা কর্মচারীগণই প্রকৃতপক্ষে কর ফাঁকি রোধ করে সরকারের রাজস্ব আদায়ের হার বাড়াতে পারেন। পারে না। কোনোরূপ অনৈতিক-
৭. কর প্রশাসনের স্বাধীনতা :
কর প্রশাসনের স্বাধীনতা ছাড়া আদর্শ কর কাঠামো তৈরি হতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, দলীয়, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী কর্মকর্তাকে পক্ষপাতিত্ব থাকা বাঞ্ছনীয় নয়।
৮. দুর্নীতিমুক্ত :
আদর্শ কর কাঠামোর আওতায় এর সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, কর্মচারী, করদাতা ও কর হিসাব-নিকাশকারিগণ দুর্নীতি মুক্ত হবেন-কোনোরূপ ছলছাতুরির আশ্রয় নেবে না এটাই প্রত্যাশিত।
৯. সরলতা :
কর কাঠামো এমন হওয়া উচিত যেন জনগণ সহজে কর আদায় পদ্ধতি, হিসাব পদ্ধতি বুঝতে পারে। এক বাক্যেবলা যায়, করের আইন-কানুন সহজ, সরল ও বোধগম্য হওয়া বাঞ্ছনীয়।
১০. কর ফাঁকির মাত্রা কম :
কর ফাঁকির মাত্রা যেন কম হয় সে ব্যবস্থা অবশ্যই কর কাঠামোর মধ্যে থাকতে হবে। একটি আদর্শ কর-সংস্কৃতি গড়ে তোলার ব্যবস্থা কর কাঠামোতে থাকতে হবে যেন কর প্রদানে জনগণ উৎসাহিত হয়। উত্তম কর কাঠামোর আওতায় কর ফাঁকির প্রবণতা ও মাত্রা কম হয়।
উপসংহার :
কোনো দেশের কর কাঠামো ভাল কি মন্দ তা মূলত একটি আপেক্ষিক বিষয়। উপরে বর্ণিত বৈশিষ্ট্যসমূহের সব না হোক অন্তত অধিকাংশের উপস্থিতিতে একটি দেশের কর কাঠামোকে ভাল বা উত্তম বলা যেতে পারে।
আবার উপরে বর্ণিত বৈশিষ্ট্যসমূহের অধিকাংশের অনুপস্থিতিতে একটি দেশের কর কাঠামোকে আদর্শ বা উত্তম কর কাঠামো বলা যাবে না।
নিত্য নতুন সকল আপডেটের জন্য জয়েন করুন
If any objections to our content, please email us directly: helptrick24bd@gmail.com