গ-দলের কাজ - ৭ম শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি সামষ্টিক মূল্যায়ন সমাধান
গ-দলের কাজ: এলাকাটি প্রসিদ্ধ করেছে এরকম শিল্প, সংস্কৃতি, খেলাধুলা বা অন্যান্য ক্ষেত্ৰ
আমি বেলাল হোসাইন। আমি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি। আমি চট্টগ্রাম বিভাগে বসবাস করি। আমার বাসার পাশেই চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদিঘির ময়দান। এই ময়দানটি বর্তমানে বিনোদন কেন্দ্র হলেও এর অতীত ঐহিত্য বেশ সমৃদ্ধ।
আমার এলাকায় প্রতিবছর বেশ উৎসাহ আর উদ্দীপনার মাধ্যমে 'জব্বারের বলি খেলা' নামে একটি কুস্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। চট্টগ্রাম তো বটেই, সারাদেশের মানুষ বিপুল আগ্রহ নিয়ে এই খেলা উপভোগ করতে আসে। নিচে ঐতিহ্যবাহী এই খেলা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।
পরিচিতি
জব্বারের বলীখেলা এক বিশেষ ধরনের কুস্তি খেলা, যা চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দানে প্রতিবছরের ১২ই বৈশাখে অনুষ্ঠিত হয়। এই খেলায় অংশগ্রহণকারীদেরকে বলা হয় বলী। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কুস্তি বলীখেলা নামে পরিচিত। ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর এই প্রতিযোগিতার সূচনা করেন। তাঁর মৃত্যুর পর এই প্রতিযোগিতা জব্বারের বলী খেলা নামে পরিচিতি লাভ করে। জব্বারের বলীখেলা একটি জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যমণ্ডিত প্রতিযোগিতা হিসেবে বিবেচিত। বলীখেলাকে কেন্দ্র করে লালদিঘী ময়দানের আশে পাশে প্রায় তিন কিলোমিটার জুড়ে বৈশাখী মেলার আয়োজন হয়। এটি চট্টগ্রাম এলাকার সবচেয়ে বৃহৎ বৈশাখী মেলা। বৃহত্তর
বৈশাখী মেলা
এখন পেশাদার বলির অভাবে এ খেলার আকর্ষণ কমছে। তবে জব্বারের বলি খেলার মূল উপজীব্য হয়ে উঠেছে মেলা। তাই অনেকে একে বৈশাখী মেলা হিসেবেই চেনে। বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় লোকজ উৎসব হিসেবে একে চিহ্নিত করা হয়। খেলাকে কেন্দ্র করে ৩ দিনের আনুষ্ঠানিক মেলা বলার কথা থাকলেও পাঁচ-ছয় দিনের মেলা বসে এলাকা ঘিরে
ইতিহাস
বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর এই দেশে ব্রিটিশ শাসন শুরু হয়। বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ এবং একই সঙ্গে বাঙালি যুবসম্প্রদায়ের মধ্যে ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলা এবং শক্তিমত্তা প্রদর্শনের মাধ্যমে তাদের মনোবল বাড়ানোর উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামের বদরপতি এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর বলী খেলা বা কুস্তি প্রতিযোগিতার প্রবর্তন করেন।
১৯০৯ সালের ১২ বৈশাখ নিজ নামে লালদীঘির মাঠে এই বলীখেলার সূচনা করেন তিনি। ব্যতিক্রমধর্মী ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য ব্রিটিশ সরকার আবদুল জব্বার মিয়াকে খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি আমলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও বার্মার আরাকান অঞ্চল থেকেও নামী-দামি বলীরা এ খেলায় অংশ নিতেন।
জব্বারের বলি খেলার নিয়ম
খেলাটি মূলত কুস্তি খেলার অন্যরূপ। “বলী” বলা হয় যিনি কুস্তি লড়েন তাকে অন্য ভাষায় বলা যায় “কুস্তিগীর” । একেকটি খেলায় দুইজন বলী একে অপরের সাথে কুস্তি লড়তে থাকেন এবং চেষ্টা করতে থাকেন প্রতিপক্ষের পিঠ মাটির সাথে ছোয়ানোর। যিনি প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে পারেন তিনি জয়ী!
খেলাটি মূলত হয় ১২/১৪ স্কয়ার ফিটের বৃত্তাকার বা বর্গাকার কোন বালুময় জায়গার ভেতর। বালু দিয়ে সুউচ্চ মঞ্চ তৈরি করা হয় বলীদের জন্য। এই মঞ্চেই লড়াই করেন দুজন বলী। তার চারপাশে ঘিরে থাকেন উৎসুক জনতা এবং করতালি ও উল্লাস খেলাটিকে জমজমাট করে তোলে।
সাম্প্রতিক সময়ের জব্বারের বলি খেলা
২০২৩ সালে আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা বা বলীখেলা ১১৪ বছরে পা রাখে। তবে এর আগে মাঝখানে দুই বছর করোনার কারণে ঐতিহ্যবাহী এ খেলা বন্ধ ছিল। ইতিহাসে এর আগে কেবল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় একবার বলীখেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। লালদীঘির মাঠ সংস্কারের জন্য গত বছর সড়কের ওপর রিং বসিয়ে বলীখেলা হয়েছে। তবে এবার লালদীঘির মাঠেই হয়েছে বলীখেলা।
এতে অংশ নেন ৬৪ জন বলী। এর মধ্যে ৭১ বছরের খাজা আহমদের মতো বলী যেমন ছিলেন, তেমনি ১৭ বছরের নূর হোসেনের মতো কিশোরও ছিল । প্রতিবছরের মতো এ বছরও বলীখেলা দেখতে আসেন হাজরো মানুষ। ২৫ এপ্রিল, ২০২৩ বিকেলে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে লড়াইয়ে নামে জীবন ও শাহজালাল। চূড়ান্ত কুস্তিতে সাত মিনিটের লড়াইয়ের পর শাহজালাল বলীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
নিত্য নতুন সকল আপডেটের জন্য জয়েন করুন
If any objections to our content, please email us directly: helptrick24bd@gmail.com