ঘ দলের কাজ - ৭ম শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি সামষ্টিক মূল্যায়ন সমাধান
ঘ-দলের কাজ: এলাকার দর্শনীয় স্থান বা পরিদর্শনে যাওয়া যায়, এমন স্থান যা সকলকে আকৃষ্ট করতে পারে তার বর্ণনা।
আমি বেলাল হোসাইন। আমি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি। আমি ঢাকা বিভাগে বসবাস করি। আমার বাসার পাশেই ঢাকার ঐতিহাসিক লালবাগ কেল্লা অবস্থিত । ইতিহাসের নানা উত্থান-পতনের সাক্ষী এই স্থাপনা। বর্তমানে এটি ঢাকার বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি দর্শনীয় স্থান।
প্রতিদিন হাজারো পর্যটক লালবাগ কেল্লা পরিদর্শনে আসেন এবং এর স্থাপত্য রীতি দেখে মুগ্ধ হন। আমার নিজ এলাকায় এমন একটি প্রাচীন দর্শনীয় স্থাপনা থাকায় আমি গর্বিত। নিচে লালবাগ কেল্লা সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখা হল।
পরিচিতি
লালবাগের কেল্লা ঢাকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত একটি অসমাপ্ত মুঘল দুর্গ। এটির নির্মাণকাজ ১৬৭৮ সালে মুঘল সুবেদার মুহাম্মদ আজম শাহ্ কর্তৃক শুরু হয়েছিল। তিনি যিনি ছিলেন সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র এবং পরবর্তীতে নিজেও সম্রাট পদপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।
কিন্তু পরে তিনি দিল্লিতে চলে যান এতে কাজ থেমে যায়। তার উত্তরসুরি মুঘল সুবাদার শায়েস্তা খাঁ ১৬৮০ সালে এর নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু করেন, কিন্তু শেষ করেননি। কারণ তাঁর কন্যা পরী বিবি মারা যান। তাতে তিনি নির্মাণ কাজ থামিয়ে দেন।
ইতিহাস
সম্রাট আওরঙ্গজেবের ৩য় পুত্র মুঘল রাজপুত্র আজম শাহ বাংলার সুবেদার থাকাকালীন ১৬৭৮ সালে এই কেল্লার নির্মাণকাজ শুরু করেন। তিনি বাংলায় প্রায় ১৫ মাস ছিলেন। দুর্গের নির্মাণকাজ শেষ হবার আগেই মারাঠা বিদ্রোহ দমনের জন্য পিতা সম্রাট আওরঙ্গজেব তাঁকে দিল্লি ডেকে পাঠান। এসময় একটি মসজিদ ও দরবার হল নির্মাণের পর দুর্গ নির্মাণের কাজ থেমে যায়।
সুবেদার শায়েস্তা খাঁ ১৬৮০ সালে পুনরায় বাংলার সুবেদার হিসেবে ঢাকায় এসে দুর্গের নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু করেন। ১৬৮৪ সালে এখানে শায়েস্তা খাঁর কন্যা ইরান দুখত রাহমাত বানুর (পরী বিবি) মৃত্যু ঘটে। কন্যার মৃত্যুর পর শায়েস্তা খাঁ এ দুর্গটিকে অপয়া মনে করেন এবং ১৬৮৪ খ্রিষ্টাব্দে অসমাপ্ত অবস্থায় এর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন।
লালবাগের কেল্লার তিনটি প্রধান স্থাপনার একটি হল পরী বিবির সমাধি। শায়েস্তা খাঁ ঢাকা ত্যাগ করার পর এটি এর জনপ্রিয়তা হারায়। ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে রাজধানী স্থানান্তর করা হয়েছিল; এটিই ছিল প্রধান কারণ। রাজকীয় মুঘল আমল সমাপ্ত হওয়ার পর দুর্গটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়ে যায়। ১৮৪৪ সালে এলাকাটি "আওরঙ্গবাদ" নাম বদলে "লালবাগ" নাম পায় এবং দুর্গটি পরিণত হয় লালবাগ দুর্গে।
লালবাগ কেল্লার অবকাঠামো
লালবাগ কেল্লার মূল অবকাঠামো হিসেবে মূলত তিনটি স্থাপনাকে মনে করা হয়। প্রধান তিনটি অবকাঠামো হচ্ছে-
১। পরীবিবির সমাধি সৌধ
২। দরবার হল, যেটির দেওয়ান-ই-আম নামে পরিচিত ছিল এবং এর ভিতরে হাম্মাম খানা
৩। শাহী মসজিদ
এছাড়াও লালবাগ কেল্লায় একটি গভীর সুড়ঙ্গের রয়েছে, কথিত আছে এই সুরঙ্গ দিয়ে বুড়িগঙ্গার অপর তীরে যাওয়া যেত। এখানে একটি পুকুরও রয়েছে। তাছাড়া বাগান তো রয়েছেই। প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে এখানে আরো বেশ কয়েকটি অবকাঠামো ছিল।
পরী বিবির সমাধির কাহিনী
লালবাগ কেল্লার প্রধান স্থাপনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় যে স্থাপনাটি সবার প্রথমে চোখে পড়ে সেটি হচ্ছে পরী বিবির সমাধিসৌধ। পরীবিবি একদিকে যেমন শায়েস্তা খাঁ'র কন্যা ছিলেন অন্যদিকে তিনি শাহজাদা আজম শাহ'র স্ত্রী ছিলেন। উল্লেখ্য ১৬৬৮ সালের ৩ মে শাহজাদা আযমের সাথে পরী বিবির বিয়ে হয়েছিল।
১৬৮৪ সালে পরী বিবির মৃত্যুর পর তাঁকে এই স্থানেই কবর দেওয়া হয় এবং কবরের উপর মাজার নির্মাণ করা হয়। সেটি এই চতুষ্কোণ আকার এর ইমারত। মূলত পরী বিবির মৃত্যুর পর এই দুর্গ স্থাপনাটিকে আর দুর্গ হিসেবে না রেখে শায়েস্তা খাঁ তাঁর কন্যার সমাধি সৌধ রূপেই অসমাপ্ত রেখে দেন। এই সমাধি সৌধটি লালবাগ কেল্লার সবচেয়ে সুন্দর এবং বড় অবকাঠামো রূপে আজ দাঁড়িয়ে রয়েছে।
লালবাগ কেল্লা যাওয়ার উপায়
লালবাগ কেল্লায় যেতে হলে, গুলিস্তান গোলাপ শাহ্ এর মাজার থেকে টেম্পুযোগে মাত্র ৬ টাকায় যাওয়া যাবে লালবাগ কেল্লায় । ইসলামবাগ ও কিল্লার মোড়গামী দু'ধরনের টেম্পো দিয়ে দিন রাত সব সময় যাওয়া যায় লালবাগ কেল্লায়।
এছাড়াও নিউমার্কেট কিংবা গুলিস্তান এলাকা থেকে সরাসরি রিক্সায় যাওয়া যায় লালবাগ কেল্লায়। ভাড়া পড়বে ৩০-৪০ টাকা। আর বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সামনে (শাহবাগ) থেকে ১০ টাকা ভাড়ায় বিশেষ বাস সার্ভিস রয়েছে লালবাগ কেল্লা পরিদর্শনে আগ্রহীদের জন্য।
এছাড়াও যারা কম টাকায় কেল্লা পরিদর্শন করতে চান তারা সদরঘাট ভায়া গুলিস্তান গোলাপ শাহ্ এর মাজার হয়ে যেতে পারেন। ভাড়া লাগবে মাত্র ৫ টাকা। তারপর ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে ৫ মিনিট পায়ে হেঁটে অথবা ১০ টাকা রিকশা ভাড়ায় যাওয়া যাবে লালবাগ কেল্লায় ।
নিত্য নতুন সকল আপডেটের জন্য জয়েন করুন
If any objections to our content, please email us directly: helptrick24bd@gmail.com