৭ম শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি সামষ্টিক মূল্যায়ন সমাধান - ক দলের কাজ: একজন গুণি ব্যক্তির জীবনী - Class 7 Digital Technology 1st Summative Assessment Solution
৭ম শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি সামষ্টিক মূল্যায়ন সমাধান - ক দলের কাজ: একজন গুণি ব্যক্তির জীবনী
ক-দলের কাজ: একজন গুণি ব্যক্তির জীবনী
এলাকার বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, বিখ্যাত গুণি ব্যক্তি, লেখক, কবি, সমাজে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি, সাদা মনের ও মানবসেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি। এরূপ ব্যক্তিত্বের যেকোনো একজনের পরিচিতি ও তাঁর কৃতিত্বের পরিচয়/জীবনী।
আমি বেলাল হোসাইন, সপ্তম শ্রেণির একজন ছাত্র। আমার জন্ম বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগের কিশোরগঞ্জ জেলায়। শৈশব থেকে এখানেই আমার বেড়ে ওঠা। আমার জন্মস্থান এই কিশোরগঞ্জ নানা গুণি মানুষের পদধূলিতে ধন্য।
এমনই এক মহান গুণি ব্যক্তি হচ্ছেন- শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। তিনি আমাদের কিশোরগঞ্জের গর্ব। নিচে তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবন ও কৃতিত্ব সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন
বাংলাদেশের চিত্র শিল্পীদের কথা উঠলেই প্রথমে যেই শিল্পীর নাম সবার মাথায় আসে তাহলো শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। বাংলাদেশের এই মহৎ শিল্পী জয়নুল আবেদিন শিল্প আন্দোলনের পিছনে মূল ব্যক্তি হিসেবে ছিলেন। যিনি ১৯৪৩ সালের বাংলার দুর্ভিক্ষের ছবি দিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
১৯৪৭ সালে ভারত থেকে পাকিস্তান বিভক্ত হওয়ার পর, তিনি তার চারপাশের শিল্পীদের একসাথে করতে সক্ষম হন। তারা শিল্পের বিভিন্ন কাজ নিয়ে গবেষণা করতেন। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সম্পর্কে একটা কথা নিঃসংকোচে বলা যায় যে তিনি নিজেই ছিলেন একটি ইনস্টিটিউট।
জন্ম ও প্রাথমিক জীবন:
জয়নুল আবেদিন বৃহত্তর ময়মনসিংহ (তৎকালীন মহকুমা শহর) বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলায় কেন্দুয়াতে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৯ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আদি নিবাস ছিল পাবনায়। তাঁর পিতার নাম তমিজউদ্দিন আহাম্মেদ।
যিনি ছিলেন পুলিশের দারোগা (সাব- ইন্সপেক্টর)। তার মাতার নাম জয়নাবুন্নেছা । উনি একজন সাধারণ গৃহিণী ছিলেন। নয় ভাইবোনের মধ্যে জয়নুল আবেদিন ছিলেন সবার বড় ।
খুব ছোটবেলা থেকেই তিনি ছবি আঁকতে পছন্দ করতেন। পাখির বাসা, পাখি, মাছ, গরু-ছাগল, ফুল-ফল এঁকে মা-বাবাকে দেখাতেন। ছেলেবেলা থেকেই শিল্পকলার প্রতি তার গভীর আগ্রহ ছিল। মাত্র ষোল বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে তিনি বন্ধুদের সাথে কলকাতায় গিয়েছিলেন শুধু গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস দেখার জন্য।
কলকাতা গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস ঘুরে আসার পর সাধারণ পড়াশোনায় জয়নুল আবেদিনের মন বসছিল না। তাই ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে ম্যাট্রিক পরীক্ষার আগেই স্কুলের পড়ালেখা বাদ দিয়ে কলকাতায় চলে যান। এবং মায়ের অনুসমর্থনে গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস-এ ভর্তি হন।
তাঁর মা জয়নুল আবেদিনের আগ্রহ দেখে নিজের গলার হার বিক্রি করে ছেলেকে কলকাতার তখনকার আর্ট স্কুলে ভর্তি হতে সাহায্য করেন। জয়নুল আবেদিন ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কলকাতার সরকারি আর্ট স্কুলে পড়েন।
১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টসের ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
জয়নুল আবেদিনের শিক্ষাজীবন
লেখাপড়ায় জয়নুল আবেদিন বেশি ভালো ছাত্র ছিল না। উনার প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শুরু হয়েছিল নিজ শহরের পন্ডিত পাড়া পাঠশালায়। যখন তারা বাসা বদল করলো তারপরে তিনি ভর্তি হন ময়মনসিংহ জেলা স্কুল এবং মৃত্যুঞ্জয় ইংলিশ হাইস্কুলে।
যেহেতু জয়নুল আবেদিনের প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার থেকে চিত্রাঙ্কনে বেশি আগ্রহ ছিল সেহেতু তার মা তাকে সবসময় অনুপ্রেরণা দিত। এমনকি যখন তার প্রতিভা দেখে জেলা বোর্ডই কলকাতা আর্ট কলেজে তাঁর শিক্ষাকালের প্রথম পর্যায়ের অতি জরুরি বৃত্তি প্রদান করে তখন উনার মা তার সোনার হার বিক্রি করে তাকে কলকাতায় আর্ট কলেজে পড়াশোনা করাতে পাঠান।
যার ফলে ১৯৩৩ সালে এসএসসি পরীক্ষার পূর্বেই তিনি কলকাতা চলে। যান এবং সেখানে কলকাতায় সরকারি আর্ট স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৩৮ সালে পাঁচ বছরের অধ্যায়ন শেষে কলকাতা সরকারি আর্ট কলেজের ড্রয়িং এন্ড পেইন্টিং ডিপারমেন্ট থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তার অসাধারণ প্রতিভার কারণে তিনি সেখানে ছাত্র থাকাকালীন আর্ট স্কুলের শিক্ষক নিযুক্ত হন। এমনকি তিনি ১৯৫১-৫২ সালে স্ল্যাড স্কুল অফ আর্টস, লন্ডনে পড়াশোনা করেন।
কর্মজীবন
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ শাসনের সময় ভারতবর্ষ দুটি দেশের বিভক্ত হয় যথা ভারত ও পাকিস্তান। পূর্ববঙ্গ নতুন নাম লাভ করে পূর্ব পাকিস্তান যা পরবর্তীতে ১৯৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করার পর বাংলাদেশ নামে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পূর্ববঙ্গের প্রথম প্রজন্মের শিল্পীদের প্রধান ব্যক্তিত্ব জয়নুল আবেদিন।
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতবিভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানে একটি চিত্রকলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন অনুভব করেন জয়নুল আবেদীন । নিজ উদ্যোগে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে পুরান ঢাকার জনসন রোডের ন্যাশনাল মেডিকেল স্কুলের একটি পুরাতন কক্ষে গভর্নমেন্ট আর্ট ইন্সটিটিউট স্থাপন করেন।
প্রথমে ১৮ জন ছাত্র নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। জয়নুল আবেদিন ছিলেন এ প্রতিষ্ঠানের প্রথম শিক্ষক। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে এই আর্ট ইন্সটিটিউট সেগুনবাগিচার একটি বাড়িতে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে আর্ট ইন্সটিটিউটটি শাহবাগে স্থানান্তরিত হয়।
শিল্পকর্ম
১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের ছবি চিত্রমালার জন্য তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। তার চিত্রকর্মের মধ্যে অন্যতম- ১৯৫৭-এ নৌকা, ১৯৫৯-এ সংগ্রাম, ১৯৭১-এ বীর মুক্তিযোদ্ধা, ম্যাডোনা। তার দীর্ঘ দুটি স্কুল ১৯৬৯-এ অংকিত 'নবান্ন' এবং ১৯৭৪-এ অংকিত ‘মনপুরা- ৭০ জননন্দিত দুটি শিল্পকর্ম। অনুমান করা হয় তার চিত্রকর্ম তিন হাজারেরও বেশি।
১৯৪৩ সালে বাংলার দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের সকরুণ চিত্র এঁকে বিশ্ববাসীর বিবেককে নাড়িয়ে দেওয়া এক বিদ্রোহী শিল্পী জয়নুল আবেদিনকেও দেখতে পাওয়া যায়। সে সময় তিনি মূলত দুটি চরিত্রকে উপজীব্য করে সৃষ্টি করেছেন কালজয়ী চিত্রকর্ম 'দুর্ভিক্ষ-চিত্রমালা'। বিষয়বস্তু ছিল মা ও শিশু। এছাড়াও তার বিখ্যাত চিত্রকর্মের মধ্যে রয়েছে সংগ্রাম, সাঁওতাল রমণী, ঝড়, কাক, বিদ্রোহী ইত্যাদি।
সংগ্রামী জীবনের অবসান
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করার আন্দোলনে নিজেকে সংক্রিয়ভাবে জড়িত করেন। তিনি পূর্বে ধারণা করেছিলেন যে, ইউরোপীয় বা আমেরিকা কিছু কৌশল ও রীতির প্রভাব, যা এখানকার কিছু চিত্রশিল্পীকে অনুপ্রাণিত করেছিল, যা দেশিয় রীতিকে ধ্বংস করবে। কিন্তু ফুসফুসে ক্যান্সারের কারণে তিনি তাঁর কাজ সম্পন্ন করতে পারেন নি। তাঁর স্বাস্থ্য দ্রুত ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে। ১৯৭৬ সালের ২৮ মে ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়।
Tag: ৭ম শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি সামষ্টিক মূল্যায়ন সমাধান, ক দলের কাজ: একজন গুণি ব্যক্তির জীবনী, ৭ম শ্রেণির ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন এর উত্তরপত্র, ডিজিটাল প্রযুক্তি সামষ্টিক মূল্যায়ন সমাধান
নিত্য নতুন সকল আপডেটের জন্য জয়েন করুন
If any objections to our content, please email us directly: helptrick24bd@gmail.com