৭ম/সপ্তম শ্রেণির বিষয় ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়ন সমাধান (থিম-১,২,৩)

Follow Our Official Facebook Page For New Updates


Join our Telegram Channel!

৭ম/সপ্তম শ্রেণির বিষয় ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়ন সমাধান (থিম-১,২,৩)

৭ম/সপ্তম শ্রেণির বিষয় ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়ন সমাধান (থিম-১,২,৩)

কাজ-১: বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধান ।

থিম-১: মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন।

অনুসন্ধানের প্রশ্নঃ 

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন কেমন ছিল? প্রশ্নে যে বিষয়বস্তুগুলো রয়েছে:
  • মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে পূর্ব-পাকিস্তানে কোন কোন রাজনৈতিক দল সক্রিয় ছিল?
  • পূর্ব-পাকিস্তানভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম কী ছিল?
  • রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাঁদের ভূমিকা কী ছিল?
  • পূর্ব-পাকিস্তানের কোনো রাজনৈতিক দল কী নির্বাচিত হয়েছিল?
  • নির্বাচিত হলে তাঁরা কি দেশ শাসনের ক্ষমতা পেয়েছিল?

তথ্যের উৎস: 

পাঠ্যপুস্তক, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই, স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা, ইন্টারনেট।

তথ্য বিশ্লেষণ: 

উল্লেখিত উৎস থেকে আমরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন করে দিয়েছে, এমন বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। এগুলো বিশ্লেষণ করে নিচে তথ্যগুলো উপস্থাপন করা হলো:

তথ্য উপস্থাপন:

মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আর্থ-সামজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব যেমন ছিল, ঠিক তেমন রাজনৈতিক প্রভাবও ছিল অনেক। তৎকালীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক অনেক প্রেক্ষাপট জাতিকে একটি যুদ্ধের দিকে ধাবিত করে। যেভাবে রাজনৈক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি নতুন রাষ্ট্রগঠনের দিকে ধাবিত হয়েছিল, তা নিচে তুলে ধরা হলো:

ভাষা আন্দোলনে মুসলিম লীগের নিষ্ক্রীয় ভূমিকা দেখে পূর্ব-বাংলার জনগণ দলটির ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে। ফলে বৃহৎসংখ্যক জনগণের সমর্থনে মুসলিম লীগের মেরুদণ্ডবিহীন কার্যকলাপ এবং পশ্চিম পাকিস্তানি ও সামন্ত প্রভুদের কার্যকলাপে বীতশ্রদ্ধ হয়ে এদেশের মানুষ আওয়ামীলীগ গঠন করে যা স্বাধীনতা আন্দোলনের দিকনির্দেশনায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে । মূলত আওয়ামীগ গঠন ছিল মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতি প্রেক্ষাপটের প্রথম সূত্রপাত।


পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তাদের বৈষম্যপূর্ণ আচরণ অব্যহত রাখলে অধিকার সচেতন এদেশের মানুষ ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সম্মিলিত যুক্তফ্রন্ট গঠন করে। একুশ দফার ভিত্তিতে যুক্তফ্রন্ট বিজয়ী হয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করে। বাঙালিদের এ বিজয়কে পাকিস্তানি শাসক চক্র সহজে মেনে নিতে পারেনি। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার চালাতে থাকে। বাঙালি-অবাঙালি শ্রমিকদের মধ্যে দাঙ্গা বাধিয়ে এদেশের সামাজিক জীবনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। ১৯৫৫ সালে গণপরিষদ ভেঙে দিয়ে অনেক নেতা কর্মীকে গ্রেফতার করে।


১৯৬০ সালের প্রথম দিকে শরিফ শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়, যা ১৯৬২ সালে বাস্তবায়ন শুরু হয় । কিন্তু বৈষম্যমূলক বলে ওই শিক্ষানীতি প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন শুরু করে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন।


পূর্ব পাকিস্তানে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শোষণ বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে ১৯৬৬ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলের সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। কিন্তু সেটি তখন গৃহীত হয়নি। বরং পাকিস্তানকে ভেঙে দুইভাগ করতে চাওয়ার অভিযোগ এনে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত মামলাটি দায়ের করা হয় । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান করে এই মামলায় ৩৫ জনকে আসামি করা হয়।


১৯৬৯ সালের শুরুতে পূর্ব-বাংলার স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে ওঠে। আন্দোলনের মুখে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া খানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

৭ই ডিসেম্বর, ১৯৭০ তৎকালীন অবিভক্ত পাকিস্তানের প্রথম এবং শেষ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যাতে আওয়ামীলীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে । অথচ বিশাল জয় পাওয়া সত্যেও পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা আওয়ামীলীগের হাতে দেওয়া হয় না। ফলে চূড়ান্ত যুদ্ধের দিকে চলে যায় দেশ।

৭ই মার্চ, ১৯৭১। তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে শেখ মুজিবুর রহমান প্রায় ১৮ মিনিট ব্যাপী ভাষণ দেন। ভাষণে সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলেও, সেখানেই শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।'

সুতরাং উপরোক্ত আলোচনায় দেখা যায় যে, ১৯৪৯ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের নির্যাতিত-নিপীরিত জনগণ স্বাধীনতা আন্দোলনের দিকে ধাবিত হয়।

ফলাফল বা সিদ্ধান্ত: 

প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ ও উপস্থাপনার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পেরেছি যে, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে নানাভাবে পূর্ব-পাকিস্তানের জনগণকে শাসন ক্ষমতার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। পূর্ব-বাংলার আর্থ-সামজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে বঞ্চিত জনগণ রাজনৈতিকভাবেও ছিল অবহেলিত। আর এই অন্যায়-অত্যাচারের ফলে স্বাধীনতা যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে। 


কাজ-১: বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধান ।

থিম-২: মুক্তযুদ্ধে স্থানীয় বিভিন্ন পক্ষের অবস্থান ও ভূমিকা


অনুসন্ধানের প্রশ্ন: 

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয় বিভিন্ন পক্ষের অবস্থান ও ভূমিকা কেমন ছিল?
প্রশ্নে যে বিষয়বস্তুগুলো রয়েছে:
  • বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে কারা অংশগ্রহণ করেছিনে?
  • মুক্তিযুদ্ধে কোন কোন শ্রেণির লোক অংশ নিয়েছিলেন?
  • মুক্তিযুদ্ধে কি নারীদের কোনো ভূমিকা বা অবস্থা ছিল ?
  • মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী কোন পক্ষ ছিল কী?

তথ্যের উৎস: 

পাঠ্যপুস্তক, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই, স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা, ইন্টারনেট।

তথ্য বিশ্লেষণ: 

উল্লেখিত উৎস থেকে আমরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্নভাবে ভূমিকা রাখা বিভিন্ন পক্ষ সম্পর্কে জেনেছি। এই তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে নিচে তথ্যগুলো উপস্থাপন করা হলো:

তথ্য উপস্থাপন:

মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয় বিভিন্ন পক্ষের অবস্থান ও ভূমিকা

মুক্তিযুদ্ধ; মানে মুক্তির জন্য যুদ্ধ । বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ যেহেতু সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগঠিত হয়েছিল, তাই ধর্ম-বর্ণ-ছোট-বড় নির্বিশেষে সবাই এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। সকলের অংশগ্রহণে এ যুদ্ধ সার্বজনীনতা লাভ করে। তবে দেশের সবাই যে যুদ্ধের পক্ষে ভূমিকা রেখেছিল, তা নয় । বরং কতিপয় দেশদ্রোহী গোষ্ঠী আপামর জনগণের স্বার্থকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ও হানাদার বাহিনীর হয়েও কাজ করেছিল। নিচে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয় বিভিন্ন পক্ষের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হলো:

১। মুক্তিযোদ্ধা: 

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চ ভাষণের উদ্বুধ হয়ে দেশের মুক্তিকামী জনতা হাতে অস্ত্র তুলে নেয়। যার কাছে যা ছিল, তাই নিয়ে শত্রু মোকাবিলায় যুদ্ধক্ষেত্রে নেমে পড়েন। এরাই মূলত বীর মুক্তিযোদ্ধা। দেশকে শত্রুমুক্ত করতে এই বীর মুক্তিযোদ্ধারা সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণ করেন, জীবন বিসর্জন দেন এবং অবশেষে বিজয় ছিনিয়ে আনেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এসব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।

২। শিল্পীঃ 

বাংলাদেশের তৎকালীন শিল্পী সমাজ মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য ভূমিকা রেখেছিল । তাঁরা হয়তো সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে পারেননি, তবে যুদ্ধের মাঠের বাইরে থেকে যোদ্ধাদের প্রেরণা যুগিয়েছেন। বাংলাদেশ বেতারে বিভিন্ন শিল্পীরা দেশত্ববোধক গান পরিবেশন করেন। যা শুনে যুদ্ধের ময়দানে মুক্তিযোদ্ধারা অবিরাম উৎসাহ পেয়েছিলেন। শুধু মুক্তিযুদ্ধের ওপর ভিত্তি করেই তৎকালীন সময়ে অসংখ্য দেশত্ববোধক গান রচনা করা হয় । যা মুক্তিযোদ্ধাদের মনে দেশপ্রেমের সঞ্চার করেছিল। তাই বলা যায়, মহান মুক্তিযুদ্ধে এসব শিল্পী-সমাজের ভূমিকা অপরীসিম।

৩। স্থানীয় নারী-সমাজ: 

মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সেবায় যাঁরা এগিয়ে আসেন, তাঁরা হচ্ছেন বাংলার নারী-সমাজ। যুদ্ধে আহত যোদ্ধাদের সেবা-শুশ্রূষা করে সুস্থ করে তোলেন তাঁরা। মা- বোনদের সেবা পেয়ে পুনরায় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতেন যোদ্ধারা। শুধু অসুস্থ যোদ্ধাদের সেবাই না, পাকিস্তানি বাহিনীর বিভিন্ন গোপন খবরও মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে সরবরাহ করতে তাঁরা। আর এই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে গিয়ে প্রাণ এবং সম্ভ্রম দিতে হয়েছে অনেক নারীকে। ইতিহাসে যাঁদের আমরা বীরঙ্গনা নামে চিনি।

8। রাজাকার: 

মুক্তিযুদ্ধে সবাই যে দেশের হয়ে লড়াই করেছিল, তা কিন্তু না। এদেশেরই আলো-বাতাসের বড় হওয়া কতিপয় মানুষ ও সংগঠন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এবং হানাদার বাহিনীর হয়ে কাজ করেছিল । এরাই মূলত রাজাকার । মুক্তিযুদ্ধে এদের ভূমিকা ছিল সম্পূর্ণ নেতিবাচক। এরা মুক্তিযোদ্ধাদের খবর পাকিস্তানি সেনাদের কাছে পৌঁছে দিত, মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়িঘর চিনিয়ে দিত এবং নারীদেরকে হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দিত। শুধু তাই না, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর মদদপুষ্ট এসব রাজাকারা এদেশের বহু মানুষের ঘরবাড়ি লুণ্ঠন করে জ্বালিয়ে- পুড়িয়ে দেয় এবং জায়গা-জমি দখল করে নেয় ।

সুতরাং, উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয় বিভিন্ন পক্ষ যেমন ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছিল, ঠিক তেমনি নেতিবাচক ভূমিকাও রেখেছিল অনেকে। যেসব বীর যোদ্ধাদের জীবনের বিনিময়ে আমরা আমাদের স্বাধীনতা পেয়েছি, বাঙালি জাতি তাঁদের আজীবন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। অপরদিকে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর হয়ে কাজ করা আল-বদর, আল-শামস তথা রাজাকারদের জাতি ঘৃণার সাথে স্মরণ করবে।

ফলাফল বা সিদ্ধান্ত: 

প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ ও উপস্থাপনার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পেরেছি যে, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় স্থানীয় বিভিন্ন পক্ষ দল-মত নির্বিশেষে দেশ-মাতৃকার টানে শত্রুর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। আবার একটি স্বার্থান্বেসী মহল নিজেদের স্বার্থসাধনে দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সাহায্য করেছিল।


কাজ-১: বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধান।

থিম-৩: মুক্তিযুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন রাষ্ট্র ও ব্যক্তির অবস্থান ও ভূমিকা


অনুসন্ধানের প্রশ্ন: 

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন রাষ্ট্র ও ব্যক্তির অবস্থান ও ভূমিকা কেমন ছিল?

প্রশ্নে যে বিষয়বস্তুগুলো রয়েছে: 
  • বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কোন কোন দেশ বা রাষ্ট্র অবস্থান নেয়? 
  • কোন কোন বিদেশী ব্যক্তি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ইতিবাচক ভূমিকা রাখেন?

তথ্যের উৎস: 

পাঠ্যপুস্তক, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই, স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা, ইন্টারনেট।

তথ্য বিশ্লেষণ: 

উল্লেখিত উৎস থেকে আমরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রাখা বিভিন্ন রাষ্ট্র ও ব্যক্তি সম্পর্কে জেনেছি। এই তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে নিচে উপস্থাপন করা হলো:

তথ্য উপস্থাপন:

মুক্তিযুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন রাষ্ট্র ও ব্যক্তির অবস্থান ও ভূমিকা

১৯৭১ সালে যখন বাঙালিরা একটি অনিবার্য মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন, তখন এ যুদ্ধের ন্যায্যতা অনুধাবন করতে পেরে বিশ্বের অনেক রাষ্ট্র, সংস্থা এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বাঙালিদের পক্ষে অবস্থান করেন। তাঁদের ইতিবাচক ভূমিকার কারণে বাংলাদেশ সারাবিশ্ব ব্যপী একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের পক্ষে জনমত গঠন করতে সক্ষম হয়। নিচে এঁদের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

১. ভারত: 

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূচনাতেই সৃষ্টি হয় শরণার্থী সমস্যা। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর নৃসংশতায় লাখ লাখ মানুষ গৃহহারা হয়। ২৫শে মার্চের মধ্যরাতে বাঙালি নিধনযজ্ঞ শুরু হলে প্রাণভয়ে ও নিরাপত্তার সন্ধানে লাখ লাখ মানুষ বিভিন্ন পথে পাশের দেশ ভারতের সীমান্তবর্তী গ্রাম ও শহরগুলোতে আশ্রয় নেয়। ১৯৭১ সালের ৫ই ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী শরণার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৯৮ লাখ ৯৯ হাজার ৩০৫ জন। আর ভারতও তখন মহানুভবতার পরিচয় দিয়ে বিশাল সংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শরণার্থী সমস্যা মোকাবিলায় মূল ভার বহনকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ভারত।

২. সোভিয়েত ইউনিয়ন: 

ভারতের পর আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বড় মিত্রশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় সোভিয়েত ইউনিয়ন। সোভিয়েতের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করলে তার প্রতিপক্ষ আমেরিকা ও চীনকে হীনবল করা সম্ভব হবে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতকে আশ্বাস দেয় যে, যুক্তরাষ্ট্র বা চীন যুদ্ধে সম্পৃক্ত হলে তারা এর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়া সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করে। ২৫ মার্চ গণহত্যার পর প্রথম প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল ভারত। দ্বিতীয়টি সোভিয়েত ইউনিয়ন। সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভূমিকা রেখেছিল।

৩. অন্যান্য মিত্র দেশসমূহ: 

মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বন্ধুর ভূমিকা পালন করে যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্যরা জোরালোভাবে বাঙালির স্বাধীনতার লড়াইকে সমর্থন জানান। শরণার্থীদের জন্য অর্থ ও ত্রাণ সহায়তা দেয়। একাত্তরের গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাক্রম সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে জানাতে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

তবে শুধু বিভিন্ন রাষ্ট্রই না, অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিই মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। এঁদের মধ্যে আছেন সঙ্গীত শিল্পী, গায়ক এবং বেশ কয়েকজন সাংবাদিক—যাঁরা বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের পক্ষ জনমত গড়তে সক্ষম হন। 

নিচে এঁদের সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

১। পণ্ডিত রবিশঙ্কর রায় ও জর্জ হ্যারিসন: 

ভারতের নাগরিক পণ্ডিত রবিশংকর এবং মার্কিন নাগরিক জর্জ হ্যারিসন উভয় ছিলেন সঙ্গীত শিল্পী। ১৯৭১ সালে পণ্ডিত রবিশংকর জর্জ হ্যারিসনকে বাংলাদেশের চলমান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অবহিত করেন এবং বাংলাদেশকে অর্থ দিয়ে সাহায্যের জন্য একটি কনসার্ট আয়োজনের প্রস্তাব দেন। রবিশঙ্করের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে হ্যারিসন ১লা আগষ্ট ১৯৭১ সালে নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ' নামে একটি কনসার্টের আয়োজন করেন। এই কনসার্টে পণ্ডিত রবিশংকর ও আলী আকবর খান সেতার পরিবেশন করেন এবং জর্জ হ্যারিসন পরিবেশন করেন বাংলাদেশের জনগণকে নিয়ে তার নিজের লেখা সেই বিখ্যাত গান—

'My friend came to me 

With sadness in his eyes 

Told me that he wanted hel 

Before his country dies'

উক্ত কনসার্ট থেকে সেদিন প্রায় আড়াই মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাংলাদেশকে সাহায্য করার জন্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। যা পরবর্তীতে বাংলাদেশের জনগণের কাছে পাঠানো হয়।


২। সাইমন ড্রিং: 

১৯৭১ সালে ইউকে'র দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফের প্রতিবেদক সাইমন ড্রিং ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ প্রত্যক্ষ করেন। সেই সময় পূর্ব পাকিস্তানের উত্তাল পরিস্থিতি নিয়ে একের পর এক রিপোর্ট পাঠান টেলিগ্রাফ পত্রিকায়। ২৫ মার্চ গণহত্যার পর সামরিক জান্তা যখন বিদেশি সাংবাদিকদের দেশে ফেরত পাঠায়, তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ২৭ মার্চ সকালে সাইমন ড্রিং ঘুরে দেখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হল, রাজারবাগ পুলিশ ব্যারাক ও পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা এবং লিখে ফেলেন ঢাকায় দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর চালানো প্রথম দফার গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের প্রত্যক্ষ চিত্র ‘ট্যাংকস ক্র্যাশ রিভল্ট ইন পাকিস্তান' ।

৩। মার্ক টালি: 

একাত্তরে মার্ক টালি বিবিসির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সংবাদদাতা ছিলেন। যুদ্ধের দিনগুলোতে রেডিওতে তাঁর কণ্ঠ হয়ে উঠেছিল মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা। মার্ক টালি সীমান্তবর্তী বিভিন্ন শরণার্থী শিবির ও জেলাগুলো ঘুরে বাঙালির দুর্দশা ও যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির খবর পাঠাতে থাকেন বিবিসির হেড কোয়ার্টারে। ২৫ মার্চের বর্বর হত্যাযজ্ঞও তিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন ঢাকায় বসে।

৪। সিডনি শানবার্গ: 

নিউইয়র্ক টাইমসের দক্ষিণ এশীয় সংবাদদাতা ছিলেন সিডনি শনবার্গ। ২৫ মার্চের গণহত্যার খবর প্রচার করায় পাকিস্তানি সামরিকবাহিনী তাঁকে দেশ থেকে বহিষ্কার করে । শনবার্গ ২৮ মার্চ নিউইয়র্ক টাইমসে In Dacca, Troops use Artillery to halt revolt শিরোনামে পূর্ব পাকিস্তানে নিরীহ বাঙালির ওপর পাকিস্তানের সামরিকবাহিনীর বর্বরতা তুলে ধরেন।

এমনই অসংখ্য রাষ্ট্র ব্যক্তি মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকস্তানিদের দমন-নিপীড়নের তথ্য বিশ্বব্যপী প্রচার করেছেন। তাদের এই প্রচারণার ফলে বিশ্বজুড়ে পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর বিপক্ষে শক্তিশালী জনমত তৈরি হয়। যা বাংলাদেশকে স্বাধীনতার দিকে আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে দেয়। আমরা মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা এসব রাষ্ট্র ও ব্যক্তিদের কখনোই ভুলব না।


কাজ ১: বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধান (অবশিষ্ট কাজ)

ধাপ ৩: শিক্ষার্থীরা তথ্য সাজিয়ে প্রতিবেদন/ দেয়ালিকা/পুস্তিকা ইত্যাদি যেকোনো মাধ্যমে অ্যাসাইনমেন্ট আকারে জমা দিবে।


থিম ১ এর উপর নির্ভর করে পোস্টার পেপার এর নমুনা দেয়া হলে:

মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন 


পোস্টার পেপারের ওয়ার্ড ফাইল ও পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করতে চাইলে নিচের লিংকে ক্লিক করুন।

Download Word & PDf File


কাজ ২: শিক্ষার্থীরা প্রাকৃতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বিশ্বব্যাপী ভ্রাতৃত্বের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক আলোচনা ও উপস্থাপনা। (৬০ মিনিট)

ধাপ ৪: শিক্ষার্থীরা নিচে প্রদত্ত 'কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে বাংলাদেশ ও বিশ্ব' অনুচ্ছেদটি পাঠ থেকে প্রাকৃতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বিশ্ব ভ্রাতৃত্বে বিষয়টি অনুধাবন করবে।

ধাপ ৫: সমাজের যেকোনো উন্নয়ন প্রাকৃতিক পরিবেশে কিভাবে প্রভাব ফেলছে তা নিয়ে আলোচনা করবে।

কাজের বিবরণী: শিক্ষার্থীদের নিচের প্রাতবেদনটি পড়তে বলবেন।


কাবর্ণ নিঃসরণ হ্রাসে বাংলাদেশ ও বিশ্ব

যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কলকারখানা স্থাপন, যানবাহন ও পরিবরহন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রয়োজন। কিন্তু এসব কলকারখানা, যানবাহনের কালো ধোঁয়া পরিবেশে কার্বন নির্গত করে পরিবেশকে দূষিত করে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। এতে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাচ্ছে এবং সমূদ্রে পানি পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। এতে করে সমূদ্র তীরবর্তী এলাকা ইতোমধ্যে ডুবে যাচ্ছে। বাংলাদেশরও সমূদ্রতীরবর্তী অঞ্চল ভবিষ্যতে ডুবে যেতে পারে। এরকম অবস্থায় বিশ্বব্যাপী এই দূষণকে রোধ করার জন্য বিভিন্ন দেশ পারস্পরিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। অনেক দেশ একসাথে কলকারখানা ও যানবাহনের নিসৃত কার্বনের ওপর কর আরোপ করছে। এতে করে কলকারখানা ও যানবাহন মালিক কার্বন-নিঃসরণের প্রতি সচেতন হচ্ছে। তারা নির্ধারিত কার্বনের বেশি কার্বন নিঃসরণ করলেই অতিরিক্ত টাকা দিচ্ছে। বাংলাদেশও এই কার্বন কর নিচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই কার্বন কর বিশ্বব্যাপী আবহাওয়া পরিবর্তন রোধে বিশেষ সহায়তা করছে।

আমরা দেখতে পারছি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যেমন বিভিন্ন দেশ একাত্ম হয়ে সহযোগিতা করছে। তেমনি অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিবেশ উন্নয়নেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ একাত্ম হয়ে কাজ করছে। ফলে মানুষের ভবিষ্যত হুমকির সম্ভবনা কমে যাচ্ছে।


প্রাকৃতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বিশ্বব্যাপী ভ্রাতৃত্বঃ

প্রাকৃতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব বলতে বিশ্বব্যাপী ব্যক্তি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য, সহযোগিতা এবং বোঝাপড়ার ধারণাকে বোঝায়। প্রাকৃতিক উন্নয়নে, এই ধারণাটি বাস্তুতন্ত্রের আন্তঃসংযোগ এবং পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়। সামাজিকভাবে, এটি সহানুভূতি, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং অসমতার মতো সাধারণ সমস্যাগুলো মোকাবেলার জন্য ভাগ করা দায়িত্বের প্রচার জড়িত। প্রাকৃতিক উন্নয়ন ছাড়া সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাছাড়া সামাজিক বিভিন্ন অবকাঠামো গড়ে তুলতে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার করতে হয়। এই দুইটি উপাদানের যথাযথ ব্যবহারের জন্য বিশ্বব্যাপী ভ্রাতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


আমাদের নিজস্ব পরিমন্ডলে যে উন্নয়নগুলো দেখতে পাই তা হলো:

  • শিল্প-প্রতিষ্ঠান স্থাপন।
  • আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ।
  • বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ।
  • কলকারখানা স্থাপন।
  • সড়ক ও রেলপথ নির্মাণ।

একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। নিচে ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব গুলো আলোচনা করা হলো:

নেতিবাচক প্রভাব:

বায়ু দূষণ:

বিভিন্ন ক্ষতিকর গ্যাস, ধূলিকণা, ধোঁয়া অথবা দুর্গন্ধ বায়ুতে মিশে বায়ু দূষিত করে। যানবাহন ও কলকারখানার ধোঁয়া বায়ু দূষণের প্রধান কারণ। গাছপালা ও ময়লা আবর্জনা পোড়ানোর ফলে সৃষ্ট ধোঁয়ার মাধ্যমে বায়ু দূষিত হয়। বায়ু দূষণের ফলে পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে ও এসিড বৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও মানুষ ফুসফুসের ক্যান্সার, শ্বাসজনিত রোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

পানি দূষণ:

পানিতে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর পদার্থ মিশ্রিত হয়ে পানি দূষিত হয়। পয়ঃনিষ্কাশন ও গৃহস্থালির বর্জ্য অথবা কারখানার ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থের মাধ্যমে পানি দূষিত হয়। এছাড়াও ময়লা আবর্জনা পানিতে ফেলা, কাপড় ধোঁয়া ইত্যাদির মাধ্যমে পানি দূষিত হয়। পানি দূষণের ফলে জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে এবং জলজ খাদ্য শৃঙ্খলের ব্যাঘাত ঘটছে। পানি দূষণের কারণে মানুষ কলেরা বা ডায়রিয়ার মতো পানি বাহিত রোগে এবং বিভিন্ন চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

মাটি দূষণ:

বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর বস্তু মাটিতে মেশার ফলে মাটি দূষিত হয়। কৃষিকাজে ব্যবহৃত সার ও কীটনাশক, গৃহস্থালি ও হাসপাতালের বর্জ্য, কলকারখানার বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ও তেল ইত্যাদির মাধ্যমে মাটি দূষিত হয়। মাটি দূষণের ফলে জমির উর্বরতা নষ্ট হয়। মাটি দূষণ মানুষের স্বাস্থ্যের উপরও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। দূষিত মাটিতে উৎপন্ন খাদ্য হিসাবে গ্রহণের ফলে মানুষ ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়।


শব্দ দূষণ:

শব্দ দূষণ মানুষ ও জীবজন্তুর স্বাস্থ্যের ক্ষতি সাধন করে। বিনা প্রয়োজনে হর্ন বাজিয়ে, উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে এবং লাউড স্পিকার বা মাইক বাজিয়ে মানুষ শব্দ দূষণ করছে। কলকারখানায় বড় বড় যন্ত্রপাতির ব্যবহারও শব্দ দূষণের কারণ। শব্দ দূষণ মানুষের মানসিক ও শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করছে। অবসন্নতা, শ্রবণ শক্তি হ্রাস, ঘুমের ব্যাঘাত সৃষ্টি, কর্মক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদি সমস্যা তৈরি হচ্ছে।


বন উজাড় করণ:

কারখানা এবং অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ভূমির বিশাল এলাকা পরিষ্কার করার প্রয়োজন হতে পারে, যার ফলে বন উজাড় হয়। এই প্রক্রিয়ার ফলে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হতে পারে। বাস্তুতন্ত্রের ব্যাঘাত ঘটতে পারে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণকারী গাছের সংখ্যা হ্রাস করে জলবায়ু পরিবর্তনে অবদান রাখতে পারে।


ইতিবাচক প্রভাব:

  • বেকারত্ব হ্রাস।
  • অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন।
  • প্রযুক্তিগত উন্নতি সাধন ।


কাজ:

মুক্তিযুদ্ধের সময় বিভিন্ন দেশের সাথে যেমন পারস্পরিক সহযোগিতা তৈরি হয়েছিল তেমনি বর্তমানে টেকসই উন্নয়নের জন্য এই সহযোগিতা কীভাবে ভূমিকা রাখছে তা দলগতভাবে বিশ্লেষণ করতে বলবেন।

কাজের সমাধান:

মুক্তিযুদ্ধের সময় বিভিন্ন দেশের সাথে যেমন পারস্পরিক সহযোগিতা তৈরি হয়েছিল তেমনি বর্তমানে টেকসই উন্নয়নের জন্য এই সহযোগিতা গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশকে সাহায্য-সহযোগিতা করেছিল তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ভারত। বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজের দেশে আশ্রয় দেওয়া, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, মুক্তিযুদ্ধে সেনা সহায়তা দেওয়াসহ সব ধরনের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহায়তা দিয়েছিল। ভারতের সামরিক বাহিনীর সহায়তায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে স্পষ্টভাবে পরাজিত করতে সক্ষম হয়। এছাড়াও অন্যান্য অনেক দেশ বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন দিয়েছিল।


একই ক্যাটাগরির অন্যান্য পোস্ট

বর্তমানে বিভিন্ন দেশ জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সমস্যা, জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং পারস্পরিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য একে অপরকে জ্ঞান, প্রযুক্তি, শ্রমিক, অর্থ ইত্যাদি দিয়ে সহযোগিতা করছে। এই সহযোগিতার ফলে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে।


কাজ

শিক্ষার্থীরা উপরোক্ত দুটি আলোচনা থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিভিন্ন মাধ্যমে যেমন পোস্টার/কাগজ ইত্যাদি উপস্থাপন করবে। এভাবে আলোচনার মাধ্যমে প্রকৃতি ও সমাজের আন্তঃসম্পর্ক উদঘাটন করে তাদের টেকসই উন্নয়ন সম্পর্কে ধারণা পাবে। 


প্রাকৃতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বিশ্বব্যাপী ভ্রাতৃত্ব পোস্টার পেপার

প্রাকৃতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বিশ্বব্যাপী ভ্রাতৃত্ব পোস্টার পেপার ৭ম/সপ্তম শ্রেণির বিষয় ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়ন সমাধান (থিম-১,২,৩) 

পোস্টার পেপারের  পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করতে চাইলে নিচের লিংকে ক্লিক করুন।

Download Word & PDf File


কাজ ৩: টেকসই উন্নয়নে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ বিষয়ক আলোচনা ও উপস্থাপনা (৬০ মিনিট)

  • ধাপ ৬: টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ কেনো প্রয়োজন তা ন্যায্যতার ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করে উপস্থাপন করবে
  • ধাপ ৭: টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে নিজস্ব পরিমণ্ডলে কী কী পদক্ষেপ নিতে পারে তা নিয়ে দলে আলোচনা এবং উপস্থাপন করবে।
  • কাজের বিবরণী: শিক্ষার্থীরা দলগতভাবে টেকসই উন্নয়নে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে।

বিষয়বস্তুগুলো হল:

  • বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা
  • ন্যায্যতার ভিত্তিতে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের উপায়
  • টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীরা নিজস্ব পরিমণ্ডলে কী কী পদক্ষেপ নিতে পারে


১ নং এর উত্তর:

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা:

টেকসই উন্নয়নের ১৭ টি লক্ষ্যমাত্রা বা মানদন্ড আছে। এর মধ্যে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ অন্যতম। শুধু বাংলাদেশ একাকি চেষ্টা করলে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সম্ভব না। আধুনিকায়নের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রন্থ হচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদ। কোনো দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় ২৫ ভাগ বনভূমি থাকার কথা। কিন্তু আমাদের দেশে মাত্র ১৬ ভাগ বনভূমি রয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যান্য দেশেও প্রাকৃতিক সম্পদ হুমকির মুখে। তাই টেকসই উন্নয়নে সকলদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।


২ নং এর উত্তর:

ন্যায্যতার ভিত্তিতে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের উপায়:

বৈশ্বিক সহযোগিতা:

প্রাকৃতিক সম্পদসংরক্ষণের জন্য বৈশ্বিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন দেশের মধ্যে তথ্য এবং অভিজ্ঞতা আদান-প্রদান করা এবং একে অপরের সাথে শেয়ার করা প্রয়োজন।

সম্পদের পুনঃব্যবহার:

কোনো জিনিসকে পুনরায় ব্যবহার করে আমরা বর্জ্য কমাতে পারি এবং প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ করতে পারি। কোনো জিনিসকে রিসাইকেল করা বা ফেলে দেওয়ার পূর্বে তা বারবার ব্যবহার করা উচিত। কোনো জিনিস ভেঙ্গে গেলে তা ফেলে না দিয়ে বা নতুন ক্রয় না করে মেরামতের চেষ্টা করা উচিত।

সম্পদের ব্যবহার কমানো:

প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের একটি ভালো উপায় হচ্ছে তা ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়া। শক্তির ব্যবহার কমিয়ে বা বর্জ্য উৎপাদন কমিয়ে আমরা প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ করতে পারি।

সম্পদের রিসাইকেল করা:

সম্পদের রিসাইকেলের ফলে একই জিনিস বারবার ব্যবহার করা যাবে। যেমন- পুরাতন কাগজ রিসাইকেলের মাধ্যমে ব্যবহারযোগ্য কাগজে পরিণত করলে; কাগজ তৈরি করার জন্য গাছ কাটার পরিমাণ কমবে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার:

মানুষ প্রধানত অনবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন- তেল, কয়লা এবং প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করেই বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। এগুলো একবার ব্যবহারেই নিঃশেষ হয়ে যায়। তাই নবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন- সূর্যের আলো, বায়ুপ্রবাহ এবং পানির স্রোত আমাদের ব্যবহার করতে হবে।

অভ্যাসের পরিবর্তন:

প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে অভ্যাসের পরিবর্তন করা। অপ্রয়োজনে বাতি জ্বালিয়ে না রেখে আমরা শক্তির ব্যবহার কমাতে পারি। কাগজের উভয় পৃষ্ঠাতে লিখে আমরা কাগজের অপচয় কমাতে পারি। আমরা ব্যবহৃত কৌটা বা পুরাতন অ্যালুমিনিয়ামের জিনিসপত্র রিসাইকেল করে নতুন জিনিসপত্র তৈরি করতে পারি।


৩ নং এর উত্তর:

টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা নিজস্ব পরিমন্ডলে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো নিতে পারি-

  • গাছ লাগানো ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির সাথে যুক্ত হতে পারি।
  • সকলের জন্য পানি ও স্যানিটেশনের টেকসই ব্যবস্থাপনা ও প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা।
  • জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব মোকাবেলায় জরুরি কর্মব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি।
  • বিদ্যুৎ ও জল ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়া।
  • সমাজে বৈষম্য দূরীকরণে কাজ করা।
  • ভূমির অবক্ষয় রোধ ও ভূমি সৃষ্টি প্রক্রিয়ার পুনরুজ্জীবন এবং জীববৈচিত্র্য হ্রাস প্রতিরোধ করা।
  • রিসাইক্লিং ও কমপোস্টিং এর মাধ্যমে বর্জ্য কমানো।
  • সকলের জন্য সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য, টেকসই ও আধুনিক জ্বালানি সহজলভ্য করতে পারি।
  • প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় রোধে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
  • পরিবেশ বান্ধব জীবনযাপন করা।
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা সুবিধার প্রসার ঘটানো।
  • পরিবেশ দূষণকারী কার্যকলাপ এড়ানো।
  • অতিরিক্ত সার, কীটনাশক কিংবা কেমিক্যাল ব্যবহার না করা।

নিত্য নতুন সকল আপডেটের জন্য জয়েন করুন

Telegram Group Join Now
Our Facebook Page Join Now
Class 8 Facebook Study Group Join Now
Class 7 Facebook Study Group Join Now
Class 6 Facebook Study Group Join Now

Post a Comment