প্রশ্ন ॥ মহাত্মা গান্ধীর অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কে লিখ। Mahatma Gandhi's non-violent and non-cooperation movement
উত্তর : ভূমিকা : মহাত্মা গান্ধী বিশ্বাস করতেন যে অহিংস অসহযোগ পথেই রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। ১৯২০ সালের ১০ মার্চ তিনি অহিংস অসহযোগী আন্দোলনের ডাক দেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল ভারতের স্বাধীনতা; তাঁর নীতি ছিল সত্যাগ্রহ বা ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠা। স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক সমাজে উত্তরণের শ্রেষ্ঠ পথ অহিংসার পথ ।
মহাত্মা গান্ধী সম্পর্কে আরো জানতে এই পোষ্টটি পড়ুন: মহাত্মা গান্ধীর জনপ্রিয়তার কারণসমূহ
মহাত্মা গান্ধীর অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলন:
নিম্নে মহাত্মা গান্ধীর অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো : মহাত্মা গান্ধীর মতে, কালের পরিবর্তন ঘটে, প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত হয় কিন্তু অহিংসার ভিত্তিমূলে যা কিছু গড়ে উঠে তার ক্ষয় নেই। এক অর্থে অহিংসা নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধও বটে, যা স্বাধিকার অর্জনের উত্তম পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃত। আর নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ তার পক্ষেই সম্ভব যে সহ্য করে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অহিংসা বা সত্যাগ্রহের অর্থ হলো ব্রিটিশ শাসকদের তৈরি আইন অহিংসভাবে অমান্য করে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলা। অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলনের তিনটি লক্ষ্য ছিল। যেমন-
- জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের বিচার,
- খেলাফত আন্দোলনকারীদের দাবি বাস্তবায়ন এবং
- স্বরাজ প্রতিষ্ঠা।
অহিংসা ও অসহযোগ আন্দোলনের কর্মী বা সত্যাগ্রহীর বৈশিষ্ট্য :
মহাত্মা গান্ধী একজন সত্যাগ্রহী বা অহিংস আন্দোলনের কর্মীর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে নিম্নোক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন।
- সত্যাগ্রহী ব্যক্তি কখনো ইংরেজ পতাকাকে সালাম করবেন না। তবে পতাকাকে লাঞ্ছিতও করবেন না।
- সরকার তাকে গ্রেফতার করতে চাইলে তিনি স্বেচ্ছায় গ্রেফতার বরণ করবেন।
- সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য একাগ্রচিত্তে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন এবং অহিংসা ও কষ্ট স্বীকারের পথে অগ্রসর হবেন।
- তিনি প্রকৃতপক্ষে রোষ সহ্য করে যাবেন, কিন্তু প্রতিহিংসার বশবর্তী হবেন না।
- সত্যাগ্রহ প্রয়োগ করতে হলে আত্মা সংশোধন করা এবং ঈশ্বরের উপর আস্থা থাকা প্রয়োজন।
- সত্যাগ্রহীকে রাগ, দ্বেষমুক্ত রাজনৈতিক প্রতিবাদী হতে হবে।
অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলনের উপাদান :
মহাত্মা গান্ধীর অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলনের কতকগুলো উপাদান রয়েছে। নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হলো :
১. অসহযোগিতা : মহাত্মা গান্ধীর অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলন ছিল ব্রিটিশ প্রশাসনকে সহযোগিতা না করার পদ্ধতি অনুসরণ করা। গঠনমূলক ও বর্জনাত্মক নীতি অনুসরণ করা হয়। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আইনসভা, আদালত, সরকার প্রদত্ত পদক, উপাধি ইত্যাদি বর্জন করা হয় ।
২. আইন অমান্য : অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ বা পর্যায় হলো আইন অমান্য করা। আন্দোলনের সকল পথ ব্যর্থ হলে এই চূড়ান্ত উপায় অবলম্বন করতে হয়। আইন অমান্য আন্দোলন অত্যন্ত শক্তিশালী। রাষ্ট্রের প্রতিটি আইনের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপনই আইন অমান্য আন্দোলন ।
৩. হিজরত : হিজরত অর্থ দেশ ত্যাগ করা। স্বেচ্ছায় দেশ ত্যাগও অপর এক ধরনের সত্যাগ্রহ। দেশে স্বরাজ বা সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সত্য বিসর্জন না দিয়ে বরং দেশ ত্যাগ করা অনেক গুণ শ্রেয়।
৪. অনশন : অনশন এক ধরনের ঐশ্বরিক উপবাস। গান্ধী সত্যাগ্রহের পূর্বশর্ত হিসেবে যে আত্মশুদ্ধির কথা বলেছেন তা ব্রহ্মাচারী উপবাসের মাধ্যমেই সম্ভব। কোনো সরকার যখন কোনো বিশেষ শ্রেণি বা জনগণের চাওয়া পাওয়া বা অধিকার পাওয়ার প্রতি তোয়াক্কা করে না তখন সরকারের বিরুদ্ধে অনশন বা উপবাস করাকেও সত্যাগ্রহ বলা হয়।
৫. ধর্মঘট বা হরতাল : গান্ধীর মতে, ধর্মঘট বা হরতাল হচ্ছে এক ধরনের অসহযোগ কর্মসূচি। তবে সে ধর্মঘট বা হরতাল অবশ্যই অহিংস নীতির উপস্থিতি থাকতে হবে। সহিংস হলে চলবে না। মহাত্মা গান্ধী আহমেদাবাদের কাপড়ের মিলের শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির জন্য শান্তিপূর্ণ উপায়ে হরতাল পালনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। ২১ দিন হরতাল পালিত হবার পর মিল মালিক শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি করতে সম্মত হয়। এই ধর্মঘটের সাফল্য ভারতের শ্রমিকদের মনে এক নবজাগরণের সূচনা করেছিল।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, মহাত্মা গান্ধী রাজনীতিকে জনজীবনের সাথে সম্পৃক্ত করার যে প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছিলেন তাই সত্যাগ্রহ। উৎসের দিক থেকে সত্যাগ্রহ পদ্ধতি ভারতের চিরাচরিত ধর্ম সাধনার সহিত সম্পৃক্ত। যেখানে মানুষ আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছতে চেষ্টা করে। সত্যের প্রতি অবিচল আস্থা ও দৃঢ়তা, ত্যাগের মানসিকতা, ইস্পাত কঠিন মনোবল ইত্যাদি মহাত্মা গান্ধী নেতৃত্বকে করেছে বেগবান ও গতিশীল।
মহাত্মা গান্ধীর অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলন, মহাত্মা গান্ধীর অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলন, মহাত্মা গান্ধীর অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলন
নিত্য নতুন সকল আপডেটের জন্য জয়েন করুন
If any objections to our content, please email us directly: helptrick24bd@gmail.com